বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, প্রস্তুত করা হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স শিক্ষার্থীদের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ বন্ধের নির্দেশ নারী নীতিমালা নিয়ে জাতীয় সেমিনারে শীর্ষ আলেম-রাজনীতিকরা ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আগে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করতে হবে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ শান্তি বয়ে আনতে পারে না: আমীরে জামায়াত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শাসন সংকট, মনোভাবের বিপর্যয় এবং সতর্কতার আহ্বান নিবরাস ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে শিক্ষক নিয়োগ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

আরাফার সম্মান, মর্যাদা ও আমল!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ইশরাক।।

আরাফাহ আরবি শব্দ। এর অর্থ বুঝতে পারা বা পরিচিত হওয়া । হযরত আদম আ. এবং হাওয়া আ. কে আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে পৃথক স্থানে পাঠিয়েছিলেন। আরাফার পাহাড়ের কাছে তাদের পরষ্পরের পরিচয় হয়। এখান থেকেই আরাফাহ শব্দের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ বলেন, হযরত জিবরাইল আ. হযরত ইবরাহীম আ. কে হজের বিধান শেখাতেন। যখনই কোন একটি বিধান শেখাতেন বললেন, বুঝেছেন কি?

হযরত ইবরাহীম বলতেন, জ্বি বুঝেছি। এখান থেকে আরাফাহ শব্দ চয়িত হয়েছে। নয় জিলহজে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এদিনটিকে বলা হয় আরাফার দিন।

আরাফার দিনের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। আরাফার দিনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বোঝানোর জন্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ দিনের কসম করেছেন শপথ প্রতিশ্রুত দিবস, সে দিবসের যে দিবস উপস্থিত হয় এবং যে দিবসে উপস্থিত করা হয়।'(সূরা বুরুজ-৩)

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিশ্রুত দিবস হলো, কেয়ামতের দিন। উপস্থিত দিবস হলো, জুমার দিন। আর যে দিবসে উপস্থিত করা হয় তা হলো, আরাফার দিন।

পবিত্র কুরআনে বিজোড় সংখ্যা নিয়ে আল্লাহ তায়ালা শপথ করেছেন,'শপথ জোড় ও বিজোড়ের। '(সূরা ফাজর -৩)
এই বেজোড় দ্বারা উদ্দেশ্য আরাফার দিন। ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, জোড় হলো, কুরবানীর দিন। আর বিজোড় হলো, আরাফার দিন।( তিরমিজি)

আরাফার দিন এমন একটি মহত্ত্ব ও মহমান্বিত দিন যে দিনে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সামনে আরাফার ময়দানে অবস্থানকারীদের নিয়ে ফখর করেন। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আরাফার দিনে সেখানে অবস্থানকারীদের নিয়ে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সামনে ফখর করেন এবং বলতে থাকেন তোমরা আমার বান্দাদের দিকে দেখো, তারা ধূলিমলিন এবং এলোকেশী হয়ে আমার কাছে এসেছে।'(সহিহুল জামে)

আরাফার দিনেই আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানদের কাছ থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ তায়ালা আদমের পীঠ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন নুমান তথা আরাফাহ নামক স্থানে। আদমের আ.পৃষ্ঠদেশ থেকে প্রত্যেক বংশধরকে বের করেছেন এবং দানার মত নিজের সামনে তাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অতঃপর তাদের সম্মুখে কথা বলেছেন-'আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছে, হ্যাঁ। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তোমরা কিয়ামতের দিনে বলবে আমরা এ ব্যাপারে অনবহিত ছিলাম। অথবা বলবে আমাদের পূর্বে বাপ-দাদারা শিরিক করেছে আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তাহলে কি আপনি এই পথভ্রষ্টদের কারণে আমাদের ধ্বংস করবেন?' (সূরা আরাফ -১৭২-১৭৩) হাদিসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।

এদিনেই আল্লাহ তায়ালা বিতাড়িত ও অভিসম্পিত ইবলিশ শয়তানকে সবচেয়ে বেশি অপমান ও অপদস্ত করেন।

তালহা ইবনে উবাইদিল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,'বদরের দিন ব্যতীত আরাফার দিনের চেয়ে শয়তানকে অধিক অসহায় ও বিতাড়িত এবং সবচেয়ে বেশি অপমানিত ও রাগান্বিত আর অন্য কোন দিন দেখা যায় না। আর এর কারণ হলো, সে দয়াময় আল্লাহর রহমত নাযিল হওয়া দেখতে পারে এবং আল্লাহ তায়ালা থেকে বান্দাদের অধিক মাগফিরাত লাভ করা দেখতে পারে। বদরের দিনে শয়তান জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে ফেরেশতাদের নেতৃত্ব দিতে দেখেছিল। ( মুয়াত্তায়ে মালেক)

আরাফার দিনেই আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য নিয়ামত সম্পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন। উমর ইবনে খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত এক ইহুদি বললো, হে আমিরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে তেলাওয়াতের জন্য একটি আয়াত আছে। যদি আমাদের তথা ইহুদি জাতির উপর নাজিল হতো তাহলে সেদিনকে ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করতাম। আমিরুল মুমিনীন জিজ্ঞেস করলেন, কোন আয়াত? সে বলল, এই আয়াত- 'আজ আমি তোমাদের তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম আর তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম। আর দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করলাম।' (মায়েদা-৩) উমর রা. বললেন সেদিনের মর্যাদা এবং নবীজির উপর যে স্থানে এই আয়াত নাযিল হয়েছে তা আমরা ভালোভাবে জানি। শুক্রবারের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়েছিলেন আরাফার প্রান্তরে। (বুখারী ও মুসলিম)

আরাফার দিনের অনেক ফজিলত ও তাৎপর্য রয়েছে।

হয়রত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফার দিন অপেক্ষা অন্য কোন দিনে বেশি আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন না। আল্লাহর রহমত সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হয়। আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে ফখর করেন। এবং বলেন, তারা কী চায়? (মুসলিম শরীফ)

আরাফার দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন তাদের কষ্ট হটিয়ে দেন।

আনাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য যখন ঢলে যাচ্ছিল তখন নবীজি বেলালকে রা. বললেন, হে বেলাল লোকদেরকে চুপ থাকতে বলো।

বেলাল রা. দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোক সকল আপনারা চুপ থাকুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, হে সম্মানিত উপস্থিতি! একটু আগে জিবরাঈল আ. আমার কাছে এসে রবের পক্ষ থেকে সালাম জানিয়ে বললেন আল্লাহ তাআলা আপনার, আরাফার ময়দানে অবস্থানকারীদের এবং হজে অংশগ্রহণকারীদের মাফ করে দিয়েছেন।

উমর ইবনে খাত্তাব রা. দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ক্ষমা কি বিশেষভাবে আমাদের জন্য? নবীজি বললেন, না! এই ক্ষমা তোমাদের জন্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের পরবর্তী লোকদের জন্য । তখন ওমর রা. দোয়া করলেন, আল্লাহ তায়ালার রহমত ও বরকত অনন্ত ও অসীম হোক। এ হাদিসকে আলবানী র. সহিহ বলেছেন।

ইবনে মুবারক র. সুফিয়ান সাওরীকে র. আরাফার দিনে জিজ্ঞেস করলেন, আজকের এই সমাবেশে সবচেয়ে দুর্ভাগা কে? তিনি বললেন, যে এই ধারণা করে যে আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করেননি।

আরাফার দিনের রোজা পূর্বাপর দু বছরের ছগিরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়। আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,' আরাফার দিনের রোজা দু বছরের ছগিরা গুনাহ মিটিয়ে দেয়। '

সাহাবী রা. এদিনে বেশি বেশি তাহলীল,তাহমীদ ও তাসবীহ পাঠ করতেন। উমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম আমাদের মধ্যে কেউ 'আল্লাহু আকবার' 'আল্লাহু আকবার' আবার কেউ 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলতো।(মুসলিম)

আরাফার দিনে বেশি বেশি দোয়া করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন,' সবচেয়ে কল্যাণকর দোয়া হলো, আরাফার দিনের দোয়া। (তিরমিজি)

আরাফার ময়দান। পাক জমিন।পূণ্য ভূমি। হৃদয়ের স্পন্দন। আত্মার আবেদন। আরাফাতের দিন। ফজিলতের মারকাজ। রহমত ও বরকতের দীপাধার। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই স্থানের সম্মান এবং এই দিনের মর্যাদা অনুধাবনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ