শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


সদ্য ফারেগীনদের প্রতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানির গুরুত্বপূর্ণ ৫ টি নিবেদন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

অনুবাদ: মুযযাম্মিল হক উমায়ের

আমাদের দেশে প্রচলিত হয়ে আসছে আরবি শাওয়াল মাস থেকে বছর শুরু হয়ে শাবান মাসে সমাপ্ত হয়৷ পড়াশোনা, হিসাব-নিকাশ সবকিছুই সমাপ্তি হয় শাবান মাসে৷

প্রাথমিকস্তরের মাদরাসার ছাত্ররা সেখানে পড়াশোনা সমাপ্ত করে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকস্তরের মাদরাসায় ভর্তি হয়৷ হিফজস্তরের মাদরাসাগুলোতে হিফজ দ্বারাই বছর সমাপ্ত হয় দাওরা ও তাখাসসুসাতস্তরের মাদরাসাগুলো থেকে ছাত্ররা সনদপ্রাপ্তির দ্বারা বছর সমাপ্ত করে৷ এটি তাদের জীবনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি গন্তব্য৷ নতুন একটি মোড়৷ পরিবর্তন৷

এখন তাদের সামনে উম্মতের বিভিন্ন কাজ আঞ্জাম দেওয়া চলে আসে৷ সাধারণ কেউ ইমামতের কাজ আঞ্জাম দেয়৷ কেউ মকতবে পড়ায়৷ কেউ কিতাব বিভাগে পড়ায়৷ কেউ হিফজ বিভাগে পড়ায়৷ ইত্যাদি দীনি কাজে তারা জড়িয়ে পড়ে৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে; তাদের চেষ্টা-সাধনার গণ্ডি এগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়৷ এগুলোর পাশাপাশি উম্মতের আরো জরুরি কাজগুলোও তাদেরই আঞ্জাম দিতে হবে৷

মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিলে সমাধানের কাজ তাদেরই করতে হবে৷ সমাজে অন্যায়-অনাচার প্রকাশ পেলে প্রতিরোধ তাদেরই করতে হবে৷ সমাজে বাস করা লোকজনকে সৎপথে নিয়ে আসা এবং অসৎপথ থেকে ফিরিয়ে রাখার কাজও তাদেরই করতে হবে৷ প্রত্যেক আলেম এই বিষয়টি নিজের দায়িত্ব মনে করেই নিজ নিজ যোগ্যতার মাপকাঠিতে কাজগুলো আঞ্জাম দিয়ে থাকে৷

এই হিসাবে পুরো উম্মতের জিম্মাদারি তাদের কাঁধে চলে আসে বিধায় তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক৷ সুতরাং তাদের সমীপে আমার ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ নিবেদন পেশ করছি৷

এক. মাদরাসার পরিবেশ অত্যন্ত সাদাসিধে হয়ে থাকে৷ থাকা-খাওয়া সাদাসিধে৷ পোশাক-আশাক সাদাসিধে৷ মাদরাসার ঘর সাদাসিধে৷ লৌকিকতা এবং আয়েশি চালচলন থেকে একদম মুক্ত থাকে৷ দরসে নেজামি চালুর সময়কার মাদরাসাগুলো এমনি হয়ে থাকতো৷ এখনো কোথাও কোথাও পূর্বের স্বকীয়তা বজায় রেখেই দীনের তালিম দিয়ে চলছে৷

এর দ্বারা আরেকটি বিষয় বুঝে আসে তা হলো, মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকারীগণ ছাত্রদেরকে মেহনতি জীবন গড়ার সদইচ্ছার বিষয়টি মাথায় রেখেই মাদরাসার পরিবেশকে এমন সাদাসিধে রেখেছিলেন৷ কারণ, যেহেতু তাদের সামনে উম্মতের জিম্মাদারির গুরুত্বপূর্ণ কষ্টের কাজ তাই ছোটো থেকেই যেনো তারা কষ্ট সহ্য করে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে৷ কঠিন মুহূর্তে যেনো কঠিন বিষয় সমাধান করতে পারে। আমাদের বড়োদের এই সৎ উদ্দেশ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফারেগিনরা যেনো এই বিষয়টি সর্বদায় মাথায় রাখে।

আল্লাহ তায়ালা যাদের দ্বারা দীনের কাজ করাবেন, তিনি তাদের সাথে উক্ত নীতিই অবলম্বন করে থাকেন। এর বড়ো উপকার হলো, তখন দীনের দাঈগণ কষ্ট ওঠাতে এবং তবিয়ত বিরোধ কাজ সহ্য করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে নবিগণের অসংখ্য ঘটনা আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন। যেগুলোর অধিকাংশই হলো, হকের বিপরীত লোকজন দ্বারা নবিগণ ও অনুসারীদেরকে কষ্ট দেওয়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে। হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবি। উম্মতের জন্য উত্তম আদর্শ। এই কারণে তিনি আরো বেশি বিপদাপদের মধ্য দিয়ে সময় পার করেছিলেন।

মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের জয়জয়কার অবস্থা আল্লাহ তায়ালা চাইলে নবুওয়তের প্রথম দিনই ঘটিয়ে দেখিয়ে দিতে পারতেন। ৮ হিজরিতে যারা হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান-শওকতের প্রভাব দেখে মাথা নত করেছিলো আল্লাহ তায়ালা চাইলে তা ইসলামের শুরুর দিনেই করে দেখাতে পারতেন।

কিন্তু বিষয়টি এমন হয়নি। বরং হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামের জন্য পাথরের আঘাত সহ্য করেছেন। গালি-গালাজ শুনেছেন। খিদে সহ্য করেছেন। তায়েফের রাস্তায় রক্তাক্ত হয়েছেন। বদর, অহুদ ও অন্যান্য যুদ্ধ দ্বারাও পরীক্ষা করা হয়েছে। চেহারাও রক্তাক্ত হয়েছে।

মদিনার মুনাফিক দ্বারা অনেক অপবাদের স্বীকার হয়েছেন। হয়েছেন বিভিন্ন চক্রান্তের মুখোমুখি। এতোসব আত্মত্যাগ ও কোরবানির পর গিয়ে ইসলাম বিজীত হয়েছে।

ইসলামের সফলতা এসেছে। মক্কাবাসিদের অন্তর প্রথম দিনেই ইসলামের জন্য নরম করে দিতে কি আল্লাহ তায়ালা সক্ষম ছিলেন না? ফলে তারা ঈমান নিয়ে আসতে পারতো না? অবশ্যই তিনি তা করতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু এসব কষ্ট দ্বারা হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তরবিয়ত ও পরীক্ষার স্তরগুলো পাড়ি দেওয়ানোই আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য ছিলো।

আলেমগণ যেহেতু নবিগণের ওয়ারিস। সুতরাং তাদেরও পরীক্ষার এসব স্তর পাড়ি দিতে হবে। জীবন-যাপনের একটি সাদাসিধে পদ্ধতি তাদেরও প্রস্তুত করতে হবে। যে জীবনের অধ্যায়ে থাকবে সাদাসিধে খাবার। সাদাসিধে পোশাক। থাকার জন্য কোনো রকমের একটি ঘর। মানুষের অপবাদ শুনতে হবে।

কষ্টদায়ক কথাগুলোও সহ্য করতে হবে। জীবনে অনেক নাজ-নিয়ামত থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এগুলো অন্যদের জন্য কষ্টকর হতে পারে কিন্তু কাজের লোকজনের জন্য এগুলো হলো, জীবন চালিকা শক্তি। আল্লামা ইকবাল রহ. বলেন, কার কাছে বলবো কথা বিষ (দুঃখ-কষ্ট, বৈরী পরিস্থিতি) আমার জীবন চালিকা\পৃথিবীর অবস্থা পুরোনো হলেও আমার অবস্থায় রয়েছে সজিবতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ছেলে কোরবানি দেওয়ার স্বপ্নেও আছে ইশকের সুধা।

হজরত হুসাইন রাজিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সবরের মধ্যেও আছে ইশকের সুধা। বদর, অহুদ ও অন্যান্য কষ্টকর যুদ্ধেও আছে ইশকের সুধা। দুঃখ-কষ্টের এই জীবন চালিকা শক্তি জিইয়ে রাখা বর্তমান সময়ের দাবি।

পুরো পৃথিবী যেখানে আরাম-আয়শে মাতোয়ারা সেখানে অল্পতুষ্টি, তাওয়াক্কুল করার বিষয়টি সত্যিই হাস্যকর মনে করা হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অল্পতুষ্টির খামিরা থেকেই এসব দীনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তখন উক্ত বিষয়টির প্রয়োজন যে পরিমাণ ছিলো, বর্তমানে এর প্রয়োজন আরো বেশি। কারণ, বর্তমানের অবস্থা তো এমন যে, অনেক গ্রাম আছে যা শহর থেকে দূরে। শহরের ছোঁয়া সেখানে পড়েনি। হতেপারে সেখানে আমাদের মুসলমানদের অনেকে বাস করে যাদের কান এখন পর্যন্ত আল্লাহু আকবারের ধ্বনি শুনেনি।

অজ্ঞতার কারণে যাদের জিহ্বা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নাম সঠিকভাবে উচ্চারণও করতে পারে না। আমাদের সদ্য ফারেগিনরা সেখানে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করে।

কারণ, সেখানে সুযোগ-সুবিধা কম। জীবিকা উপার্জনের বিষয়টিও সেখানে হতাশাজনক। যদি আমরা সেখানে গিয়ে নিজের স্বজাতির খেদমত না করি, তাহলে কে তাদের ঈমানের হেফাজত করবে? এবং কীভাবে তাদেরকে ইসলামের উপর অটল রাখা সম্ভব হবে? যদি আমাদের গাফলতির কারণে সেখানে খ্রীস্টান মিশনারি বা কাদিয়ানি মিশনারি পৌঁছে যায়, তখন তো আমাদের ভারাক্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এবংতাদেরকে হটানোর কোনো সুযোগ থাকবে না। কারণ, কোনো দলকে সরাতে চাইলে অন্যরা সেই দলকে নিজের আপন করে নিবে না- তা তো হতেই পারে না। কারণ, তখন তো তাদের সাথে তাদের অনুসারীরাও থাকবে।

দুই. আলেমদের সাথে উম্মতের সম্পর্ক এটি নীতিগত সম্পর্ক না। বরং এই সম্পর্ক হলো, আত্মার সাথে আত্মার সম্পর্ক। ঈমানের সাথে ঈমানের সম্পর্ক। নীতিগত সম্পর্ক তো নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ থাকে।

ডিইটির সময় পর্যন্তই বহাল থাকে। উক্ত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করতে চায় না। কারণ, অতিরিক্ত সময়ের কাজের জন্য এখানে তার জন্য অতিরিক্ত কোনো বিনিময় বরাদ্দ থাকে না। কিন্তু একজন আলেমের অবস্থা হলো একজন চৌকিদারের সাথে। যে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য দীন হেফাজতের জিম্মাদারি নিজের কাঁধে স্বইচ্ছায় বহন করেছে। সে মূলত সময় নির্দিষ্ট কোনো শ্রমিক না। একজন আলেম হলো, আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্টকারী।

তার দায়িত্বের কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট নেই। তার কাজের পরিধি অনেক প্রশস্ত ও উন্মুক্ত। এবং এই উম্মত থেকে আল্লাহ তায়ালা যা কিছু পেতে চান, সবকিছুই তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। কারো আকিদাগত সমস্যা থাকলে তা সংশোধন করা তার দায়িত্ব। বেনামাজিকে নামাজি বানানো তার দায়িত্ব। খারাপ কাজে লিপ্ত তাকে ভালো কাজে নিয়ে আসার চেষ্টা করা তার দায়িত্ব। পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ, সেসব সমাধান করা তার দায়িত্ব।

শিশু ও বুড়োদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা নেই তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা তার দায়িত্ব। আসমানি কোনো বিপদ চলে আসলে বিপদগ্রস্ত লোকদেরকে সহায়তা করা তার দায়িত্ব। নির্বাচন হচ্ছে তখন লোকজনকে মুসলমানদের ‍উপকারের দিক লক্ষ্য রেখে পরামর্শ দেওয়া তার দায়িত্ব। যদি মুসলমান ভাইদের বসবাস থাকে, সেখানেও দাওয়াতি সম্পর্ক কায়েম রাখা তার দায়িত্ব। দলে দলে বিভক্তি বিরাজমান সেখানেও নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা তার দায়িত্ব।

মোটকথা, উম্মতের প্রতিটি সমস্যায় নিজের স্বার্থকে না দেখে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে উক্ত সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা তার দায়িত্ব। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমাদের পূর্বসূরীদের তরিকা এমনি ছিলো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের কথা হলো, বর্তমানে ফারেগিনরা নিজেদের কাজের গণ্ডি শুধু মসজিদ আর মাদরাসাকে নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। এই কারণেই বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব এবং অযোগ্যদের নেতৃত্ব চলমান। এমনকি অনেক স্থানে তো গণ্ডঅজ্ঞ এবং সমাজের নিম্মশ্রেণীর লোকেরা মুসলমানদের একান্ত জরুরি বিষয়াবলির সমস্যার সমাধান তাদের হাতের নাগালে নিয়ে নিয়েছে। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। তাদের অজ্ঞতার আদালতে বেইনসাফি প্রকাশ পেয়েছে।

তিন. যুগ-চাহিদা ও কল্যাণকর দিক সম্পর্কে অবগতি থাকা। আমাদের সদ্য ফারেগিনদের মধ্যে বয়সের আবেগটা বেশি দেখা যায়। তারা জমিন ফসলের উপযোগী হওয়ার আগেই বীজ রোপণ করারে অপচেষ্টা শুরু করে দেয়। যদি জমি নরম করার আগে বীজ রোপণ করে দেওয়া হয়, তাওয়া গরম হওয়ার আগে রুটি দিয়ে দেওয়া হয়, ফল পাকার উপযুক্ত হওয়ার আগেই যদি অন্য উপায়ে তা পাকানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে চাহিদা অনুযায়ী ফল পাওয়ার আশা করা যাবে না।

ঠিক কেউ যদি খারাপ কাজের শিকড়কে আকড়ে রাখে এবং দীর্ঘ সময় যাবত তা চলে আসতে থাকে, তাহলে চোখের পলকে তার মধ্যে সংশোধনী চলে আসবে না। এভাবে সংশোধন করার মাধ্যমে উপকারে তুলনায় ক্ষতির দিকটাই প্রবল। এ কারণেই শরিয়তের মধ্যে ধাপে ধাপে সংশোধন করার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। অধিকাংশ হারাম বস্তুকে ধাপে ধাপে ক্রমান্বয়ে হারাম করা হয়েছে। মদ হারাম হওয়ার বিষয়টি তো একদম সুস্পষ্ট।

কারণ, তা তিন ধাপে হারাম করা হয়েছে। এ কারণে হেকমত ও উপকারী বিষয়গুলোকে দীনি কাজ করার পূর্বে সর্বদায় সামনে রাখা উচিত। যেমন, মানুষ যা বলবে তা যেনো হককথা হয়।

এটি একটি নীতি। কিন্তু হককথা সর্বদায় সর্বস্থানে বলে দেওয়া জরুরি নয়। অনেক সময় হককথাও ধাপে ধাপে বলার দ্বারা উপকার বেশি হয়েছে প্রমাণিত আছে। যদি আলেমগণ উক্ত বিষয়টিকে সামনে রেখে কাজ করে তাহলে মসজিদ-মাদরাসার মধ্যে পরস্পর যেসব ঝামেলা দেখা দেয়- সেসব সংঘটিত হওয়ার সুযোগই আসবে না।

চার. উম্মতের ঐক্যতার বিষয়টি সুরক্ষা ও বিক্ষিপ্ততা থেকে হেফাজত করা। ঐক্যতার প্রয়োজন তো সর্বকালেই ছিলো। বর্তমানে তা আরো জরুরি।

মতনৈক্যের পয়েন্টে তো অনেক আছে। যথা, রাজনৈতিক, বংশীয়, ব্যাবসায়ীক ইত্যাদি। কিন্তু মাজহাবি মতনৈক্য মুসলমান সমাজে বেশি প্রভাব বিস্তার পেয়ে থাকে। এই মতনৈক্যের সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, মসজিদ, মাদরাসা, দীনি সমাবেশ, দলীয় বক্তব্য যেখানে উম্মতের ঐক্যতার বড়ো প্রয়োজন ছিলো, আমরা এখানে এসেই মতনৈক্য ও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছি।

যে উম্মতকে ঐক্য করার কাজ করতেছিলো, সে নিজেই মতনৈক্যের সরদার হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। এই অবস্থায় কে আছে এমন, যে ছুটে যাওয়া তাসবিহের দানাগুলোকে একত্র করতে পারবে? আহত-ক্ষত অন্তরে মলন মালিশ করতে পারবে?

আমাদের সদ্য ফারেগিনরা এসব বিষয়ের প্রতি সজাগ-সচেতন থাকতে হবে। কারণ, তারা উম্মতের কোনো নির্দিষ্ট একটি দলের প্রতিনিধি নয়; বরং তারা তো হলো, পুরো উম্মতের জন্য অসুস্থ অন্তরের ডাক্তার স্বরূপ। তাদের সমস্ত মুসলমানদের সাথে মুসলমান হিসাবে মহব্বত রাখা উচিত। এবং তাদের কথা, কাজ, বয়ান, লিখনী ইত্যাদি যেনো উম্মতের মধ্যে বিক্ষিপ্ততা এবং মতনৈক্যতার কারণ হয়ে না যায়- এই বিষয়ের প্রতি তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

পাঁচ. উম্মতের একটি বড়ো অংশ জাগতিক শিক্ষা হাসিল করে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে আলেমদের উপস্থিতির যেমন প্রয়োজন, জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিতদেরও তেমন প্রয়োজন। আমরা তাদের উপস্থিতির গুরুত্ব ও প্রয়োজনকে অবজ্ঞা করতে পারি না। অস্বীকার করতে পারি না।

তারাও জাতীর বড়ো সম্পদ। তাদের মধ্যে অধিকাংশরা ইসলামি দৃষ্টিতে মুখলিস মানুষও। যদিও তাদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক মানুষ দীনের বিপরীত কথা বলে থাকে। এটি তাদের অজানা ও কম অবগতির কারণেই হয়ে থাকে। এবং আলেম ও তাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝিও এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ। যার কারণে উম্মতের এই শক্তিশালী দুটি সম্পদের মধ্যে এক ধরণের বৈরী পরিবেশ বিরজ করে।

এটি অত্যন্ত আফসোসের কথা। পরিতাপের বিষয়। এই দুই দলের মধ্যে এমন বৈরী পরিস্থিতি তৈয়ার হওয়ার পিছনে বড়ো কারণ হলো, পরস্পর দূরত্ববোধ এবং ভুল বুঝাবুঝি।

আলেমদের দায়িত্ব, তাদেরকে উম্মতের উত্তম আমানত মনে করে মহব্বতের সাথে নিজেদের কাছে টেনে নিয়ে আসা। দীনি বিষয়ে তাদের মধ্যে থাকা সন্দেহ-সংশয়কে ধৈর্যের সাথে শোনা।

মহব্বতের সাথে তাদের অন্তর থেকে সেসব সন্দেহ-সংশয়ের বিষাক্ত কাঁটাগুলোকে কৌশলে বের করে নিয়ে আসা। উম্মতের মধ্যে চিন্তা-চেতনার দিক দিয়ে যারা দীনের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত, তাদের সাথে আমাদের ব্যবহার একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবহারের মতো হওয়া উচিত। যে ব্যবহারটি ডাক্তার তার অবুঝ রোগীর সাথে করে থাকে। আমাদের ব্যবহার তাদের সাথে গ্রুপিং এবং প্রহরীর মতো যেনো না হয়। তাদের সাথে আমাদের ব্যবহার যেনো আপন সাথী ও বন্ধুর মতো হয়।

এই ছিলো আমাদের সদ্য ফারেগিনদের প্রতি তাদের এমন এক ভাইয়ের কিছু নিবেদন, যে ভাইটি তাদের তুলনায় অল্প কিছু সময় আগে উক্ত স্তরটি অতিক্রম করেছে।

এই নিবেদনগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা বর্তমান সময়ের চাহিদায় অত্যন্ত জরুরি ও উপকারী। আর এগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া উম্মত ও উম্মতের আলেমশ্রেণী উভয়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমলের তাওফিক দান করুন। আমীন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর