বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৬ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৩০ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
গণভোট নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে জটিলতা তৈরির অভিযোগ জামায়াতের ‘পাঁচ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সাথে ঐকমত্য কমিশনের সভা শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা দিতে ছয় দফা সুপারিশ চিকিৎসকদের  ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারাগারে অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থী  ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার আসছে ফাজিল পরীক্ষায় অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা হুঁশিয়ারি ইআবির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নেতৃত্বে মোফাজ্জল–সামিন শুক্রবার ইসলামী আন্দোলনের আন্তর্জাতিক সিরাত কনফারেন্স, সফল করার আহ্বান ভোলায় শিবির নেতার উপর হামলা, অবস্থা আশঙ্কাজনক

আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ.: বিনয় যার প্রধান হাতিয়ার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ মুযযাম্মিলুল হক উমায়ের: শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমাদ শফী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা৷ অল্প কিছুদিন হলো তিনি আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন৷ বড়দের জীবন চরিতে রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মদের চলার শক্তি৷ নিজেকে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার খোরাক৷ তিনি কতো বিনয়ী ছিলেন, ছোটদের প্রতি তাঁর স্নেহ কতো বেশি ছিলো নিচের ঘটনাটি এর জ্বলন্ত প্রমাণ৷

সম্ভবত ২০০৭ সালের কথা৷ গ্রাম থেকে ঢাকা সাভারে আসার পরের বছর৷ হয়তো কাফিয়া পড়ি৷ সেই বছর আমাদের মাদরাসায় একজন নতুন মুহাদ্দিস নিয়োগ দেয়া হয়৷ উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা হিলালুদ্দীন আফতাবী হাফিজাহুল্লাহু৷ বি বাড়ীয়া বাড়ি৷ বড় হুজুর আল্লামা সিরাজুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহু তাআলার বাড়ির মাদরাসা ভাদুগড় জামিয়াতে মুহাদ্দিস ছিলেন৷ অনেক যোগ্যতার অধিকারী৷ মেধাশক্তি অনেক প্রখর৷

তিনি হাটহাজারী মাদরাসার ফাজেল৷ থাকতেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমাদ শফী রাহিমাহুল্লাহু তাআলার কামরাতে৷ তিনি অতি যত্ন করে তাঁর প্রিয় ছাত্রকে গড়েছেন৷ ছাত্রাবস্থায়ই খেলাফত দিয়েছেন৷ অনেক প্রতিভাবান, মেধাশক্তির গুণে শায়খুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহু তাআলাই তাঁর প্রিয় ছাত্রকে উপাধি দিয়ে ছিলেন ‘আফতাবী’৷

অর্থাৎ সূর্যের মতো যার প্রখর মেধা৷ শুনেছি হযরত অনেক সময় নিজেই তাঁর প্রিয় ছাত্রকে পাক করে খাওয়াতেন৷ এটি ছিলো হযরতের বিনয়ের নিদর্শন৷ কী পরিমান বিনয় থাকলে নিজ ছাত্রকে এতোটা যত্ন করা যায়- বিষয়টি অনেক ভাবিয়ের৷

আমার উস্তাদে মুহতারাম তখন চট্টগ্রামের কোন এক মাদরাসায় বুখারী শরীফ পড়াতেন৷ সপ্তাহে দুইদিন যেতেন৷ একবার আমাদের মাদরাসার কিছু ছাত্র -উস্তাদ প্রোগ্রাম করেন হাটহাজারীর মাহফিলে যাওয়ার৷ কাফেলার প্রধান নির্ধারন করা হয় আমার উস্তাদে মুহতারামকে৷ যেহেতু তিনি চট্টগ্রামের পরিচিত৷

হাটহাজারীতেও আছে অনেক সুনাম৷ শায়খুল ইসলাম রাহিমাহুল্লাহু তাআলার সাথেও আছে গভির সম্পর্ক৷ ইসলাহী নিসবত৷ বারটা ছিলো জুমাবার৷ আমরা বৃহস্পতিবারে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে পথ ধরি৷ রাস্তায় অনেক সমস্যা হয়েছে৷ সেই সাথে আল্লাহ তাআলার সাহায্যও পেয়েছি অনেক৷ সকাল সকাল আমরা হাটহাজারী মাদরাসায় পৌঁছি৷ কিছু সময় পর আমার উস্তাদে মুহতারমও বুখারী শরীফের দরস দিয়ে আমাদের সাথে শরীক হলেন৷

আমরা নাস্তা সেরে শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমাদ শফী রাহিমাহুল্লাহু তাআলার যিয়ারত করার ইচ্ছা করি৷ আমাদের কাফেলা নিয়ে উস্তাদে মুহতারাম চললেন শায়খুল ইসলামের কামরার দিকে৷ যতোটুকু মনে আছে পূর্বপাশের বিল্ডিং এ ছিলো কামরাটি৷ বয়সে অনেক ছোট থাকায় এখন মনে করতে পারছি না নিশ্চিত দিকটির কথা৷

কামরার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে আছি৷ আমার উস্তাদে মুহতারাম সালাম দিয়ে ভিতরে গেলেন অনুমতির জন্যে৷ আহ! তিনি কতোযে মহব্বতে আমাদেরকে ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে ছিলেন- আজ সেই আনন্দের কথাটি মনে হলেই শরীর শিউরে ওঠে৷ আমরা সালাম-মুসাফাহা করি৷ আমাদের খানাপিনার, আরাম-আয়েশের খোঁজ নিলেন৷ অল্পসময় পর তিনি আমাদেরকে সাথে নিয়ে পুরো মাদরাসা দেখানোর জন্যে বের হলেন৷

চলার সাথী হুইল চেয়ার তখনো হযরতের সাথে যুক্ত হয়নি৷ তিনি সবলভাবেই তখন হাঁটতে পারতেন৷ তিনি সামনে হাঁটছেন আমরা পিছনে পিছনে৷ তিনি এক এক করে পুরো মাদরাসা আমাদেরকে ঘুরে ঘুরে দেখালেন৷ এমনকি বডিংটাও দেখালেন৷ এবং বিভিন্ন ইসলাহী, আমলী নসীহত শুনাতে ছিলেন৷ সেদিন মাহফিল থাকায় ছাত্ররা ও অন্যরা আমাদেরকে দেখতে ছিলেন৷

তাদের দেখার ভাবে মনে হচ্ছিলো তারা অবাক হয়ে ছিলেন এইভেবে যে, আমরা এমন কারা যাদেরকে তিনি এতো যত্ন করে পুরো মাদরাসা হেঁটে হেঁটে দেখানো প্রয়োজন মনে করলেন৷ সত্যিই এটি অনেক আশ্চর্য ও ভাবনারই বিষয় ছিলো৷ কিন্তু তিনিযে বিনয়ের সারে তাজ৷ বিনয়ের মূর্তপ্রতিক৷বিনয় যার শরীরের রক্তেরন্ধে বিঁধে গিয়েছিলো৷ এই বিনয়ের ভারেই তিনি আমাদের মতো ছোট ও উল্লেখহীন লোকদেরকে সম্মান জানিয়ে ছিলেন সেইদিন৷

এটি মূলত মেহমানের কদর যা সুন্নতে নববীর আদর্শ সেটিই তিনি প্রমাণ করে ছিলেন নিজের আমল দ্বারা৷ বাদ জুমা হযরতের ইফতিতাহী বয়ান ছিলো৷ তিনি মধুমাখা অল্পসময় নসিহত করলেন৷ বিনয়ের চূড়ায় পৌঁছে যাওয়ার কারণেই নিজে প্রখ্যাত আলেম, মুহতামিম, মুনাযির, মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদীস হওয়ার পরও বয়ানের জন্যে অন্যদেরকে অগ্রাধীকার দিলেন৷

এমনকি মুনাযিরে আযম আল্লামা ওলীপুরী হাফিজাহুল্লাহু তাআলার নামটিও তিনি ঘোষণা করে দিয়ে হযরতের কথা শেষ করে ছিলেন৷ এমন ছিলো হযরতের বিনয়৷ ছোটদের প্রতি স্নেহ আর মায়া-মমতা৷ যা সুন্নতে নববীর আদর্শ পালন করার উজ্জল্য দৃষ্টান্ত৷

দুআ করি হযরতকে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর রহমত ও রহমের চাদরে ঢেকে নিন৷ জান্নাতের আলা মাকাম দান করুন৷ আমাদের উপর হযরতের রুহানী ফুয়ুয-বারাকাত জারি রাখুন৷ আমীন৷

-কেএল


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ