শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


বিবর্তনবাদ, ইসলাম ও আল জাহিজ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ: বিবর্তনবাদ হল বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যাকারী তত্ত্ব। এই তত্ত্ব বলে "পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী ও উদ্ভিদ একটি ক্ষুদ্র এককোষী অণুজীব থেকে 'এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন' এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। এবং মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে এতে খুব অল্প অল্প পরিবর্তন হতে হতে আজ পর্যন্ত এসেছে।" সেই অণুজীবটা কোথা থেকে এসেছিল,এই প্রশ্নের উত্তর যেমন বিবর্তনবাদীদের কাছে নাই,তেমনি কে উদ্ভিদ হবে আর কে প্রাণী হবে তা নির্ধারণ করে দেয়ার মতও কেউ নাই। এখানে কোনো স্রষ্টার হাত ছিল বলেও তারা স্বীকার করেন না। তারা বলেন "এলোমেলো পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে এসব হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক নির্বাচন মানে হল ডিএনএ'র মধ্যে এলোমেলো পরিবর্তনের সময় কোনো প্রাণীর কোনো পরিবেশে টিকে থাকার মত উপযোগী জিনটিকেই নির্বাচন করা। এই নির্বাচনটিও প্রকৃতি করে থাকে।

মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য প্রাণী ও উদ্ভিদেরা নিজেদের শরীরে সামান্য সামান্য পরিবর্তন সাধন করে থাকে। এই পরিবর্তনের কারণে কখনো কখনো এক প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদ অন্য প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এটাই বিবর্তনবাদের মূল। এখানে সৃষ্টিকর্তার কোনো হাত আছে বলে তারা মনে করেন না।

বিবর্তনবাদের প্রবক্তা বলা হয় মিস্টার চার্লস ডারউইনকে (১২ ফেব্রুয়ারি ১৮০৯ –১৯ এপ্রিল১৮৮২)। সমুদ্র পথে বিভিন্ন দেশ সফর করে তিনি দেখলেন যে,পাখিরা গাছের মধ্যে গর্ত করে বাসা বাঁধে। এবং পাখির প্রয়োজন ও গর্তের গভীরতা অনুযায়ী কোনো পাখির ঠোঁট লম্বা,খাট,চিকন বা মোটা হয়ে থাকে। এ থেকে তিনি বুঝলেন যে পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রাণীরা তাদের শরীরে পরিবর্তন ঘটায়। তবে তিনি তার এক বন্ধুকে বিবর্তনবাদ বিষয়ে তার ধারণা সম্পর্কে জানিয়ে বলেছিলেন যে,"এ সম্পর্কে আমার কাছে শত ভাগ প্রমাণ নাই।" আর বিবর্তন যেহেতু অনেক দীর্ঘ সময় সাপেক্ষে হয় এমনকি মিলিয়ন মিলিয়ন বছরও লেগে যায়,তাই এর প্রমাণ দেখা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ইদানীং তারা বিভিন্ন প্রাণীর ফসিল বা জীবাশ্মকে এই বিবর্তনবাদের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। অর্থাৎ লাখ লাখ বছর আগে মরে যাওয়া কোনো প্রাণীর দেহাবশেষ বা হাড্ডি দেখে আন্দাজ করা হয় যে প্রাণীটি হয়ত এ রকম ছিল। আর বলা হয় যে, 'কোনো এক প্রজাতির প্রাণী পরিবর্তনের একটি ধাপে হয়ত এ রকম ছিল'। এটা ত কোনো প্রমাণ নয়। খুব বেশি হলে এটাকে অনুমান বলা যেতে পারে। তবুও এই বিবর্তনবাদ তত্ত্বটিকে অনেকেই সত্য হিসেবে প্রচার করছে এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পড়ানো হচ্ছে।
বিবর্তনবাদীরা মনে করেন মানুষ আর বানর শিম্পাঞ্জির মত একটি প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। পাখি এসেছে ডাইনোসর থেকে। এ রকম একেক প্রজাতির প্রাণী অন্য কোনো প্রজাতির প্রাণী থেকে রূপান্তরিত হয়ে এসেছে বলে তারা মনে করেন। কিন্তু আদিম যুগের মানুষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কেউ কোনো দিন দেখেনি এক প্রজাতির প্রাণীকে অন্য প্রজাতির প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়ে যেতে। আর ল্যাবরেটরিতে কোনো দুই প্রজাতির প্রাণীর জিন নিয়ে তৃতীয় একটি প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টি করাকে বিবর্তনবাদ বলা হয় না। বিবর্তনবাদ বলা হয় এলোমেলো পরিবর্তন আর প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো প্রাণীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনকে।

ইসলাম কী বলে?
কোরান মজিদের ভাষ্য অনুযায়ী দুনিয়ার সব মানুষ আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম থেকে এসেছে। কোনো এককোষী অণুজীব থেকে নয়। কোরান মজিদের বিভিন্ন আয়াতে মানুষকে বনি আদম অর্থাৎ আদম আ. এর বংশধর বলে সম্বোধন করা হয়েছে। أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
''হে আদম-সন্তানগণ! আমি কি তোমাদের নির্দেশ দিই নি যে তোমরা শয়তানের আরাধনা করবে না, নিঃসন্দেহ সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। সুরা ইয়াসিন, ৬০।
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
আর আমরা অবশ্য আদমসন্তানদের মর্যাদাদান করেছি, আর আমরা তাদের বহন করি স্থলে ও জলে। সুর বনি ইসরাইল,৭০।
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً
আর স্মরণ কর, -- তোমার প্রভু ফিরিশ্‌তাদের বললেন, “আমি অবশ্যই পৃথিবীতে খলিফা বসাতে যাচ্ছি।” সুরা বাকারা, ৩০।
এরকম আরো অনেক আয়াতে মানুষকে আদম আ. এর বংশধর বলা হয়েছে। কোরান হাদিসের ভাষ্য থেকে বুঝা যায়,আল্লাহ্‌ তালা আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন ও বংশবৃদ্ধি ঘটিয়েছেন।
আর উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বিষয়ে সরাসরি কিছু কোরান হাদিসে বলা না হলেও এতটুকু বলা হয়েছে যে "রুহ" আল্লাহর আদেশ।
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا
আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে রূহ সম্পর্কে। বলো ''রূহ আমার প্রভুর নির্দেশাধীন,আর তোমাদের তো জ্ঞানভান্ডারের যৎসামান্য বৈ দেওয়া হয় নি।’’সুরা বনি ইসরাইল, ৮৫।
এ ছাড়াও কোরান মজিদের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে আসমান জমিনসহ সব কিছুই আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করেছেন। اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ
আল্লাহ্ই তিনি যিনি মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এ দুইয়ের মধ্যবর্তী সব-কিছু সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে,

ইসলামের একটি মূল আকিদাই হল আল্লাহকে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা মানতে হবে। এখানে বিবর্তনবাদের সাথে ইসলামের সরাসরি সংঘর্ষ দেখা দিচ্ছে। গত কিছু দিন আগে (২ মার্চ, ২০১৯) বিবিসি বাংলার ফেসবুক পেইজে "ডারউইনের ১০০০ বছর আগে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে মুসলিম দার্শনিক" শিরোনামে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় "চার্লস ডারউইনের প্রায় এক হাজার বছর আগে ইরাকে একজন মুসলিম দার্শনিক ছিলেন যিনি প্রাকৃতিক নিয়মে প্রাণীকুলের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে তার উপর একটি বই লিখেছিলেন। এই দার্শনিকের নাম ছিল আল-জাহিজ। যে পদ্ধতিতে এই পরিবর্তন ঘটে তিনি তার নাম দিয়েছিলেন প্রাকৃতিক নির্বাচন।"

বিবিসি বাংলার এই আর্টিকেল পড়ে যে কারোরই মনে হতে পারে যে,বিবর্তনবাদ ইসলাম সমর্থন করে এবং মুসলিম বিজ্ঞানীই প্রথম এই তত্ত্বের আবিষ্কার করেন। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয় মুসলিম বিজ্ঞানী আল জাহিজই যদি বিবর্তনবাদের প্রথম প্রবক্তা হন,তাহলে এই তত্ত্বের জন্য কৃতিত্ব তাঁকে না দিয়ে মিস্টার ডারউইনকে দেয়া হয় কেন? আল জাহিজকে এই তত্ত্ব আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় না কেন? আসল কথা হল এখানে কৌশলে মুসলিমদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিছুটা আল জাহিজের কথার বিকৃত অনুবাদের মাধ্যমে। কীভাবে তা করা হয়েছে এখানে আমরা দেখার চেষ্টা করব। তার আগে এইটুকু বলে রাখা ভাল যে,প্রাণীদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন একেবারেই যে হয় না তা কিন্তু নয়। পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাণীদের শরীরে ও আচরণে কিছুটা পরিবর্তন আসে। যেমন কোনো মানুষ ব্যায়াম করার ফলে তার শরীর শক্ত ও ভাঁজ ভাঁজ হয়ে যায়। আবার কেও অনেক দিন রোদে কাজ করার ফলে তার চামড়ার রঙ কালো হয়ে যায়। তাছাড়া আগের যুগের মানুষের শরীর বর্তমানের চেয়ে অনেক বড় ও লম্বা ছিল। তারা বেঁচেও থাকতো আমাদের চেয়ে বেশি। পরিবেশ, আবহাওয়া ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে এই যুগের মানুষের আকার আকৃতি আগের চেয়ে ভিন্ন হয়ে গেছে। এটাকে যদি বিবর্তন বলা হয় তাহলে এখানে আমাদের কোনো আপত্তি নাই। এটা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিকও নয়। ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক তখনই হবে যখন বলা হবে কোনো সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই প্রাণীকুল ও উদ্ভিদ জগত একটি ক্ষুদ্র এককোষী অণুজীব থেকে সৃষ্টি হয়ে এই পর্যন্ত এসেছে এবং এক প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদ অন্য প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদে পরিণত হয়েছে।

হাঁস থেকে মুরগি,মুরগি থেকে হাঁস হয় না। গরু থেকে ছাগল আর ছাগল থেকে গরু হয় না। বানর থেকে মানুষ আর মানুষ থেকে বানরও হয় না। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বাচ্চা দেয় আর অস্তন্যপায়ী প্রাণীরা ডিম দেয়। এই প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে কখনো ব্যতিক্রম হয়েছে এ রকম কেউ কখনো দেখেনি। তাহলে কীভাবে বলা যায় যে মাছ থেকে কুমির হয়েছে আর কুমির থেকে ডাইনোসর,আর ডাইনোসর থেকে পাখি হয়েছে? তবে হ্যাঁ পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাণীদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কথা আমরা অস্বীকার করছি না। এই কথাটিই বলেছিলেন আল জাহিজ।

আল জাহিজ কী বলেছেন?
তাঁর নাম أبو عثمان عمرو بن بحر بن محبوب بن فزارة الليثي الكناني البصري (159 هـ-255 هـ) আবু ওচমান আমর ইবনে বাহার ইবনে মাহবুব ইবনে ফাজারা আল বছরি আল কিনানি আল লাইচি। তিনি প্রায় দুইশতের মত কিতাব লিখেছেন। এর মধ্যে কিতাবুল হাইওয়ান নামে অনেক বড় একটি কিতাব আছে। যেই কিতাবের উদ্ধৃতি বিবিসি বাংলাতেও দেয়া হয়েছে। সেই কিতাবে তিনি প্রায় সাড়ে তিনশতটির মত প্রাণীর জীবনরীতি ও স্বভাব-চরিত্র বর্ণনা করেছেন। অনেকগুলো কোরান হাদিসের উদ্ধৃতিও এনেছেন। তার সেই কিতাবকে উদ্ধৃত করে ১৯৮৩ সালে এক তুর্কি গবেষক মেহমিত বিরকদার Mehmet bayrakdar কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন al-jahiz and the rise of biological evolution নামে। সেখানে তিনি দাবী করেছিলেন যে,আল জাহিজ ডারউইনেরও এক হাজার বছর আগে বিবর্তনবাদের প্রবর্তন করেছিলেন। এতে তিনি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল জাহিজের কথার ভুল অনুবাদ করেছিলেন। তার সেই প্রবন্ধগুলো থেকেই হয়ত বিবিসি আরবি এই কথাগুলো ধার করেছিল। আর বিবিসি আরবি থেকে অনুবাদ করেছে বিবিসি বাংলা।

তাহলে এখন আমাদেরকে দেখতে হবে আল জাহিজ তার কিতাবে আসলে কী বলেছেন? তার যে কয়টি কথা থেকে তুর্কি গবেষক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন যে,আল জাহিজ বিবর্তনবাদের প্রবক্তা ছিলেন, তার মধ্যে তিনটি কথাকেই উল্লেখযোগ্য ধরা যেতে পারে।

১ নং কথাটি হুবহু আল জাহিজের রচিত কিতাবুল হাইওয়ান থেকেই তুলে ধরছি। তিনি লিখেছেন: الحيوانات تشتبك في صراع على البقاء والموارد حتى تتكاثر وحتى لا تفترسها حيوانات أخرى. অর্থাৎ "প্রাণীরা বেঁচে থাকার জন্য অনেক সময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যাতে তার সম্পদ রক্ষা করতে পারে এবং যাতে তাকে অন্য কোনো প্রাণী মেরে ফেলতে না পারে।" এই কথাটি দ্বারা তিনি বিবর্তনবাদের কথা বলেছেন বলে কীভাবে দাবী করা যায়? একজন ইসলামী বিজ্ঞানীর কথাকে বিবর্তনবাদীরা কতটা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন চিন্তা করুন।

২ নং আল জাহিজ তাঁর কিতাবুল হাইওয়ানে "মাছখ" المسخ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। হাদিসের পাঠক মাত্রেই জানেন যে, মাছখ শব্দটি হাদিসের পরিভাষায় একটি পরিচিত শব্দ। কোনো প্রাণীকে তার কোনো অঙ্গ কেটে বা যে কোনওভাবে বিকৃত করে দেয়া বা বিকৃত হয়ে যাওয়াকে মাছখ বলা হয়। এই শব্দ থেকেও কীভাবে বিবর্তনবাদ প্রমাণিত হয়?

৩ নং কথাটি হল,আল জাহিজ তাঁর কিতাবে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে লিখেছেন যে,কিছু মানুষ দূরে কোথাও সফরে গিয়েছিল। সেখান থেকে এসে বলল যে,তারা এমন কিছু মানুষ দেখেছে যাদের মুখে কুকুরের মত দাঁত ছিল। এই বর্ণনাটি শুধুই উল্লেখ করেছেন তিনি। এতে তাঁর পক্ষ থেকে সমর্থন বা প্রত্যাখ্যান কিছুই করা হয়নি। তাহলে এতে কীভাবে বলা যায় যে, আল জাহিজ বিবর্তনবাদের সমর্থক ছিলেন?

আল জাহিজ তাঁর রচিত কিতাবুল হাইওয়ানে একটি অধ্যায় এনেছেন دلالة المخلوق على الخالق নামে। অর্থাৎ সৃষ্টি তার স্রস্টার প্রমাণ বহন করে। এতে প্রমাণিত হয় তিনি সেই বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করতেন না যা সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে। তবে তার রচনায় এমন কিছু আছে যা পশ্চিমা বিবর্তনবাদের সমর্থক না হলেও মোটামুটি ধরণের বিবর্তনের ইংগিত বহন করে। তাঁর কিবাগুলোর উপর আরো বেশি গবেষণা হওয়া দরকার।

মিস্টার চার্লস ডারউইন নিজেও বিবর্তনবাদ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তিনি একবার বললেন, প্রাণীদের মধ্যে এইসব পরিবর্তনের কোনো কারণ "আমি যখন বুঝতে পারছিলাম না, তখন খ্রিস্টান দার্শনিক উইলিয়াম বেইলির কথাই সত্য মনে হয়েছিল। খ্রিস্টান দার্শনিক বলেছিলেন,'ঘড়ির উপস্থিতি তার প্রস্তুতকারীর প্রমাণ বহন করে।' পরে আবার যখন প্রাকৃতিক নির্বাচন আমার সামনে এলো তখন আমি ইউলিয়ামের কথা প্রত্যাখ্যান করলাম।"

আবার অন্য জায়গায় মিস্টার ডারউইন লিখেছেন,"আমার কাছে অন্য একটি উৎস আছে। এই উৎসটি বিবেকের অনুসারী। আবেগের নয়। এটি আমাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবাক করে। তাহলো এই মহাবিশ্বের বিস্ময়কর নিয়মনীতি ও এর আশ্চর্য ধরণের সৌন্দর্য,বিশেষ করে মানুষের মন যা অতীত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারে, মনে হয় এইসব কিছুই কাকতালীয়। আবার এসবের প্রথম কার্যনির্বাহী المسبب الأول সম্পর্কে ভাবি,তখন নিজেকে মুসলমান মনে হয়।"

উপসংহার
বিবর্তনবাদকে একেবারে অস্বীকারও করা যাবে না আবার পুরোপুরি সমর্থনও করা যাবে না। এই দুইয়ের মাঝখানে একটি অবস্থানে আমাদেরকে থাকতে হবে। যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। যেমন: উদ্ভিদ ও প্রাণীদের মধ্যে পরিবেশ ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সামান্য পরিবর্তন হতেই থাকে। যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য জরুরী। (আল জাহিজের রচনাবলীতে যার ইংগিত পাওয়া যায়)। তবে এক প্রজাতির প্রাণী পরিবর্তন হয়ে অন্য প্রাণী হয়ে যাওয়া এবং প্রথম সৃষ্টি,প্রাণের উৎস,বিভিন্ন পরিবর্তন সবকিছুই এমনি এমনি হয়ে যায় ধরণের কথাবার্তা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। বিবর্তনবাদ এখনো অমীমাংসিত এবং অসম্পূর্ণ বলেই কোরানের সাথে এর সংঘর্ষ দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়ে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আরো বেশি গবেষণা দরকার। অতীতের মুসলিম বিজ্ঞানীদের বই পুস্তকের উপর আবারও আমাদের নজর দেয়া উচিত। আরো উন্নত গবেষণা ও মুসলিম বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় যখন বিবর্তনবাদ পূর্ণতা পাবে,তখন এর সাথে কোরানের কোনও সংঘর্ষ থাকবে না ইনশা আল্লাহ্‌। হয়ত তখন দেখা যাবে বিবর্তনবাদ (যা কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না) এর প্রবক্তা চার্লস ডারউইন নয় বরং কোনও মুসলিম বিজ্ঞানী। হতে পারেন তিনি আল জাহিজ।

আর আমাদের দেশের স্কুল কলেজে যে বিবর্তনবাদ পড়ানো হচ্ছে সেটা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়া হয় না। সৃষ্টিকর্তাবিহীন সৃষ্টির ধ্যান-ধারণা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মনে গেঁথে দেয়ার ফলে তারা ধীরে ধীরে নাস্তিক্যবাদের প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। তাও প্রচলিত বিবর্তনবাদ স্কুল-কলেজ থেকে তুলে দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। সাথে সাথে ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিবর্তনবাদ বিষয়ে এমন কিছু বইও রচনা করার জন্য যা হবে ইসলামি আক্বিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ