মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
জামায়াতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ময়মনসিংহে ইসলামি বইমেলা শুরু ১৩ নভেম্বর ভারতের পুনে দুর্গে নামাজ আদায় করা নিয়ে দেশভর তোলপাড় ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: শায়খে চরমোনাই কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ' নামের পত্রিকা : স্বাধীনতার ৩৩ বছর আগের এক ঐতিহাসিক দলিল ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিল হওয়ার খবরটি ভুল : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নাতির কাছে কায়দা শিখছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর জামায়াত সেক্রেটারি পরওয়ারের বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ: এনসিপি ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস এ৩৩০ সম্পন্ন হলো আবু ত্বহা ও সাবিকুন নাহারের তালাক

জামায়াত সেক্রেটারি পরওয়ারের বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ: এনসিপি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) উদ্দেশ্য করে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এনসিপি। দলটির নেতারা বলেছেন, গোলাম পরওয়ার ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বক্তব্য দিয়েছেন এবং সেটিকে তাঁরা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব জোবায়ের অবশ্য বলেছেন, গোলাম পরওয়ার ‘বাই দা বাই’ কিছু কথা বলেছেন, তবে তিনি কোনো দল বা ব্যক্তির নাম নেননি।

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামী ও তৎকালীন সমন্বয়কদের মধ্যে বরাবরই সুসম্পর্ক দেখা গেছে। এমনকি সেই সমন্বয়কদের মধ্য থেকে কয়েকজন পরবর্তীতে শিবির নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভও করেছেন।

এছাড়া শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের অনেকের বিরুদ্ধেই ‘জামায়াত বা শিবিরের ঘনিষ্ঠ’ থাকার অভিযোগ ছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এনসিপি দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর দুই দলের মধ্যেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। এনসিপি নেতারা বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন সময় সমালোচনামূলক বক্তব্য দিলেও জামায়াতের বিষয়ে তেমন নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। এমনকি এনসিপি গঠনের আগেই আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের “অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে জামায়াতের কাফফারা হয়ে গেছে” বক্তব্যটি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

সম্প্রতি সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের জন্য আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতির ভোট নিয়ে জামায়াত ও এনসিপি উভয় দলই অবস্থান নিয়েছিল। তবে নাহিদ ইসলামের এক ফেসবুক পোস্টের পর দুই দলের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দেয়।

রোববার নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে লেখেন, ‘জামায়াতে ইসলামী পিআর পদ্ধতি নিয়ে যে তথাকথিত আন্দোলন শুরু করেছিল, আসলে সেটি ছিল এক সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা।’ তিনি আরও লেখেন, ‘সেই আন্দোলন পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছিল ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়া ও জাতীয় আলোচনাকে গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র ও সংবিধান পুনর্গঠনের আসল প্রশ্ন থেকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই।’

নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোনো দলের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা উচিত।

এরপর সাতক্ষীরায় দলীয় এক সমাবেশে গোলাম পরওয়ারের দেওয়া বক্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘একটা দল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছে, আমরা সংস্কার, অংশীদারিত্বের রাজনীতি, দেশগঠন, অভ্যুত্থানে কোনো ভূমিকা রাখিনি। আরে বাবা, তোমরা নতুন ছাত্রদের দল, রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আরও বহুদূর যেতে হবে। জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিও না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওনারা চান আমরা ওনাদের একটু সমালোচনা করি। কেউ তো ওনাদের নাম নেয় না। জামায়াতের মতো বড় দল যদি ওনাদের নাম মুখে নেয়, তাহলে ওনারা খুশি হন। আমরা আপনাদের এতটা আমলে নেই না। জামায়াতের রাজনৈতিক পরিপক্বতা বোঝার জন্য আপনাদের আরও অনেক পথ যেতে হবে।’

রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করেন, গোলাম পরওয়ারের এই বক্তব্য দুই দলের সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে একপক্ষ আরেকপক্ষকে ব্যাশিং করে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে থাকে। তবে এনসিপিকে নিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি শুধু অসৌজন্যমূলক নয়, রাজনৈতিক ঔদ্ধত্যপূর্ণও বটে। ওনারা সিনিয়র রাজনীতিবিদ, বয়সে আমাদের বাবা–দাদাদের বয়সী। ওনাদের কাছ থেকে এই ধরনের বক্তব্য আমরা প্রত্যাশা করি না।’

দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, গোলাম পরওয়ার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক সৌজন্যকে আরও এক ধাপ পিছিয়েছে। রাজনীতিতে কারও ‘বাপ’ হতে চাওয়া এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা। গণঅভ্যুত্থানই সবার ‘বাপ’। কারণ এনসিপির জন্ম অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে। এখনকার সব রাজনৈতিক দলের উৎস সেই অভ্যুত্থান। তখন বৈষম্যবিরোধীরা যে কর্মসূচি দিয়েছিল, সবাই সেটির প্রতি সংহতি জানিয়েছিল। বিপদের সময় অন্যের নেতৃত্বে কাজ করে, বিপদ কেটে গেলে সেই নেতার ওপরে নিজের নেতৃত্ব দাবি করা রাজনৈতিক বালখিল্যতা বা অসদাচরণ।’

অন্যদিকে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের সেক্রেটারি জেনারেল যে কথা বলেছেন, সেটি স্নেহের অবস্থান থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। তিনি কারও নাম বলেননি। আমরা সবাই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোদ্ধা, দেশ গঠনেও একযোগে কাজ করছি। এর বাইরে কিছু নয়।’

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ