শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


ডায়াবেটিস রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

তাকওয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে রমজানে রোজা রাখা আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মু'মিনদের জন্য একটি ফরজ বিধান। সূরা বাকারার ৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।

ডায়াবেটিস নিয়ে রোজ রাখা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সারা বিশ্বের অসংখ্য মুসলমান এই রোগ নিয়েই সিয়াম সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের চেয়ে ডাক্তারের পরামর্শকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

যদি কোনো রোগী দিনে দুই বা ততোধিক বার ইনসুলিন নেয় কিংবা লিভার ও কিডনি জটিলতায় ভোগে, তাহলে তার জন্য রোজা না রাখাই শ্রেয়। এমনকি রোজা রাখায় যদি স্বাস্থ্যঝুঁকি কমও থাকে, তবুও রোজা রাখা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। কেননা রোজাবস্থায় ঔষধ সেবনবিধি পরিবর্তন হতে পারে।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্য ভালো, যদি তোমরা জানতে। সূরা বাকারা: ১৮৪

ডায়াবেটিস নিয়ে রোজা রাখতে চান যারা

ডায়াবেটিস নিয়েও যারা রোজা রাখতে চান, তাদের ইফতার ও সাহরিতে সুষম খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তা না হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া কিংবা কমে যাওয়া ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি থেকে যাবে। সুতরাং সাহরি ও ইফতারে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়।

অনেকসময় দেখা যায়, ডায়াবেটিস রোগীরা সাহরিতে শর্করা জাতীয় খাবার এড়িয়ে যান যার ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে পারে। তাই সাহরি ও ইফতারে অল্প পরিমাণে হলেও শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়াও শরীরে আঁশীয় খাবারের ঘাটতি পূরণের জন্য ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া আবশ্যক। কেননা আঁশ জাতীয় খাবার রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতাকে প্রতিরোধ করে। এক্ষেত্রে চর্বি জাতীয় খাবারও বেশ উপকারী, কারণ চর্বি হজম প্রক্রিয়াকে মন্থর করতে সহায়তা করে।

রক্তে গ্লুকোজের স্বল্পতা প্রতিরোধ করতে যা যা খাওয়া উচিত

ভুষিযুক্ত আটার রুটি। বাদামি চালের ভাত অথবা বাসমতি চালের ভাত্। ফলমূল ও শাকসবজি। স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন- জলপাই অথবা জলপাই তেল, বাদাম, বীজ জাতীয় খাবার, আভাকাডো ইত্যাদি।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলার পরও ইফতারের পর ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে দেখতে হবে, চিনি ছাড়া আর কোন কোন খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করছে।

মনে রাখতে হবে, অধিক পরিমাণে ফলমূল ও শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চললেও রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দুগ্ধজাত খাবারও এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।

গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয়

একসাথে দুটির বেশি রুটি খাওয়া যাবে না। একসাথে ৩০ - ৬০ গ্রামের অধিক খাদ্যশস্য গ্রহণ করা যাবে না। একই সময়ে ২০০ মি.লি. এর বেশি দুধ পান করা যাবে না। একসাথে ৮০ গ্রামের অধিক ফলমূল খাওয়া যাবে না। গ্রহণে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এরকম চিনিযুক্ত খাদ্য ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

পানিশূন্যতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অন্যান্য রোগীদের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেশি। বার বার প্রস্রাবের ফলে কিডনিতে পানির পরিমাণ কমে যায়। তাই এক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

পানিশূন্যতা এড়াতে করণীয়

ইফতার ও সাহরিতে যতদূর সম্ভব পানি পান করা। চা ও কফি পান কমাতে হবে। কেননা এ দুটি পানিস্বল্পতাকে ত্বরান্বিত করে। লাচ্ছি, জুস ও সেভেন আপ জাতীয় মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি তুলনামূলক বেশি খেতে হবে। কেননা এগুলো পানির শূন্যতা পূরণে সাহায্য করে।

রোজা পালন করা যেমন ইসলামের নির্দেশ, তেমনি স্বাস্থ্যসচেতনতাও। ইসলাম মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন হতে বলেছে। সুতরাং গুরুতর স্বাস্থ্যজটিলতার ক্ষেত্রে ইসলামের দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। অন্যথার অতিউৎসাহ ভবিষ্যতে বড়সড় স্বাস্থ্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

মুসলিম ইংক থেকে অনুদিত।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর