শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


মাদরাসা খোলা, সনদের মান কার্যকরসহ হাইয়ার বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা কওমি মাদরাসা খুলে দেয়া, সরকার স্বীকৃত সনদের মান, কেন্দ্রীয় তাকমিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ,  সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্থা হাইয়ার জন্য স্থায়ী জমি ক্রয় ও বর্তমান অফিস স্থানান্তের জন্য নতুন ভবন দেখাসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় আল-হাইয়াতুল উলইয়ার বৈঠক থেকে।

আজ বুধবার (১৬ জুন) সকাল ১০ টায় সংস্থার আরামবাগের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী এ বৈঠকের সভাপত্বি করেন আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান।

জানা গেছে, সভার শুরুতে আল-হাইআতুল উলয়ার সদস্য, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি এবং মতিঝিল জামিয়া দ্বীনিয়া শামসুল উলূম পীরজঙ্গী মাজার মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ছফিউল্লাহ (র.) এর মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং করোনা পরিস্থিতিতে দেশবাসীসহ বিশ্বমানবতার জন্য দু‘আ করা হয়।

এরপর সভাপতির নির্দেশক্রমে নিম্মের সিদ্ধান্তবলি গ্রহণ করা হয়।

১। হিজরীর দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ: সভায় ১৪৪২ হিজরীর দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩০ যিলকদ ১৪৪২ হিজরী, ১১ জুলাই ২০২১ ঈসাব্দ।

২। স্থায়ী কমিটির ৪০ নং সভার সিদ্ধান্তসমূহ সংশোধন ও অনুমোদন:
(ক) (অ) আল-হাইআতুল উলয়া কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধানের জন্য আল-হাইআতুল উলয়ার অধীন ৫ বোর্ডের ৫ (পাঁচ) জন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া থেকে ৫ জন এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত ৫ (পাঁচ) জন সমন্বয়ে সর্বমোট ১৬ (পনের) জনের একটি সাব-কমিটি গঠিত হবে; এ সাব-কমিটির নাম হবে ‘বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাব-কমিটি’।
(আ) ‘বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাব-কমিটি’তে আজ আরো ২ (দুই) জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়;
(ই) ৬ বোর্ড তাদের অধীন মাদরাসাগুলোতে আল-হাইআতুল উলয়া কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করবে, প্রয়োজনে ‘বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাব-কমিটি’ তাদের সহযোগিতা করবে।
(ঈ) ‘বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাব-কমিটি’র আহ্বায়ক মুহতারাম চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান সাহেব।
(খ) কওমি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকগণ প্রচলিত সর্বপ্রকার রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকবে মর্মে সকল মাদরাসার মুহতামিমকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
(গ) ‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ আইন, ২০১৮’ (২০১৮ সনের ৪৮ নং আইন) গ্রন্থাকারে মুদ্রিত করে দেশের সকল মাদরাসায় প্রেরণ করা হবে। (৬ বোর্ড তাদের অধীন মাদরাসাগুলোতে প্রেরণের দায়িত্ব পালন করবে।)

৩। নিয়োগ ও বেতন স্কেল প্রণয়ন সাব-কমিটি পুনর্গঠন:

আল-হাইআতুল উলয়ার অফিসে দীর্ঘদিন কর্মরত সাময়িক কর্মীদের নিয়োগদান এবং আল-হাইআতুল উলয়ার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ বেতন স্কেল প্রণয়ণের জন্য ১১ (এগার) সদস্যবিশিষ্ট ‘নিয়োগ ও বেতন স্কেল প্রণয়ণ সাব-কমিটি’ পুনর্গঠন করা হয়।

৪। অডিটর নিয়োগ এবং ১৪৪১ ও ১৪৪২ হিজরীর অভ্যন্তরীণ অডিট:

(ক) ১৪৪০ হিজরীর কোম্পানী অডিটের জন্য এ, হক এন্ড কোং কে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(খ) ১৪৪১-১৪৪২ হিজরীর অভ্যন্তরীণ অডিটের জন্য ৫ (পাঁচ) সদস্যবিশিষ্ট ‘অভ্যন্তরীণ অডিট সাব-কমিটি’ গঠন করা হয়।
(গ) ১৪৪৩ হিজরী থেকে প্রতি ৬ মাস অন্তর অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পাদন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(ঘ) প্রতি স্থায়ী কমিটির সভায় পূর্ববর্তী সভা থেকে উক্ত সভা পর্যন্ত সময়কালের আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

৫। সফটওয়্যার ও সনদ বিষয়ক সাব-কমিটির সুপারিশ ও প্রস্তাবনা অনুমোদন:

পরীক্ষার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনার লক্ষ্যে ‘এক্সামিনেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি শক্তিশালী অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি প্রক্রিয়াধীন আছে। এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার ফরম পূরণ, প্রবেশপত্র ও ফলাফল সংগ্রহ এবং সনদপত্র সংক্রান্ত সকল কাজ অনলাইনেই করতে পারবে। পরীক্ষার ফলাফলও অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। ফলাফল প্রকাশের পরপরই পরীক্ষার্থীরা তাদের সাময়িক সনদ, মার্ক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারবে।
এ সফটওয়্যারে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী, মাদরাসা ও বোর্ডের জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল থাকবে। প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করা যাবে। অটো রোলশীট জেনারেটের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল ও পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিসংখ্যান প্রস্তুতসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজেই করা যাবে।
(ক) সফটওয়্যার বিষয়ক সাব-কমিটির সভা নং ৪ এবং সনদ বিষয়ক সাব-কমিটির সভা নং ২ এর সুপারিশ ও প্রস্তাবনা অনুমোদন করা হয়।

(খ) মূল সনদ ও নম্বরপত্রের জন্য কোন ফি গ্রহণ করা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(গ) মুহাররম ১৪৪৩ হিজরী থেকে সাময়িক সনদের ফি হবে ২০০/- (দু’শ টাকা), নম্বরপত্রের ফি হবে ১০০/- (একশ টাকা)। সাময়িক সনদ বা নম্বরপত্র হারিয়ে গেলে ডুপ্লিকেট সাময়িক সনদ ও নম্বরপত্রের ফিও অনুরূপ হবে।
(ঘ) মূল সনদ বা নম্বরপত্র হারিয়ে গেলে পুনঃসনদের ফি হবে ২০০/- (দু’শ টাকা), প্রতি ভাষার নম্বরপত্রের ফি হবে ১০০/- (একশ টাকা)।

(ঙ) ১৪৩৮ হিজরী/২০১৭ ঈসাব্দ থেকে ১৪৪২ হিজরী/২০২১ ঈসাব্দ পর্যন্ত দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের মূল সনদ ও নম্বরপত্র বোর্ডে প্রেরণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়; যেমন-
(অ) প্রত্যেক ছাত্রের নাম, পিতার নাম, মায়ের নাম এবং সকল মাদরাসার নাম বাংলা, আরবি ও ইংরেজি শুদ্ধ বানানে সংগ্রহ করা দুরূহ হবে।

(আ) যদি সংগ্রহ করা যায়, তবু এ বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য কম্পিউটারে তোলা বা হাতে লেখার জন্য অনেক জনবল লাগবে এবং প্রচুর পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হবে। তাই ১৪৪২ হিজরী/২০২১ ঈসাব্দ পর্যন্ত উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মূল সনদ-
(ই) পরীক্ষার্থীগণ স্বয়ং উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণপূর্বক আল-হাইআতুল উলয়ার কার্যালয় থেকে সনদ ও নম্বরপত্র সংগ্রহ করবে;

(ঈ) অথবা প্রতি সনদপ্রার্থীর জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম পৃথক পৃথকভাবে পূরণ করে মাদরাসার প্যাডে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও সত্যয়নসহ আল-হাইআতুল উলয়ার কার্যালয়ে জমা দিলে সনদ ও নম্বরপত্র প্রস্তুত করে আল-হাইআতুল উলয়া মাদরাসায় পাঠিয়ে দিবে;

(উ) অথবা পরীক্ষার্থীগণ নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করে আল-হাইআতুল উলয়ার ই-মেইলে প্রেরণ করবে; আল-হাইআতুল উলয়া সনদ ও নম্বরপত্র প্রস্তুত করে আবেদনকারীকে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে সনদ/নম্বরপত্র সংগ্রহ করার কথা জানাবে।
(ঊ) নির্ধারিত আবেদন ফরম তৈরি করতে হবে এবং অনলাইন থেকে ডাউনলোড করার ব্যবস্থা রাখতে হবে;
(এ) আবেদন ফরমে জন্মনিবন্ধন নম্বর/জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের ঘর থাকবে; এবং প্রস্তুতকৃত মূল সনদ ও নম্বরপত্রে এই নম্বর উল্লিখিত হবে।

(চ) প্রেসে ছাপানো কাগজে মূল সনদ ও নম্বরপত্র প্রিন্ট করার পরিবর্তে আল-হাইআতুল উলয়ার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উন্নত ছাপার মেশিনে ডিজাইনসহ সনদ ও নম্বরপত্র ছাপানো যায় কিনা, এবং এর জন্য কি ধরনের মেশিন, কতটুকু স্থান, কি পরিমাণ জনবল এবং অর্থ লাগতে পারে, কাগজের নমুনা ও ডিজাইনসহ আগামী ২০ (বিশ) দিনের মধ্যে অফিস সম্পাদককে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।

৬। আল-হাইআতুল উলয়ার স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে জমি ক্রয়ের জন্য ১১ (এগার) সদস্যবিশিষ্ট ‘ভূমি সংগ্রহ সাব-কমিটি’ পুনর্গঠন করা হয়।

৭। কওমি মাদরাসার শিক্ষাকার্যক্রম চালু এবং সরকারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল:
(ক) সরকারের নিকট হিফজ ও মক্তব বিভাগ খুলে দেওয়ার আবেদন জানানো হবে; এবং
(খ) প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে ভর্তির সুযোগ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সার্বিক সুযোগ প্রদানের আবেদন জানিয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাধ্যম করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর পত্র প্রদান করা হবে। মাননীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট সচিবের নিকট পত্র পৌঁছে দেবেন রাজধানীর জামিয়া আরাবিয়া এমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিমও শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি আরশাদ রাহমানী ও আযাদ দীনি এদারা বোর্ড সিলেটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুর বছির।

(গ) অতিসত্বর মুহতারাম চেয়ারম্যান সাহেব একটি প্রতিনিধিদলসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

(ঘ-১) শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর আল-হাইআতুল উলয়ার কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদন সত্বর প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
(ঘ-২) প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা ও সম্পাদনার জন্য ৩ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

৮। বিবিধ
(ক-১) আল-হাইআতুল উলয়ার অফিসের জন্য নতুন ভবন ভাড়ায় গ্রহণের নিমিত্ত ৪ সদস্যবিশিষ্ট সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
সাব-কমিটি যাত্রাবাড়িস্থ ১ নং বিবির বাগিচার প্রস্তাবিত ভবনটি পরিদর্শন করবে এবং চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক এতদ্বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
(ক-২) ক্রয়-বিক্রয় সাব-কমিটি নতুন ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব ক্রয় করবে এবং অফিস স্পেস বিন্যাস ও সজ্জিত করবে।
(খ) দাওরায়ে হাদীসের সনদের মান কার্যকর করা এবং সরকারি চাকরিতে দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৪ নং সভায় গঠিত ৬ সদস্যবিশিষ্ট সাব-কমিটিকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর