শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ।। ২০ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৫ জিলকদ ১৪৪৬


ইতেকাফের তাৎপর্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাসউদুল কাদির

আজ কুড়িতম রোজা আমরা পালন করছি। আল্লাহর মেহেরবাণীতে মাগফেরাতের শেষ দিন আজ। নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত, আমি সত্যিই সত্যিই ক্ষমা পেয়েছি? ক্ষমার জন্য সবসময় আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করবো, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আল্লাহুম্মাগ ফির লানা ‘ হে আল্লাহ আমাদের মাফ করো’। আজ রাত থেকে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী সমগ্র বিশে^ লাখো লাখো মানুষ পুরো দশদিন মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইতেকাফে কাটাবে। আমরা জানি, মসজিদময় জীবনের আরেক নাম ইতেকাফ। ইতেকাফ মানে বিচ্ছিন্ন থাকা, নিঃসঙ্গ থাকা, নিবেদিত হওয়া, মসজিদে ইতেকাফ বা অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশ দিন মুমিন দুনিয়ার সব কোলাহল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে একেবারে নিঃসঙ্গ হয়ে আল্লাহর ঘরে নিজেকে সঁপে দেয়। আত্মশুদ্ধির এক বৈচিত্র্যময় ইবাদতে নিমগ্ন হয়ে বান্দা খুঁজে ফিরে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

কুরআনেও বান্দাকে মুত্তাকী বানানোর জন্য ইতেকাফ-এর কথা তুলে ধরা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের সঙ্গে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। এভাবে আল্লাহ তার নিদর্শনাবলী মাবজাতির জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে। [সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭]

সিয়ামের মাধ্যমে যেমন বান্দাকে আল্লাহ তাআলা পরহেজগার বানাতে চান, তেমনি ইতেকাফের মাধ্যমেও তা-ই। লক্ষ্য একটাই বান্দাকে পবিত্র করে গড়ে তোলা। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইতেকাফের মসজিদকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ইতেকাফ অবস্থায় পানাহার বৈধ। এ ছাড়া ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস জায়েয নেই। রোযায় যেমন সূর্যোদয় থেকে নিয়ে সূর্যাস্থ পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস না জায়েয। কিন্তু ইতেকাফকারীর দিন-রাত সবসময়ই এটা না জায়েয।

ইতেকাফ এক আত্মনিমগ্নতার আমল। এ আমলে মানুষ নিজেকে শুধরে পারে সহজে। মসজিদের পরিবেশ ও আমলের সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করে ইতেকাফ চর্চা করে মানুষ হয়ে ওঠে সত্যিকার অর্থেই পবিত্রতম। পরিবেশে মানুষ বনে। মানুষ গঠিত হয়। মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলা খেই ফিরে পায়। নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিজেকে নির্মাণ করে। আত্মশুদ্ধিতে বলীয়ান একজন বুজুর্গের তত্ত্বাবধানে ইতেকাফে করতে পারলে নিজেকে রাঙানো অনেক বেশী সহজ।

আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তাআলা ইতেকাফের হুকুম আরোপ করে বান্দাকে মুত্তাকী বানাতে চেয়েছেন এটা স্পষ্ট। তাই রহমতের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতেকাফ করতেন। সাহাবায়ে কেরাম রা.ও মসজিদে রাসূলের সঙ্গে ইতেকাফ করতেন। হযরত ইবনে ওমর থেকে বোখারি এবং মুসলিম শরিফে উল্লেখ আছে, ‘হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন।’ [বোখারী ও মুসলিম]

ইতেকাফ হলো আমলের এক চিরন্তন অধ্যায়। একটা নির্ধারিত সময় ধারাবাহিকভাবে মসজিদে কাটিয়ে ইবাদতরত অবস্থায় আল্লাহপ্রেমের সওদা গ্রহণে এরচেয়ে আর সুন্দর পথ কী বা আছে। তাই ইতেকাফের মাধ্যমে হৃদয়বান পুণ্য মানুষের আবির্ভাব ঘটবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: সহকারী সম্পাদক, দৈনিক আমার বার্তা ও প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ (শিক্ষা, সাহিত্য ও সামাজিক আন্দোলন)

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ