শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


দুই তারকার মৃত্যু শোক প্রতিক্রিয়া; কী শিক্ষণীয়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক

১৮ অক্টোবর-২০১৮, একই দিনে ৮ ঘন্টার ব্যবধানে বাংলাদেশের দুই আদর্শের দুইজন তারকা ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। একজনের মৃত্যুতে মসজিদ-মাদরাসা-মক্তবের ছাত্র-শিক্ষক-আলেম কান্নাকাটি করে, জানাজায়ও লক্ষ লোক জমায়েত হয়েছে।

আরেকজনের মৃত্যুতে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক-সংস্কৃতিকর্মী কান্নাকাটি করেছে। মিডিয়াগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা লাইভ করেছে। প্রায় ৪ টা জানাজা হয়েছে।যেন দেশ একটা ঝাঁকুনি খেল। দুইজনের দুইরকম মৃত্যুশোক প্রতিক্রয়ায় কিছু শেখার আছে বলেই আজকের লেখা।

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির, সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজীর বাজার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান, ১৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট নগরের ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

মৃত্যুেকালে তিনি এক স্ত্রী, চার ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিস ও হাই প্রেশারসহ শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। মাওলানা হাবিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৪৯ সালে উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘনশ্যাম গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

তার হাতে দেশে হাজারো আলেম, হাফেজ মুফাসসির তৈরি হয়েছে। সারা দেশে তারা দ্বীনের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইসলামের প্রচার-প্রসারে তার অবদান অসামান্য।

কিন্ত আমার সম্মানিত পাঠক বলুন তো টিএসসি চত্তরে গিয়ে হাজারো তরুণ পাবেন, এক এক করে জিজ্ঞেস করুন তো, আপনি কি মাওলানা হাবিবুর রহমানকে চিনেন? বেশিরভাগ বলবে চিনি না, দুই একজন বলবে খবরে দেখেছি।

কেন এ দৈন্যতা, ভেবেছেন? মিডিয়াতো তার গুরুত্বই দিল না। আমি বলি না আমাদের মিডিয়া ইসলামি ব্যক্তিত্ববান্ধব নয়। তারা কি কার্পন্য করেছে? কি জানি, জানি না। বড় কথা হচ্ছে তার রাজনৈতিক পরিচয় আমার দরকার নাই, তিনি তো অনেক বড় মাপের আলেম ছিলেন, দেশের জন্য, জাতির জন্য সতত স্রষ্টার কাছে দোয়া করতেন। আর কোনো হাবিবুর রহমান পাওয়া যাবে? এটি অপুরণীয় ক্ষতি।

বাংলা সঙ্গীতজগতের অন্যতম ধ্রুবতারা আইয়ুব বাচ্চু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬২ সালের ১৬ অক্টোবর।

মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ১৯৭৮ সালে যোগ দেন ব্যান্ড ফিলিংসে। এরপর ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলসে গান গেয়েছেন তিনি।

১৯৯০ সালের পর থেকেই নিজের ব্যান্ড যাত্রা শুরু করে ‘লিটল রিভার ব্যান্ডস’, সংক্ষেপে ‘এলআরবি’। পরে হয়: ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’, এরপর তিনি হয়ে উঠতে থাকেন বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের এক ইতিহাস। ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনন্য উচ্চতায়।

এবার আসুন! কোন মাদরাসা মাঠে কোন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করুন, আইয়ুব বাচ্চুকে চিনে কিনা।বলবে চিনি।

সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে ‘শেকড়ের সন্ধানে’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠানে কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

সম্মানিত পাঠক, মৃত্যুর ২ দিন আগে তিনি কি গান গেয়েছেন দেখুন, অসম্ভব মিরাকল-

১. সবাইকে একা করে, চলে যাব অন্ধকারে...

২. ছেড়ে যাব আমি, হেরে যাবে তুমি...

১৮ অক্টোবর মগবাজারে নিজ বাসভবন থেকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হার্ট অ্যাটাকের কারণে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের এই মহা তারকার মৃত্যু হয়। বাংলা সঙ্গীতজগতের সুপারস্টার ইতিহাস হয়ে গেলেন।

তরুণ সমাজে তার মৃত্যুর ঝাঁকুনিটা অনেক বিশাল। এখানে অনেককে সমালোচনা করতে দেখা যায়, যা সঠিক কাজ নয়। ইউটিউবে দেখলাম, একজন বড় মুফতি সাহেব গত জুমায় সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে সমালোচনা জায়েজ নয়। আপনি তার কাছে ইসলামের সুমহান বাণীগুলো নিয়ে যান নাই, অথচ সমালোচনা করছেন কোন মুখে?

তরুণ সমাজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া তার জন্য যে কষ্ট পেয়েছে, প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবের জন্য কি পেয়েছে? পায় নি। কেন? ফাঁকটা কোথায়? এটা চিন্তা করার জন্যই সম্মানিত পাঠককে বলি।

নিজ দেশে পরবাসী হওয়া যে কত কষ্টের তা শুনেছিলাম ন্যাপ সভাপতি শতবর্ষী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কণ্ঠে। সম্ভবত ১৯৭৬ সাল। আমাদের স্কুল মাঠে তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমার খবর টিভিতে দেখানো হয় না, আমার চেহারা কি খারাপ? নিঃসন্দেহে অধ্যাপক মোজাফফর এর চেহারা অনেক সুন্দর ছিল।

মাওলানা হাবিবুর রহমানের চেহারাও খারাপ ছিল না। তাহলে প্রচার হয় না (২/১টি বাদে) কেন যে, আমরা একজন বড় মাপের আলেমে দ্বীন বা আল্লাহওয়ালাকে হারালাম!

টেলিভিশন টক শোতে দেখা যায় একজন মুফতি যুক্তি-তর্কে ৩ জনকে হারিয়ে দিয়েছেন (টেলিভিশন টক শো তে যাই বলে আমারও সামান্য অভিজ্ঞতা আছে), তিনি অনেক সময় অপজিট তো বটে, উপস্থাপকেরও টার্গেট এ থাকেন।

তার ইসলামের পক্ষে যথেষ্ঠ কথা বলার যোগ্যতাই কি তার অযোগ্যতা? আমার জানা নেই। পরে আর তাকে ডাকা হয় না। তার পরও বলতে হয়, আসলে অযোগ্যতা আমাদেরই। কারো দোষ দিয়ে লাভ নেই। এখান থেকে কারও শিক্ষা নেবার কিছু আছে কি?

হৃদয়ে প্রিন্সিপাল


সম্পর্কিত খবর