মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
দেখতে দেখতে পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দুই দশক বিদায় নিলো। মাহে রমজানের প্রতিটা মুহূর্ত ফজিলতপূর্ণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অন্য দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠাংশ হচ্ছে তার শেষ দশক। যারা রমজানের প্রথম দুই দশক কাজে লাগিয়েছে, তারা বেশ কল্যাণ লাভে ধন্য হয়েছেন। আর যারা কাজে লাগাতে পারেননি তাদের জন্য শেষ দশকে পুষিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।
মাহে রমজানের শেষ দশকের কোনো এক রাতে লাইলাতুল কদর আছে যা হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। আর সে রাতেই পবিত্র কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্য এই শেষ দশকের আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইবাদতে নিমগ্নতার মাধ্যমে এ রাত অন্বেষণ করা চাই। এ সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালোভাবে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করে মসজিদে ইতিকাফে থাকতেন। তাই এই সময়ে আমাদেরও মসজিদে ইতিকাফে সার্বক্ষণিক ইবাদতে কাটানো উচিত। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে আমাদের অনেকের পক্ষে ইতিকাফে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। এই সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার পাশাপাশি সালাতুত তারাবি ও সালাতুত তাহাজ্জুদ যথাসাধ্য আদায়ের চেষ্টা করবো। কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত, জিকির-আজকারে ব্যস্ত থাকবো।
রমজানের শেষ দশকে রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং পরিবারের সবাইকেও জাগিয়ে দিতেন। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন- "রমজান মাসের শেষ দশক শুরু হলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কোমর শক্ত করে বাঁধতেন, এই সময়ের রাতগুলোতে জাগ্রত থাকতেন এবং তাঁর গৃহবাসী লোকদেরকে সজাগ করতেন।" (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। এই হাদিস হতে জানা যায় যে, রমজান মাসের শেষ দশক আসলেই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম চূড়ান্ত মাত্রার ইবাদতের জন্য কোমর বাঁধতেন অর্থাৎ পূর্ব প্রস্ততি গ্রহণ করতেন। আর তিনি একাই ইবাদত-বন্দেগি করতেন এমনটি নয়, বরং নিজের গৃহবাসী আপনজনদেরকেও রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত করতেন।
জামে তিরমিজিতে উদ্ধৃত হাদিসে এব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশকে তাঁর ঘরের লোকদেরকে ইবাদত-বন্দেগি ও নামাজ আদায়ের জন্য জাগিয়ে দিতেন। হজরত আয়িশা (রা.)-এর অপর একটি বর্ণনায় আরও বলিষ্ঠ ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকে তাঁর ঘরের লোকদের মধ্যে রাত্র জাগরণ করে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে এমন কাউকেই ঘুমাতে দিতেন না। বরং প্রত্যেককেই জাগ্রত থেকে ইবাদত করার জন্য প্রস্তুত করতেন। (উমদাতুল কারি, শরহে বুখারি)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও তাঁর ঘরের লোকদেরকে রমজানের শেষ দশকের সব কয়টি রাত্রিই আল্লাহ পাকের ইবাদতে মশগুল হতেন ও মশগুল রাখতেন। এই রাত্রিটির বরকত ও ফজিলত যেন কোন প্রকারে হারিয়ে না যায়, ও ইহা হতে যেন বঞ্চিত থাকতে না হয়, এই উদ্দেশ্যেই তাঁর এই ব্যবস্থা ও প্রস্ততি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্যই বাঞ্ছনীয়। এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার কোনই সুযোগ নেই। তাইতো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে সাহাবায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীন এ দশকে ইবাদতের ব্যাপারে সর্বোচ্চ যত্নবান থাকতেন।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, শেষ দশকে আমাদের অনেকেরই একটা বড় সময় কাটে শপিংমলে ঈদের কেনাকাটায়। অথচ আমরা চাইলে এই কাজগুলো আগেই সেরে রাখা যেতো।
রমজানের শেষ দশ দিনে সালাতুত তাহাজ্জুদ, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারসহ অন্যান্য আমলের মাধ্যমে কাটানো চাই। এছাড়া রমজানের শেষ দশ দিন ধনীদের জন্য দান-সদকা, অসহায়-দারিদ্রের সহায়তাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতামূলক কাজে অংশ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের বাকি সময়টুকু কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক- আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
-কেএল
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        