বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫ ।। ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৮ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
খেলাফত আন্দোলনের সাথে সমমনা ইসলামি দলসমূহের বৈঠক অনুষ্ঠিত কুরআনের মহব্বত থেকেই আমার রাজনীতিতে আসা: শায়খ নেছার আহমদ জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: আখতার হোসেন ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ নাশরুস সীরাহ’র সীরাত প্রতিযোগিতা, চলছে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়: তীব্র নিন্দা ধর্মীয় নেতাদের মহাসমাবেশে আসার পথে আহত কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে শায়খে চরমোনাই  ইবনে শাইখুল হাদিস এর আগমন উপলক্ষে শৈলকুপায় ব্যাপক প্রস্তুতি পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বেতুয়া হুজুরের বাড়িতে ইসলাহি মাহফিল

চীনের নানজিনে কাটানো স্মৃতিমধুর রমজান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন
গবেষক, নানজিন বিশ্ববিদ্যালয়, চীন

নানজিন চীনের পূর্ব-উপকূলে অবস্থিত জিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী। একটি প্রাচীন এবং বৃহত্তম শহর। অনেক বছর ধরে শহরটি চীনের রাজধানী ছিল। অত্যন্ত সাজানো গুছানো ও পরিপাটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এই শহরটিতে রয়েছে অনেক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। শহরটিকে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহরও বলা চলে।

এখানে অনেক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত, যার প্রত্যেকটি দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে আসে। এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম। এখানে সরকার অনুমদিত মসজিদ ছাড়া উন্মুক্ত কেনো জায়গায় নামাজ পড়া নিষেধ। তবে একাকী ঘরোয়া পরিবেশে নামাজ পড়া যায়।

উচ্চ শিক্ষার জন্যে নানজিনে আসা গত সেপ্টেম্বর মাসে। তাই এখানে রোজা রাখার এবং স্থানীয়দের ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো এ বছর। দুশ্চিন্তাও ছিল কিছুটা। ক্যাম্পাসের যে হোষ্টেলে আমরা থাকি সেখান থেকে মসজিদ অনেক দূরে। যে কারণে রমজানের শুরুর দুইদিন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হোস্টেলে নামাজ পড়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর সপ্তাহ খানেক বাসায় একাকী নামাজ পড়ছিলাম। কিন্তু মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না। বারবার দেশের কথা, রোজা-রমজানের স্মৃতি মনে পড়ছিল। পাচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদ ভর্তি মুসুল্লি, ইফতার, সাহরি, তারাবি, ইতেকাফ, ঈদ শপিং, দানসদকা, খতমে কুরঅনের এ মাসটা কত দ্রুত শেষ হয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না।

দিন যত যায় অস্বস্থি ও অস্থিরতা বাড়তে থাকে। উপায় খুঁজে পেতে স্থানীয়দের সাহায্য নিলাম। খুঁজে পেলাম জিঝুইন মসজিদ। আমাদের ক্যাম্পাস থেকে বাসে কিংবা ট্রেনে যেতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে যেতে। এশহরটিতে সরকার অনুমদিত যে তিনটি মসজিদ আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। সরকারই এসব মসজিদের ব্যয় বহন করে। আশ্চর্য হলাম জেনে। ভাবলাম ৯২ শতাংশ মুসলিম অধ্যুসিত দেশের মসজিদের অর্থাভাব ও ব্যবস্থাপনার কথা।

এ মসজিদটিতে মুসুল্লিদের জন্যে ফ্রি ইফতার এবং ডিনানের ব্যবস্থা আছে। তিনতলা মসজিদটির নিচতলা ডাইনিং রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যার পাশেই রয়েছে সুপরিসর রান্নাঘর। ইফতারির মিনিট পনের আগেই উপস্থিত হয় সবাই। ইমাম সাহেব কালেমা, বিভিন্ন সূরা এবং দুআ পড়াতে থাকেন। দুধ চিনি ছাড়া গ্রিন টি এদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়।

খেজুর, চা, তরমুজ এবং অন্যান্য ফল দ্বারা খুবই সংক্ষিপ্ত ইফতারি শেষে মাগরিবের নামাজ আদায় করেই সবাই আবার ডিনারের জন্য একত্রিত হয়। হরেক রকম সুস্বাদু চাইনিজ ডিস ছাড়াও ইন্ডিয়ান চিকেন কারি এবং পাকিস্তানি বিরিয়ানি পরিবেশিত হয়। প্রত্যেকদিন ১০০-১২০ জনের মতো মুসুল্লি অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাদের নব্বই শতাংশই চাইনিজ এবং বাকি দশ শতাংশ আমার মতো বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মুসলিম।

পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের জন্যে সমান সুযোগ ও ব্যবস্থা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। তবে তাদের অংশগ্রহণ খুব বেশি নয়। চীনের মতোএকটি দেশে এটি অবশ্যই একটা মিলন মেলা।

কিছুটা কষ্ট ভুলে উপভোগ করছি রোজা ও রমজান। পরিচিত হচ্ছি স্থানীয়সহ বিদেশীদের সাথে।

অন্য একটা বিষয় দৃষ্টি কেড়েছে, এশার নামাজের পূর্বে ইমাম সাহেব বিশেষ কিছু সুরা পাঠ করেন এবং উপস্থিত মুসুল্লিরাও তাকে অনুসরণ করেন। এতে তেলওয়াত শুদ্ধ হওয়া ছাড়াও ভুলে যাওয়া কিংবা নতুন কিছু সুরা শেখা হয় অনেকের।

এখানে বিশ রাকাত সুরা তারাবি এবং সবশেষে জামাআতে তিন রাকাত বিতর সালাত আদায় করা হয়। সম্মিলিত দুআ ও মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় প্রত্যেকদিনের সালাত।

কৌতুহল নিয়ে ঘুরে দেখলাম মসজিদটি। আবিস্কার করলাম একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন লাইব্রেরিসহএকটি হলরুম, যেখানে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আছে অজু ও গোসলের খুব সুন্দর ব্যবস্থা। মসজিদটির পাশেই কিছু হালাল শপ (দোকান) রয়েছে। সবধরণের খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় এখানে।

সাধারণত জুমার নামাজে এসে আমার মতো সবাই সপ্তাহের জন্যে প্রয়োজনীয় বাজার সেরে নেন। বিদেশীদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষক। দেখা হয় প্রায় সবার সাথে। গড়ে ওঠে জাতি, বর্ণ, দেশ, সংস্কৃতি ভুলে এক অন্য রকম সখ্যতা।

গত ১১ জুন ছাব্বিস রোজা শেষে রাতে বিশেষ এবাদত পালন করা হয়েছে। অন্যান্য মুসলিম দেশের মতোই ইমাম সাহেব ইশার সালাতের পূর্বে লাইলাতুল কদর এর গুরুত্ব নিয়ে বয়ানও করেছেন। মুসুল্লিরা সারারাত ধরে বিভিন্ন এবাদাত, তেলাওয়াত এবং জিকিরের মাধ্যমে রাত্রি অতিবাহিত করেন। মসজিদের পক্ষ থেকে সবার জন্য সাহরির আয়োজন করা হয় এদিন। আগামী শনিবার চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিতহবে, ইনশাআল্লাহ।

সকাল ৭.০০ জামাআতের সময় নির্ধারিত হয়েছে। নানজিনের তিনটি মসজিদে একই সময় ঈদের জামা’আত হবে। এদিন জুনিয়র স্কুল পাবলিক পরীক্ষা থাকায় সময় অনেকটা এগিয়ে আনা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর প্রতিবারের মতো এবারো নানজিনবাসীরা বিদেশীদের সাথে মিলেমিশে খুশীর ঈদ পালন করবে এবং মুসলিম ভাতৃত্বকে আরও গভীর করবে। এটাই সবার প্রত্যাশা।

জঙ্গিবাদ রুখতে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের যৌথ উদ্যোগ

এসএস


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ