শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ভুল তথ্য বা সংবাদ প্রচারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

ইসলাম মুসলিমদের মধ্যে উপকারী ও ফলপ্রসু আলোচনাকে উৎসাহিত করে। এটি এমন একটি পরিবেশের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে, যেখানে লোকেরা একসাথে বসে তাদের মেধা খাটিয়ে সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল নিয়ে আলোচনা করবে। সুতরাং ইসলাম অপরের জন্য অমঙ্গলজনক কোনো আলোচনা কিংবা সমালোচনাকে প্রশ্রয় দেয় না। আর ভুল তথ্য প্রচার করা এরকম আলোচনা-সমালোচনারই একটি অংশ।

ভুল তথ্য বা মিথ্যা সংবাদ প্রচারকে ইসলাম সর্বদাই ঘৃণার চোখে দেখে। যারা কুআন-হাদীস অধ্যয়ন করেন, তারা সহজেই বুঝতে পারবেন যে, ভুল তথ্য প্রচার ইসলামে কতোটা ঘৃণিত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, হে ইমানদারগণ! যদি কোনো ফাসিক (মিথ্যুক বা দুষ্ট প্রকৃতির লোক) তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তোমরা তা যাচাই করো। অন্যথায় হতে পারে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো লোকের ক্ষতি সাধন করবে। এবং পরবর্তীতে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে লজ্জিত হতে হবে। আল-কুরআন ৪৯:৬।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা সংবাদ প্রচারের সমস্যা ও এর সমাধান উল্লেখ করেছেন। কোনো ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসলে, তা বিশ^াস করার আগে সেই ব্যক্তির স্বভাব বা প্রকৃতি যাচাই করতে হবে, দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি মিথ্যাবাদী কিনা। কেননা মিথ্যাই হচ্ছে সকল গুজবের মূল। তাই এহেন কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো সংবাদ আসলে তা নিজে বিশ^াস করা ও অন্যের কাছে তা প্রচার করার পূর্বে তা যাচাই করতে হবে। কারণ, যাচাই না করে কোনো মিথ্যুকের আনীত কোনো সংবাদ বিশ^াস করে তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গের জন্য পরিতাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

অনেকে ভুল তথ্য প্রচার করাকে মিথ্যা মনে করে না; অনেকক্ষেত্রে তারা এটিকে নিছক হাসি-ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দেয়। আর তাই তারা ভুল তথ্য প্রচারকে নিজেদের জন্য অনুমতিযোগ্য বলে ধরে নেয়। অথচ নবীজী সা. বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে বলবো যে, কোনটি সবচেয়ে লজ্জাজনক মিথ্যা? তা হলো, লোকদের মাঝে ভুল তথ্য প্রচার করা। মুসলিম।

সুতরাং ভুল তথ্য প্রচার করা হালকা কিছু নয়; বরং আল্লাহর রাসুল সা. এটিকে সবচেয়ে লজ্জাজনক মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তদুপরি যারা ভুল তথ্য প্রচার করে, তারা এটিকে কোনো মিথ্যাই মনে করে না; বরং তারা সাহসের সাথে এটি প্রচার করে থাকে। সুতরাং একজন মুসলমানকে সংবাদ বা খবরের যথার্থতা যাচাই করতে হবে ও যাচাই করতে জানতে হবে।

ভুল তথ্য প্রচারের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য তোমাদের মায়ের অবাধ্য হওয়া, তোমাদের কন্যাসন্তানদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া, অন্যের অধিকার হরণ করা এবং ভিক্ষা করাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আর তিনি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, খুব বেশি প্রশ্ন করা ও অর্থ অপচয় করাকে তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন। বুখারী।

উপরোক্ত হাদীসে নবীজী সা. বলেছেন, মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা আল্লাহ তায়ালার অপছন্দনীয় কাজসমূহের একটি। উক্ত হাদীস থেকে আরো বোঝা যায়, নিজের মায়ের বাধ্যগত থাকা যতোটা জরুরী, ভুল বা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকাও ততোটা জরুরী।

যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে, হতে পারে এটি তার কাছে নিছকই একটি মিথ্যা; কিন্তু এ মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সমাজে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে তা নি:সন্দেহে অনেক গুরুতর। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, যখন এটা তোমরা মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে আর তোমাদের মুখ দিয়ে এমন কথা বলছিলে যে বিষয়ে তোমাদের কোনো জ্ঞান ছিলো না, আর তোমরা এটাকে নগণ্য ব্যাপার মনে করেছিলে; অথচ আল্লাহর নিকট তা ছিলো গুরুতর ব্যাপার। সূরা নূর: আয়াত ১৫।

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোকে গুরুতর ব্যাপার বলেছেন। যদিও আমরা নিজেদের দূরদর্শীতার অভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের ভয়াবহতাকে অনুধাবন করতে পারি না; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অগাধ দূরদর্শী, তিনি ভবিষ্যতের সবকিছু জানেন, তাই তিনি মিথ্যা সংবাদ প্রচারের ব্যাপারটিকে গুরুতর ও ভয়াবহ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকার উপায় সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে উঠে, তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার জিহ্বাকে সম্বোধন করে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো; কেননা আমরা তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন। তুমি যদি সঠিক থাকো, আমরাও সঠিক থাকতে পারবো। আর তুমি যদি বিপথে যাও,আমরা বিপথে চলে যাবো। তিরমিযী।

এই হাদীস থেকে বোঝা গেলো, মিথ্যা সংবাদ প্রচারের মূল হাতিয়ার হলো মানুষের জিহ্বা। যদি কোনো ব্যক্তি তার জিহ্বাকে সকল মিথ্যা থেকে হেফাজত করে, তাহলে তার পক্ষে ভুল তথ্য প্রচার করা সম্ভব হবে না। মিথ্যা প্রচারকে প্রতিহত করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো, মিথ্যুকদের সঙ্গ পরিহার করা। সুতরাং নিজের জিহ্বাকে মিথ্যা থেকে হেফাজত করা, মিথ্যুকদের সঙ্গ পরিহার করা ও সর্বোপরি কোনো সংবাদ প্রচারের আগে তা যাচাই করার মাধ্যমে সমাজ থেকে ভুল তথ্য প্রচার ও গুজব নির্মূল করা সম্ভব।

-এটি


সম্পর্কিত খবর