শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ।। ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ১৭ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
ছাত্ররা ঘরে ফিরে যায়নি, জুলাইও শেষ হয়নি : হাসনাত আব্দুল্লাহ জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস অনুমোদন ২৪এর শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি:মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী আফগানিস্তানের তুরগন্দি-হেরাত রেলওয়ে প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের নতুন চুক্তি স্বাক্ষর ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৮০০ ফিলিস্তিনির  ৪৫ বছরের ইমামকে মুসল্লিদের রাজকীয় বিদায় দিবালোকে পাথর মেরে হত্যায় সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জমিয়তের মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি ছাত্র জমিয়তের মসজিদে ঢুকে খতিবকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা আলমডাঙ্গায় আল মাহমুদের জীবন ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনাসভা ঝিনাইদহে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিএনপি’র সমাবেশ ও বিক্ষোভ

ভাস্কর্য ইস্যুতে শরিয়তসম্মত সমাধান চাই: উদ্বোধনী বক্তব্যে আল্লামা মাহমুদুল হাসান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ভাস্কর্য ইস্যুতে যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় দেশবরেণ্য আলেমদের বৈঠকে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমূদুল হাসান উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ভাস্কর্য ইস্যুতে শরিয়তসম্মত সমাধান চাই।

আজ শনিবার (৫ ডিসেম্বর) যাত্রাবাড়ী শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান একথা বলেন।

তিনি বলেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ! উপস্থিত হজরত ওলামায়ে কেরাম, দেশের বর্তমান অস্থিরতা ও চলমান সংকট বিষয়ে আপনারা কমবেশি অবগত আছেন। উম্মাহর এই ক্রান্তিকালে আপনারা মূল্যবান মেধা শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় করে উপস্থিত হওয়ায় আন্তরিক মোবারকবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সারাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল ওলামায়ে কেরামদের। যারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন।

আমি সংক্ষিপ্ত পরিসরে কয়েকটি কথা বলতে চাই। মহানবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের হৃদয়রাজ্যের শাহেনশাহ। আমাদের জীবনের চাইতেও হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামকে বেশি মহব্বত করি। এবং এটাই আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মান রক্ষা করা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননার সকল পথ বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে আলেমদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি শরিয়তসম্মত সমাধানে পৌঁছাও অতীব প্রয়োজন বলে মনে করি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি সরকার, জনগণ কিংবা আলেম-ওলামা কারো জন্যই সুখকর নয়।

উপস্থিত হজরত ওলামায়ে কেরামের কাছে আমি কিছু অনুরোধ রাখতে চাই:

এক: রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে ওলামায়ে কেরামের সম্পর্ক কল্যাণকামী উপদেশদাতার। অতএব, উলামায়ে কেরামের মুখে কুরআন-সুন্নাহর বাণী শাসক ও দায়িত্বশীলদের যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করা কর্তব্য। ওলামায়ে কেরামকে শত্রু বা প্রতিপক্ষ মনে করার কোনো কারণ নেই। সুতরাং যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা বিরোধ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল সকলকে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে হবে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইসলাম জনগণ ও রাষ্ট্র সকলের জন্যই ক্ষতিকর।

দুই: ওলামায়ে কেরাম যেহেতু প্রধানত মসজিদ-মাদরাসা, খানকা ও অন্যান্য দ্বীনি অঙ্গনে কাজ করেন। সুতরাং তাদের ঈমানের দৃঢ়তা, আলেমানা প্রজ্ঞা, সর্বোচ্চ ধৈর্য সহনশীলতা ও উন্নত আখলাকের মাধ্যমে সব ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতিতেই দ্বীনের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। মুরুব্বিয়ানে কেরামের মতামত ও পরামর্শ ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে কারো পক্ষেই কোনো অপ্রয়োজনীয় সমস্যা তৈরি বা দ্বীনি পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করা কিছুতেই সমীচীন নয়। এসব থেকে সকলকেই সতর্কভাবে বেঁচে থাকতে হবে।

তিন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নৈতিক ব্যবহার কাম্য। এতে যারা দ্বীনের কাজ করেন, তাদের শরিয়তের নীতিমালা এবং আচরণগত সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা আদর্শবান মানুষের পক্ষে শোভা পায় না। ওয়াজ-মাহফিল, বক্তৃতা ও আলোচনায় তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের আইনগত দিক বিবেচনা খুবই জরুরি। ছবি, কথা ও ভিডিওতে কঠিন আইনগত সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসবের নিরাপদ ও নির্দোষ ব্যবহার নিশ্চিত করা আবশ্যক।

চার: দীনি কাজে নিয়োজিত প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে পরস্পরের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সুধারণা পোষণ করা। নিজেদের মধ্যে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব, মিল-মহব্বত, হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক এবং যোগাযোগ রক্ষার বিকল্প নেই। দ্বীনের সর্বাত্মক বিজয় তথা এ’লায়ে কালিমাতুল্লাহর জন্য সব কর্মপদ্ধতির দ্বীনি খেদমত পরিচালনাকারীকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে অব্যাহতভাবে কাজ করে যেতে হবে। উপস্থিত হজরত ওলামায়ে কেরাম, গণমাধ্যমকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের উপস্থিতিকে মোবারকবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।

বৈঠকে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রতিনিধি মুফতি জসীমুদ্দীন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর প্রতিনিধি মাওলানা নাজমুল হাসান, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারীর প্রতিনিধি মাওলানা আবু তাহের নদভী, মুফতি রুহুল আমীন, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদি আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ), আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতি মনসুরুল হক, আল্লামা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়ীয়া), মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন (পীর সাহেব ঢালকানগর) মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি আরশাদ রহমানী, মুফতি মুহাম্মাদ আলী, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মুফতি জাফর আহমদ (পীর সাহেব ঢালকানগর), প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মোবারকুল্লাহ, আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি শফিকুল ইসলাম, সাইনবোর্ড, মাওলানা হিফজুর রহমান (রাহমানিয়া), মাওলানা উবাইদুর রহমান মাহবুব, (বরিশাল), মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক (পীর সাহেব বরুণা), মাওলানা ফজলুর রহমান (বগুড়া) মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী (লালবাগ), মাওলানা শাব্বির আহমদ রশিদ, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল বাছির, আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা আব্দুল্লাহ হাসান, (পীর সাহেব বাহাদুরপুর), মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আযহারী, মুফতি আহমাদ আলী মোমেনশাহী, মাওলানা নুর আহমদ কাসেম (মোমেনশাহী), মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদী, মাওলানা খুবাইব (জিরি), মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিক, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুহিব্বুর রহমান খান, মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, মুফতি গোলাম রহমান, (খুলনা), মাওলানা আব্দুল আউয়াল, (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা আশরাফ আলী (নরসিংদী), মাওলানা শওকত হোসেন সরকার (নরসিংদী), মাওলানা মুনাওয়ার হুসাইন (ধানমন্ডি) প্রমূখ।

বৈঠক শেষে সবার সম্মতিতে কয়েকটি প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।

প্রস্তাবনা-১: মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য যে কোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।

প্রস্তাবনা-২: আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, বিষোদগার, ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।

প্রস্তাবনা-৩: বিগত সময়ে দ্বীনি আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দান ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মপ্রাণ‍মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাযের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।

প্রস্তাবনা-৪: সম্প্রতি শব্দদূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দ্বীনি মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ সাধারণ শব্দদূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে শব্দদূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব, জনগণকে কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনী মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।

প্রস্তাবনা-৫: যে সকল বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সে সব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানিও দিচ্ছে। এসবের খোঁজখবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য, উগ্র স্লোগান, মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে।

ওলামায়ে কেরাম কঠোর ধৈর্য সংযম অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্ভূত বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম, দ্বীন ও বাংলাদেশ বিরোধী দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ রোধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।

ওআই/মোস্তফা ওয়াদুদ/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ