শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


উস্তাদরা আমাকে আদর করে ‘হাজী জ্বী’ বলে ডাকতো!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানকিভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী یادیں ইয়াদেঁ  মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি রোববার ও বুধবার প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ। আজ ছাপা হলো ৪৪ তম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ উমর ফারুক ইবরাহীমী।]


পূর্ব প্রকাশের পর: হযরত মাওলানা উবাইদুল হক সাহেব রহ. যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের সিপাহসালার হয়ে উঠেন, তাকেও আব্বাজান রহ. দারুলউলুম করাচি'র শিক্ষক হবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আব্বাজানের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে তিনি এখানের শিক্ষক হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন।

এখান থেকেই তার ইলম ও ফযলের চর্চা শুরু হয়। হযরত মাওলানা মুনতাখাবুল হক সাহেব রহ.ও দারুলউলুমে শিক্ষকতার দায়িত্ব আঞ্জাম দিতেন। পরবর্তীতে তিনি করাচি ইউনিভার্সিটির ইসলাম বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।

হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মতীন খতিব সাহেব রহ.ও লাহোর থেকে স্থানান্তর হয়ে দারুলউলুমে চলে আসেন। এখানে তিনি তাফসীরে জালালাইনে'র দরস দেয়া শুরু করেন।

পরবর্তীতে তিনি সহকারী নাযেমের গুরুদায়িত্বও আঞ্জাম দিয়েছেন। সেজন্যে হযরত মাওলানা ওলি হাসান সাহেব রহ. দারুলউলুম করাচীকে উলামায়ে কেরামের মা বলতেন। কিছুদিনের মধ্যেই দারুলউলূমের প্রতি শিক্ষার্থীদের চাপ এতোটাই বেড়েছে যে, পৃথক ছাত্রাবাস ও দরসগাহের জায়গা ছিলোনা।

দিনের বেলায় ছাত্রদের বিছানাপত্র দেয়ালের চারদিকে গুছিয়ে রেখে ক্লাস চলতো। রাতে সেই একই কামরায় ছাত্রদের বিছানা পেতে ঘুমোতে হতো। আসবাবপত্র আর গিজগিজ করা ছাত্রদের কারণে হাটা-চলার জায়গাটুকুও অবশিষ্ট থাকতো না।
আমি যখন দারুলউলুমে পড়া শুরু করি তখন আমি ফার্সি জামা'আতের ছাত্র ছিলাম।

আর আমার বয়স তখন সবেমাত্র নয় বছর। আমার বড় ভাই মুহতারাম হযরত মাওলানা মুফতী রফি' উসমানী সাহেব (মাদ্দাযিল্লুহুম) হিফয পড়েছিলেন। আর আমি হিফয পড়া থেকে মাহরুম ছিলাম, সেজন্য ফার্সিখানায় এসে আমরা দুজন সহপাঠী হয়ে যাই।

সে সময় হযরত মাওলানা বদীউযযামান সাহেব রহ. উন্নাই'র প্রসিদ্ধ মাদরাসা থেকে ফারেগ হয়ে দারুলউলুমে আগমন করেন।
আমাদের সমস্ত কিতাব তিনি একাই পড়াতেন। রিসালায়ে নাদের, পান্দেনামাহ, ইনশায়ে ফারেগ, গুলিস্তা, বোস্তা,আহসানুল কাওয়াইদ এই সব ক'টি কিতাব আমরা মাওলানা সাহেবের কাছে পড়েছি।

ভাই সাহেবের (রফি উসমানী) এক ডাইরিতে লেখা ছিলো- মুহাররাম মাস, ১৩৭২ হিজরি মুতাবেক পহেলা অক্টোবর ১৯৫২ ইং সনে আজ মাদরাসায়ে আরাবিয়্যাহ দারুলউলুমে হযরত মাওলানা বাদিউযযামান সাহেব রহ. এর কাছে গুলিস্তা শুরু হয়েছে।

কিতাব পড়ানোর সাথে সাথে তিনি আমাদেরকে ফার্সি কাব্য রচনার প্রশিক্ষণও দিতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা অনেক অনেক উঁচু করুন, তিনি আমাদেরকে সীমাহীন ভালবাসা ও স্নেহের সাথে পড়িয়েছেন। আমাদেরকে ফার্সির সাথে এমনভাবে মুনাসাবাত (সম্পর্ক) জুড়িয়ে দিয়েছিলেন যে, ফার্সিতে কাব্য, প্রবাদ ইত্যাদি বুঝার যোগ্যতা আমাদের তৈরি হয়ে গেছে। সেই বছর আমার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল দারুলউলুমের প্রথম স্মরণিকায় ছেপে এসেছিলো।

যেহেতু ৮ বছর বয়সে আম্মা আব্বার সাথে হজ্জ করার সৌভাগ্য হয়েছিলো। সেজন্য আমার কয়েকজন উস্তায আমাকে আদর করে ‘হাজী জ্বী’ বলে ডাকতেন। ( হযরত সাহবান মাহমুদ সাহেব রহ. আমার দুষ্টুমির জন্য আমাকে এই ওজনের সাথে মিলিয়ে " পাজী জ্বী" বলে ডাকতেন। উস্তাদজির এমন বে-তাকাল্লুফির কারণে আমার অনেক আনন্দ লাগতো।) স্মরণিকায়ও আমার নাম "হাজী মুহাম্মদ তাকী" লেখা হয়েছিলো। তারা দুইজন দারুলউলুম দেওবন্দের পুরনো নিয়ম অনুযায়ী ওখানেও নিয়ম করলেন, এক কিতাবের পূর্ণমান হবে ৫০। যে ছাত্র গড়ে ৪৮ নাম্বার পেতো তাকে প্রথম স্থরে উত্তীর্ণ বলে গণ্য করা হতো।

৪৭ থেকে ৪৫ পর্যন্ত ২য় স্থরের নাম্বার ছিলো। ৪৪ থেকে ৪০ পর্যন্ত নিম্নমানের নাম্বার ছিলো। এর পর ৩৫ পর্যন্ত পাশ নম্বর মনে করা হতো। কেবল এদেরকে উপরের জামা'আতে উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু, কেউ ৩৫ থেকে কম নাম্বার পেলে সে অকৃতকার্য বিবেচিত হতো। সাথে এই ঘোষণা ও ছিলো যে, যদিও পূর্ণমান ৫০ কিন্তু যদি কোনো ছাত্র এর থেকেও ভালো পরীক্ষা দেয় তাহলে তাকে ৫০ এর বেশি নাম্বার দেওয়া হবে। ভালো ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ ৫১/৫২ নাম্বারও পেতো। এই নিয়ম অনুযায়ী আমার ফলাফল ছিলো: গুলিস্তা:৫১,বোস্তা:৪৫, ইহসানুল কাওয়াইদ:৫০ ইনশায়ে ফারেগ:৫১, গণিত :৫০, সুন্দর হস্তাক্ষর ৪০, তরজমা:৪৮, মালাবুদ্দা মিনহু:৪৯, জামালুল কুরআন :৫১, কেরাত:৪৯।

চলবে ইনশাআল্লাহ.....

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ