শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৬ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
আগুনে জ্বলছে সুদান, নীরব পৃথিবীর বিবেকহীনতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদে যেতে চাই: মাওলানা আব্দুল মালিক জনগণকে বোকা বানাবেন না, জামায়াতকে বললেন ফখরুল সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর: ইসি আনোরুল জুলাই সনদের দরকার নেই, গণতন্ত্র বাস্তবায়নে একটি সংসদ প্রয়োজন: মেজর (অব.) হাফিজ জামায়াতে যোগ দিয়ে আ.লীগ নেতা বললেন- ‘এখন থেকে আল্লাহর রাস্তায় চলতে চাই’ মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির ২টি বই প্রি-অর্ডার করলে বিশেষ ছাড়!  ‘আমি সব ধর্মের উপদেষ্টা, মন্দির-প্যাগোডায় যাওয়া আমার দায়িত্বের অংশ’ ‘হুজুররা শুধু ওয়াজ করে, এমন ধারণার পরিবর্তন আনতে হবে’ জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার ১ বাংলাদেশি

চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল অবদান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসাবিজ্ঞান মানবসভ্যতার প্রাচীনতম ও গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোর একটি। ইতিহাসের পাতায় চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাথমিক সূত্রপাত ঘটে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনে। ইসলামি ইতিহাসে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিকাশ ও বিকাশমান চর্চায় মুসলমানদের অবদান এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।

সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য ঝাড়ফুঁক, গাছগাছড়া, ও প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করে। কালের পরিক্রমায় নবী ইদরিস (আ.)-এর মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্র একটি কাঠামোবদ্ধ রূপ লাভ করে। ঐতিহাসিক আল কিফতি তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) চিকিৎসাশাস্ত্রে এনে দেন নবজাগরণ। হাদিস শরিফে সংরক্ষিত আছে চিকিৎসা বিষয়ক বহু নির্দেশনা, যা ‘তিব্বুন নববি’ নামে পরিচিত। তিনি হাজামা, মুখ ও নাক দিয়ে ওষুধ প্রয়োগ, শরীরের পেট পরিষ্কার করার ব্যবস্থা ও রক্তমোক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা করেছেন। ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে রয়েছে কালিজিরা, মধু, খেজুর, সামুদ্রিক কুন্তা ও উটের দুধ।

নবী (সা.)-এর সময়ে অস্থায়ী হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, যেখানে সাহাবারা আহতদের সেবা করতেন। পরে খলিফাদের আমলে চিকিৎসাব্যবস্থায় আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন। মিসরের গভর্নর আমর ইবনুল আস (রা.)-এর চিকিৎসা উপদেষ্টা ইয়াহইয়া আন-নাহবি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অমূল্য অবদান রাখেন। উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসনামলে গ্রীক চিকিৎসাগ্রন্থগুলো অনুবাদ ও গবেষণার মাধ্যমে মুসলমান চিকিৎসাবিদরা চিকিৎসাশাস্ত্রকে বিজ্ঞানভিত্তিক রূপ দেন।

বিশেষ করে খলিফা আব্দুল মালিক, আল মামুন ও মুতাসিম চিকিৎসা ক্ষেত্রে গবেষণা ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। নবম শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ।

বিশ্বখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিদদের মধ্যে ইবনে সিনা (আভিসিনা) ছিলেন সর্বাধিক প্রভাবশালী। তার লেখা আল-কানুন ফিত তিব্ব ইউরোপের চিকিৎসাবিদ্যার ‘বাইবেল’ হিসেবে স্বীকৃত। পাঁচ খণ্ডের এই বিশ্বকোষে চিকিৎসার ইতিহাস, রোগ-নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আরেক বরেণ্য চিকিৎসক ছিলেন আর-রাজি (৮৬২–৯২৫)। তিনি চিকিৎসার নানা শাখায় ২০০টির বেশি বই লিখেছেন, যার মধ্যে আল-হাবি অন্যতম। এটি ২০ খণ্ডের বিশাল চিকিৎসা বিশ্বকোষ, যা ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যবই ছিল দীর্ঘকাল।

এ ছাড়া আলি আত-তাবারি, জাহরাবি, হুনাইন ইবনে ইসহাক, আলবেরুনি, ইবনে রুশদ, আলি আল-মাওসুলি প্রমুখ চিকিৎসাশাস্ত্রে অভাবনীয় অবদান রেখেছেন। চোখের ছানি অপারেশনের ক্ষেত্রে আলি আল-মাওসুলি প্রথম সফল অস্ত্রোপচারের পথপ্রদর্শক হিসেবে খ্যাত।

কিন্তু চতুর্দশ শতাব্দীতে মুসলিম সাম্রাজ্যের পতনের পর চিকিৎসাশাস্ত্রসহ সব কিছুর ওপর মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ কমে যায়। মোঙ্গলদের আক্রমণে ধ্বংস হয় লাইব্রেরি ও পাণ্ডুলিপি। বহু তাত্ত্বিক জ্ঞান ইউরোপীয়রা চুরি করে নিজেদের নামে চালায়।

মুসলমানদের এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে। চিকিৎসাশাস্ত্রে অতীতের সেই বৈজ্ঞানিক ধারা আবার ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন ঐতিহ্য চর্চা, গবেষণার পুনর্জাগরণ ও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা-ব্যবস্থার উন্নয়ন।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ