মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৯ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জুলাই আন্দোলনের অগ্রসেনানী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ খুলনায় হাতপাখার সংসদ সদস্য প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠক সার্বিক উন্নয়ন ও ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই: হাফিজ ফখরুল ইসলাম ফরিদপুরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীর প্রচারণার গেট ও ব্যানার ভাঙচুর  জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য নভেম্বরেই গণভোট দিতে হবে: এ টি এম মাছুম জামায়াত আমিরের আসনে বিএনপির প্রার্থী হলেন যিনি খালেদা জিয়াসহ ৯ নারী পেলেন বিএনপির মনোনয়ন ২৩৭ আসনে বিএনপির ধানের শীষ পেলেন যারা নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মামলায় মতিউর রহমান আকন্দ নিন্দা বস্ত্রহীন ঘুমানোর হুকুম কী ?

দিনলিপি : কী, কেন ,কিভাবে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।আবু মুকাম্মিল সাইফ।।

প্রতিটি নতুন দিনের আগমনে হারিয়ে যায় এক একটি পুরনো দিন। সেই দিনের যাপন হয়ে যায় অতীত। এই অতীতকে আমরা অংকন করি আমাদের দিনলিপিতে। জীবনের প্রতিদিনের ঘটনা ধারা স্থান পায় দিনলিপিতে। একটি দিনের ভালো লাগা, মন্দ লাগা ও না লাগা মুহূর্তগুলো দিয়ে সাজানো হয় দিনলিপি।

দিনলিপি কী:
আভিধানিক অর্থে দিনলিপি মানে রোজনামচা বা নিজের দিনরাতের যাপন ও অনুভব লেখা। রোজনামচা বা ডাইরি লেখার অর্থ হলো, মানুষের জীবন এবং তার চারপাশে প্রতিদিন যা কিছু ঘটে, সে প্রতিদিন যা কিছু করে, যা কিছু শুনে, যা কিছু চিন্তা–ভাবনা করে সেগুলোর কিছু কিছু সেদিনের সন-তারিখ সহ খাতা বা ডায়েরির পাতায় লিখে রাখা।

ডাইরি, জার্নাল, দিনলিপি, টুকরোকথা—জ্ঞান ও সাহিত্য-জগতের সরব ও সচল একটি ঘরানা। প্রায় সকল বিখ্যাত মানুষের এ জাতীয় রচনা আমাদের কৌতূহলী ও আগ্রহী করে রাখে।

অনেক সময় কোনো বিষয়ভিত্তিক বা তাত্ত্বিক বইয়েও এমন যুগান্তকারী ও চাঞ্চল্যকর জীবন-অনুসন্ধানী বিষয় মেলে না, যা এসব ডাইরি বা জার্নালে পাওয়া যায়।।

দিনলিপির শুরু:
অনেক গবেষক মনে করেন দিনলিপির শুরু সেই আদি যুগ থেকে। তবে এ কথার কোনো শক্ত বিত্তি নেই। দিনলিপি লেখার সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলে দশম শতাব্দীতে। পশ্চাত্যে দিনলিপি জনপ্রিয় হয়ে উঠে রেনেসাঁ যুগে। ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয়া স্যামুয়েল পেপিসকে বলা হয়ে থাকে দিনলিপির শেক্সপিয়ার।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কাগজের সহজলভ্যতা বৃদ্ধির সঙ্গে দিনলিপিও আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর অত্যাচারের দিনগুলোতে লেখা অ্যানা ফ্রাংকের ডায়েরির ঐতিহাসিক মূল্য আজ সর্বজনবিদিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের দিনলিপি নিয়ে ও একটি বই প্রকাশ পেয়েছে। বইটির নাম কারাগারের রোজনামচা।

গুরুত্ব:
দিনলিপি আমাদের মনের ভাব প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একজন নিঃস্বার্থ বন্ধু। একসময় কাছের মানুষ ছেড়ে চলে যায়। যাদের সাথে সারাদিন মনের দুঃখ কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নিতে তারা ব্যস্ততার ভিড়ে হারিয়ে যাবে। তখন আপনার পাশে বসে আপনার সেই কথাগুলো শুনবে দিনলিপি।

আপনার প্রতিটি দিনের কাজকর্ম দিনলিপিতে পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গঠন এবং নতুন আচরণ মূল্যবোধ প্রদর্শন এবং নতুন ভাবে পরিবর্তনে আস্থাবান হতে সাহায্য করে। এজন্য দিনলিপির গুরুত্ব অপরিসীম।

লেখার নিয়ম:
দিনলিপি লেখার সময় একটি জিনিস লক্ষ্য রাখা যে সবসময় উত্তম পুরুষ তথা 'আমি' ব্যবহার করা। সর্বদা সত্য কথা লেখার চেষ্টা করা। দিনলিপিতে মিথ্যা লেখা চলবে না। প্রতিদিনের কাজকর্মের মূল পয়েন্টগুলো দিনলিপিতে উল্লেখ করা। দিনলিপি একান্ত ব্যক্তিগত রচনা, তাই সেখানে নিজের অভিজ্ঞতা, অভিমত খোলামেলা ভাবে আলোচনা করা।

দিনলিপি সহজ সরল ভাষায় লেখা ভালো। তবে তা হতে হবে আকর্ষণীয় ও অনুসরণীয় বা অনুকরণীয়। তাই দিনলিপি লিখতে গেলে অবশ্যই ভাষা জ্ঞান প্রয়োজন। দিনলিপি মোটামুটি গল্পের আকারে লিখলে সুন্দর হয়। দিনলিপি লেখার আগে মস্তিষ্কে একটি খসড়া চিত্র দাঁড় করিয়ে নিতে হয়।

বিশেষ বিশেষ দিন বা ছুটির দিনের দিনলিপি সাধারণ দিনের দিনলিপি থেকে ভিন্ন ও আকর্ষণীয় হবে। দিনলিপি লেখার শুরুতেই তারিখ উল্লেখ করলে ভালো। এর মাধ্যমে ঘটনার দিন, তারিখ ও সময় সম্পর্কে জানা যায়।

উপসংহার:
মানবজীবনের ভালো অভ্যাসগুলোর একটি দিনলিপি লেখা। দিনলিপি যা নিজেকে যাচাই করার সুযোগ করে দেয়। নিজের আত্ম উপলব্ধি বাড়ায়। নিজের ভুলগুলো যাচাই-বাছাই করার সুযোগ দেয়। এজন্য দিনলিপি রচনায় আমরা যতোই মনযোগী হবো ততোই লাভ।

শিক্ষার্থী, মা'হাদুল ফিকরি ওয়াদ্দিরাসাতিল ইসলামিয়া

-কেএল


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ