ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ দেশের স্বার্থে কোনো কাজ করে নাই। তাদের করা প্রত্যেকটা বৈদেশিক চুক্তি ও বিনিয়োগ চুক্তির পেছনে ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল। তাই পতিত সরকারের শুরু করা কোনো চুক্তিই বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজশাহীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশনের কাজ ডিপি ওয়ার্ল্ড এর হাতে ছেড়ে দেওয়ার যে উদ্যোগ পতিত সরকার নিয়েছিলো তা বাতিল করতে হবে। একই সাথে চট্রগ্রাম বন্দরের মতো ভূরাজনৈতিক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর পরিচালনায় বিদেশিদের অর্ন্তভুক্ত করা সমীচিন হবে না। বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দেশীয় সংস্থাগুলোকে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলার প্রতি নজর দিন।
জুলাই গণহত্যার দ্রুত বিচার, ইসলাম ও ধর্মবিরোধী নারী সংস্কার কমিশন বাতিল, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সংখ্যানুপাতিক (পি.আর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, ভারত ও ফিলিস্তিনে মুসলমানদের উপর বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধকরণ এবং বাংলাদেশকে একটি ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা হোসাইন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এই গণসমাবেশ।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগাতার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এখন তারা বছরের পর বছর ধরে ভারতে থাকা মানুষদের ধরে ধরে ‘পুশ আপ’এর মতো অমানবিক ও কুটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভুত কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর শক্ত প্রতিবাদ হতে হবে। এবং এই পুশআপ বন্ধ করতে হবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর বলেন, আপনারা অভ্যুত্থানের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ফলে ভারতের দেশ বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় যা করার তাই করুন। জনতা আপনাদের সাথে আছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর জুলাই গণহত্যার বিচার দ্রুততার সাথে করে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনার আহবান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন বিচারিক প্রক্রিয়ায় দল হিসেবেই তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। এবং ভবিষ্যতে দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ও মৌলিক সংস্কার শেষেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, জাতি অনেক দল, অনেক নেতা ও নীতির শাসন দেখেছে। কিন্তু ইসলামের শাসন দেখে নাই। এ কারণেই স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পরেও দেশে কাংখিত সমৃদ্ধি, সুশাসন ও মুক্তি আসে নাই। এবার সুযোগ এসেছে ইসলামকে ক্ষমতায় এনে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মান করার। তাই আগামী নির্বাচনে ইসলামী শক্তিকে ভোট দিন।
ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা দেশের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং সরাসরি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। অতিশীগ্র ধর্মবিরোধী এই নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা বাতিল করতে হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দেশে অনেক নেতার পরিবর্তন হয়েছে, অনেক দলের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এদেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই আগামীতে যাতে কেউ স্বৈরাচার হতে না পারে সেই পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারকে আহবান জানাই।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে একটি ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে আসুন আমরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ছায়াতলে এসে আগামী জাতীয় নির্বাচনে হাতপাখা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশকে আদর্শ ও কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলি।
সমাবেশে বিশেষ আলোচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ নুরুন নাবী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও সমাজ সেবক হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান দিদারী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রাজশাহী জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুরশিদ আলম ফারুকী, ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা সভাপতি হাফেজ শফিকুল ইসলাম, মহানগর সভাপতি এইচ.এম আবুল হাসান, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা সভাপতি মুহাঃ নয়ন ইসলাম, মহানগর সভাপতি মুহাঃ হাসিবুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ, জেলা সভাপতি মুহাঃ আবুল বাশার, মহানগর সভাপতি হাফেজ আব্দুল মোমিনসহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এমএইচ/