গতকাল বুধবার ২২ অক্টোবর ২০২৫ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর ও সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান যৌথ বিবৃতিতে দেশজুড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ড, নারী ও শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ জন নিরাপত্তাহীনতা জনিত সাম্প্রতিক এসব ঘটনার প্রতি গভীর শোক, ক্ষোভ ও তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা গোটা জাতিকে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট ও সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ আগুন, চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকার পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, গাজীপুরে ১৩ বছরের মাদরাসাছাত্রীকে হিন্দু যুবক জয় কুমার দাস কর্তৃক ধর্ষণ, বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. জোবায়েদ হোসাইনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলো রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধের ভয়াবহ অবক্ষয়ের দিকটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, রাজধানীর মতো নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসাইনকে টিউশনে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা করা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যদি এমনভাবে একজন শিক্ষার্থী খুন হন এবং প্রশাসন নির্বিকার থাকে, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন কতটা অনিরাপদ তা সহজেই অনুমান করা যায়। স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
গাজীপুরের ১৩ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে “প্রেমের সম্পর্ক” বলে উল্লেখ করাকে তাঁরা আইনের প্রতি চরম অবমাননা ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব হিসেবে আখ্যা দেন। “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)” অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলেই তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে, তার সম্মতি থাকলেও। সুতরাং পুলিশের এ বক্তব্য আইনবিরুদ্ধ ও অপরাধপ্রবণ মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেয়। ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ দাবি করছে উক্ত পোস্ট অবিলম্বে প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এই ঘটনায় জড়িত তিন অভিযুক্তের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া রাজধানীর সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চে এবং চট্টগ্রাম ইপিজেডের পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে নেতৃদ্বয় বলেন, প্রতিটি ঘটনায় প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সঠিক তদারকি এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো জরুরি হয়ে পড়েছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব নাগরিকের জীবন, সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষা করা; কিন্তু একের পর এক এসব ঘটনা প্রমাণ করছে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব আজ ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়েছে। দেশব্যাপী অগ্নি-নিরাপত্তা জোরদার করা, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এনএইচ/