শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


একজন হানিফ জালান্ধরি ও পাকিস্তান বেফাকের অগ্রযাত্রা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামি শিক্ষাবোর্ড। ১০ হাজারেরও বেশি মাদরাসা এবং প্রায় আট হাজার ইকরা স্কুল এই বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত। এটি দেওবন্দের চিন্তাধারায় পরিচালিত। মাওলানা ড. আব্দুর রাজ্জাক ইস্কান্দার বোর্ডটির সভাপতি। আর মহাসচিব মাওলানা হানিফ জালান্ধরি। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের প্রধান কার্যালয় মুলতানে অবস্থিত।

১৯৯৮ সালের ২ মার্চ মাত্র ৩৭ বছর বয়সে হানিফ জালান্ধরি বেফাকের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত ২২ বছর যাবত তিনি পাকিস্তান বেফাকের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাকিস্তান বেফাকের উন্নতি-অগ্রগতির পেছনে মূল কারিগর হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হয়।

হানিফ জালান্ধরি পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট স্কলার। মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৮১ সালে তিনি জামেয়া খায়ের-উল-মাদারিস মুলতানের তৃতীয় মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) নির্বাচিত হন। ২০১৩-২০১৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কুরআনের হাফেজ তৈরি করায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কুরআন মেমোরিজেশন’ বা ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ’ থেকে তাঁকে দেওয়া হয় কুরআন ম্যাডেল।

পাকিস্তান বেফাকের সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পর হানিফ জালান্ধরি বেফাককে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। তিনি বেফাকের দায়িত্ব পাওয়ার পর বেফাকের সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। শিক্ষা কারিকুলাম, বেফাকের পঠন-পাঠন পদ্ধতি ও পড়ালেখার মান বাড়তে থাকে। পাকিস্তান বেফাকের উন্নতি ও অগ্রগতির পেছনে ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে সবচেয়ে পরিচিত নাম মাওলানা হানিফ জালান্ধরি। আর এ কারণেই গত ২২ বছর ধরে তাঁকে বাদ দিয়ে বিকল্প নেতৃত্বের কথা ভাবেনি পাকিস্তান বেফাক।

পাকিস্তানের বেফাক বোর্ড সরকারি বোর্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১০ সালে। মাওলানা হানিফ জালান্ধরির নেতৃত্বে এই স্বীকৃতি লাভ করে বোর্ডটি। বাংলাদেশ বেফাক নিজের নামে স্বীকৃতি না পেলেও ২০১৭ সালে আল-হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ নামে সম্মিলিত বোর্ডের অধীনে স্বীকৃতি পায়। পাকিস্তান বেফাকে স্বীকৃতির এতো বছরেও কোনো প্রশ্নফাঁস, রেজাল্ট বাণিজ্য কিংবা নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু হাইয়্যার অধীনে গত বছরের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের মতো নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া সম্প্রতি বেফাকে নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।

পাকিস্তান বেফাককে এগিয়ে নেয়ার পেছনে যদি মাওলানা হানিফ জালান্ধরির নাম নেয়া হয় তাহলে বাংলাদেশ বেফাকও মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী রহ.-এর মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ মহাসচিব পেয়েছিল। ২০১৬ সালে তার ইন্তেকালের পর মাওলানা আবদুল কুদ্দুস গত চার বছর ধরে বেফাকের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে ঢাকার একটি বড় মাদরাসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে তিনি পুরো সময়টি বেফাককে দিতে পারেননি। ফলে মাওলানা আবদুল জব্বারের মতো একজন নিবেদিতপ্রাণ মহাসচিবের প্রয়োজন অনুভব করছে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বেফাক।

বর্তমান মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস পদত্যাগ করতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ৩ অক্টোবর বেফাকের মজলিসে আমেলার বৈঠকে সভাপতির পাশাপাশি মহাসচিব পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। সবার প্রত্যাশা, বেফাকের মূল চালিকাশক্তি মহাসচিব পদে পাকিস্তানের মাওলানা হানিফ জালান্ধরির মতো কেউ আসুক, যিনি দীর্ঘদিন বেফাককে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারবেন।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ