শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


স্বীকৃতি বিষয়ে দেওবন্দের নীতি-আদর্শের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ahmad_safi_feniআওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও বেফাক সভাপতি শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি বহাল করে স্কুল কলেজসহ সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মহীনতা ও নাস্তিক্যবাদি ধ্যানধারণার শিক্ষা কায়েম করার পর কার্যতঃ এখন ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করা শিক্ষিত তরুণ আলেমদের প্রাপ্ত সনদের সরকারি মান থাকার একটা ন্যায্য অধিকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কওমি আলেমদের আদর্শচ্যুত করা, মাদরাসাসমূহের স্বাধীন শিক্ষাক্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং নানা বিভ্রান্তিকর প্ররোচণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানসমূহের আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিনষ্ট ও আলেমদের মধ্যে বিভক্তি আনার নানা তৎপরতা চলছে। আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতাকে যে কোন অপতৎপরতা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, দেশের আলেম সমাজের ঐক্যকে আরো জোরদার করার পাশাপাশি বিচক্ষণতার সাথে দেওবন্দী মসলক তথা নীতি-আদর্শে অটল অবিচল থাকাটাই বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ইচ্ছায় ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই সফল হবে না।

গতকাল ফেনী জেলার কওমি মাদরাসাসমূহের পরিচালক ও শিক্ষকদের নেতৃস্থানীয় ৩০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রশ্নে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর গৃহীত অবস্থানের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন থাকার কথা জানাতে এলে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কওমি মাদরাসার আভ্যন্তরিণ শৃঙ্খলা, শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের গভীর আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ বিনষ্টের মাধ্যমেও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে সতর্ক করে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, কতিপয় দরবরি আলেমের অপতৎপরতা আমরা লক্ষ্য করছি। এ সম্পর্কে কওমি শিক্ষক-ছাত্র সকলকেই সজাগ থাকতে হবে। তিনি বেফাক নিয়ে যে কোন ষড়যন্ত্র সম্পর্কেও হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, বেফাক কওমি মাদরাসাসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী সর্ববৃহৎ ও একমাত্র কেন্দ্রীয় বোর্ড। বেফাকের প্রতিনিধিত্ব দেশব্যাপী রয়েছে। বেফাক নিয়ে যে কোন অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রকারীরা জনগণের কাছে সঠিক ইসলামি শিক্ষার দুশমন বলেই চিহ্ণিত হবে। আলেম সমাজ ও কওমি মাদরাসা নিয়ে যে কোন চক্রান্ত প্রতিহত করতে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের পাশে থাকবে।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন মাওলানা আবুল কাসেম ভূঁইয়া (পরিচালক- পদুয়া কাসেমুল উলূম মাদ্রাসা), মাওলানা আফজালুর রহমান (সহকারী পরিচালক- শর্শদী মাদ্রাসা), মুফতী রহিমুল্লাহ কাসেমী (মুহাদ্দিস- লালপুল সুলতানিয়া মাদ্রাসা), মাওলানা সাঈদুর রহমান (পরিচালক- কৌশল্লা মাদ্রাসা), মাওলানা শিব্বির আহমদ (মুহাদ্দিস- ওলামা বাজার মাদ্রাসা), মাওলানা আবুল কাসেম (সহকারী পরিচালক- লালপোল সুলতানিয়া মাদ্রাসা), মাওলানা ইউসুফ (মুহাদ্দিস- ফুলগাজী আশরাফিয়া মাদ্রাসা), মাওলানা আবুল কাসেম (মুহাদ্দিস- মহিপাল হোসাইনিয়া মাদ্রাসা), মাওলানা হুসাইন আহমদ (পরিচালক- চকবস্তা এমদাদিয়া মাদ্রাসা), মাওলানা হুসাইন আহমদ উসমানী (সোনাগাজী মাদ্রাসা), মুফতী আবুল কাসেম (সহকারী পরিচালক- ঘাটঘর মুঈনুল উলূম মাদ্রাসা), মাওলানা নূরুল হুদা করীমপুরী (দাগনভূঁইয়া মাদ্রাসা), মাওলানা আব্দুল হাই (পরিচালক- মদীনাতুল উলূম পাঁচগাছিয়া ফেনী), মাওলানা আনোয়ার উল্লাহ, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আব্দুল হান্নান, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, মাওলানা শহীদুল্লাহ, মাওলানা ইকরাম, মাওলানা হারুন প্রমুখ।

কওমী মাদ্রাসার সনদের মান নির্ধারণী ইস্যুতে শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী’র অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন বেফাক সভাপতির প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ। এরপর ফেনী জেলা উলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি দলের পক্ষে মাওলানা আবুল কাসেম ভূঁইয়া ও মুফতী রহিমুল্লাহ কাসেমী কওমী সনদ ইস্যুতে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বর্তমান ও ভবিষ্যযে যে কোন সিদ্ধান্তে গভীর আস্থা ও সর্বাত্মক সর্মথনের কথা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, বেফাক সভাপতির অবস্থানের বাইরে ফেনী জেলার কওমি মাদ্রাসাসমূহ এককদমও পা রাখবেন না। তারা চলমান সনদ ইস্যুকে কওম ও মিল্লাতের বিরুদ্ধে সুগভীর ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসুদ একের পর এক বিতর্কিত ও ক্ষতিকর কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলেন, কওমি মাদরাসা পরিচালনার মুখ্য উদ্দেশ্য রেজায়ে মাওলা বা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। সনদ মূল লক্ষ্য নয়। স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেওবন্দের মতো সনদের মান পাওয়া গেলে ভাল। অন্যথায় নেসাবের ক্ষতি করে আমরা সনদের মান অর্জনের তোয়াক্কা করি না।

ফেনী জেলা ওলামায়ে কেরামের প্রতিনিধি দলকে উদ্দেশ্য করে বেফাক সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, গত ৩ অক্টোবর বেফাকসহ আঞ্চলিক কওমি মাদরাসা বোর্ডসমূহের প্রতিনিধিদের বৈঠকেও আমি স্পষ্ট করে বলেছি, কওমী মাদরাসাসমূহ দারুল উলূম দেওবন্দের উসূল তথা নীতি-আদর্শ মতে পরিচালিত হয়। সনদের ইস্যুসহ যে কোন বিষয়ে দেওবন্দের নীতি-আদর্শের পরিপন্থী কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ যেভাবে পরিচালতি হয়, সনদের মান নির্ধারণের বিষয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের নীতিমালা যেরকম, আমরা সেভাবেই চলতে চাই।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার সনদের সরকারি মান নির্ধারণ না থাকাটা এখনকার নতুন সমস্যা নয়। এটা বৃটিশ শাসনামল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি দিতে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদি সরকারের দিক থেকে অতি আগ্রহ প্রকাশ এবং কারো কারো দিক থেকে যেনতেনভাবে এই স্বীকৃতি গ্রহণে অতিউৎসাহী তৎপরতা গভীর ষড়যন্ত্রের সন্দেহ তৈরি করে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, বেফাকসহ কওমি নেতৃবৃন্দের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছাড়া সরকার একতরফা পছন্দ মতো কমিটি নির্ধারণ করে দিলে এবং সেই কমিটির ক্ষমতা শুধুমাত্র সুপারিশ বা প্রস্তাবনার মধ্যে সীমিত রাখলে, তাতে তো কওমি মাদরাসার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও স্বাধীন শিক্ষাক্রম পরিচালনার অধিকার শুরুতেই হরণ করা হয়ে গেল।

তিনি বলেন, কওমী মাদ্রাসা সরকারি অর্থে চলে না। আর্থিক ও নৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি নিজেদের সন্তানদের এসব মাদরাসার পড়াশোনা করানোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে জনগণই এসব মাদরাসা চালায়। যে কারণে এসব মাদরাসার নাম হয়েছে কওমি মাদরাসা। আর স্বাধীনভাবে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে পারা, এটা মৌলিক নাগরিক অধিকার।

আরো পড়ুন: সব ইসলামি শক্তি একত্রিত হলে কোনো অপশক্তিই আমাদের রুখতে পারবে না: অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ

কওমি সনদের স্বীকৃতি; একটি কোটি টাকার প্রশ্ন: মাওলানা মামুনুল হক

আরআর

 


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ