মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ৪ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৫ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
শেখ হাসিনার মামলায় ট্রাইব্যুনালে ১২ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন অধ্যাদেশ কিংবা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে : বুলবুল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা আর অর্জনের মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে: জমিয়ত মহাসচিব দেশকে এগিয়ে নিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘নতুন প্রস্তাব’ পেল হামাস ‘ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অগ্রযাত্রা টেকসই করতে শরিয়াহ অডিটর তৈরি করা জরুরি’ ভারতের ছয়টি বিমান ভূপাতিত করার ভিডিও আছে: পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আলেমদের মধ্যে মূল উৎস থেকে গবেষণার আগ্রহ কম’ আ. লীগ আমলের প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: রিজভী ঢাকা-৮ আসন নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন রিকশা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা ফয়সাল

হজরত উমর রা. সম্পর্কে শফিকুল ইসলাম মাসুদের ‘জঘন্য মিথ্যাচার’


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

|| আরজু আহমদ ||

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি। 
তাঁর একটা বক্তব্য দেখলাম, তিনি বলছেন, 'ইসলাম গ্রহণ করার আগে উমর রা. কী ছিল? সবচেয়ে জঘন্য মানুষ ছিল, পশু ছিল'। 

তিনি সেই জঘন্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে উমর রা.কে প্রকারান্তরে স্বভাবজাত ডাকাত ও ধর্ষক প্রতীয়মান করছেন। যেন তার কাছ থেকে কোনও নারীর রেহাই ছিল না। 

সে বলছে- তাই এক নারী যখন তাকে দেখলো সে থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে। নিজের ইজ্জত বাঁচাতে গহনাদি দিয়ে নিস্তার পেতে চাইছে। 

এই বানানো কিচ্ছাকে এই জামাত নেতা উমর রা. এঁর ইসলাম গ্রহণের 'কিছুক্ষণ পরের' ঘটনা হিসেবে অভহিত করছে। 

অথচ ইসলাম গ্রহণের পর উমর রা. সাহাবিদের নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে কা'বার দিকে রওনা দেন। রাসুল সা.কে সামনে রেখে দুই ভাগে সাহাবাগণ বিভক্ত ছিলেন। এক ভাগের সম্মুখে ছিলেন উমর রা. অপরভাগে হামযা রা.।

প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা ও কা'বা প্রান্তরে সত্যের এই উন্মোচনের জন্য উমর রা.কে রাসুল সা. আল ফারুক হিসেবে উপাধি দেন। 

উমর রা. ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইসলামের প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন ছিলেন এটা সত্যি। কিন্তু তিনি ছিলেন আরবদের মধ্যে সম্মানিত। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

এই বয়সেই তিনি কুরাইশদের দূত ছিলেন। গোত্রে গোত্রে বিরোধের মীমাংসায় বিচারক ছিলেন। আরবদের মধ্যে এই সম্মান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কারণ তিনি ছিলেন অন্যদের থেকে আলাদা। 

আরবদের যে সামাজিক অবক্ষয় ছিল তা থেকে তিনি দূরে থাকতেন। ইতিহাসের হিলয়াহ আল আওলিয়া, সিফাত আস সাফওয়াহ গ্রন্থগুলোতে এসব উল্লেখ আছে। 

প্রি ইসলামিক যুগে উমর এক কৃতদাসীকে প্রবল প্রহার করেছিলেন ইসলাম গ্রহণের জন্য। এই দৃশ্য দেখে আবু বাক্বার তাঁর থেকে সেই দাসীকে কিনে মুক্ত করেন। 

উমর রা. রিজনেবল ছিলেন। তিনি তাঁকে হত্যা করার বদলে অর্থের বিনিময়ে মুক্ত করতে সম্মত হন। তিনি রাজনৈতিক কারণে ইসলাম গ্রহণের আগে রাসুলকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। 

ইসলাম গ্রহণের আগে তাঁর এইরকম কয়েকটা ঘটনা জানা যায়। এই পর্যন্ত। কিন্তু তাঁকে তাঁর স্বীয় বহু উত্তম স্বভাবের কারণেই আল্লাহ বেছে নিয়েছিল। অথচ তাঁর নামে আজ এই মিথ্যাচার করা হলো!

আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, 'যে উমরকে অসম্মান করে সে আমাকে অসম্মান করে।…উমর সেই ব্যক্তি যাঁর জিহ্বায় ফেরেশতা কথা বলে।' (আল তাবারানি ফি আল আওসাত) 

কেবল উমরকে অসম্মানিতই করা হয়নি। বরং এই বক্তা ইসলামের নামে উমরের ওপর মিথ্যাচার আরোপ করেছেন। বলেছেন, উমর রা. মুসলিম হওয়ার পরও তাঁর 'শয়তানি প্রবৃত্তি রয়ে গেছে।' 

অথচ আল্লাহর রাসুল সা. বলছেন, 'উমর যে পথে যায়, সে পথে শয়তান যায় না।' এই হাদীস বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে আছে। 

সাহাবাগণ বলেন, 'উমর রা. যখন কোনও অভিমত ব্যক্ত করতেন, দেখা যেত সে অভিমতকে নিশ্চিত করে ওহী নাজিল হত।' ইবনে আসাকির। 
শফিকুল ইসলাম মাসুদ তাঁর বক্তব্যে বলেছেন 'ইসলামি ছাত্র শিবিরের বানানো কোনও হিস্ট্রি না এটা।' 

অবশ্যই, অবশ্যই এবং অবশ্যই এটা বানানো হিস্ট্রি। এটা উমর রা. এঁর ওপর তোহমত। তিনি ব্যভিচারের সাথেও কখনও ছিলেন না। 
অথচ আপনারা তাকে স্বভাবজাত ধর্ষক প্রতীয়মান করছেন, যাকে দেখলেই কোনও নারী ধর্ষিত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হতো। 
উমার. নিজে বলতেন, তিনি এক মুঠো খেজুর অথবা কিসমিসের বিনিময়ে বনু মাখযুমের উট চড়িয়েছেন। 

আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, আসমানে কোনও ফেরেশতা নেই যে উমরকে সম্মান প্রদর্শন করে না। আর জমিনে কোনও শয়তান নেই যে উমরকে দেখে পলায়ন করে না। (ইবনে আসাকির)

ফেরেশতারা উমরের প্রশংসা করে। শয়তান উমরকে দেখে পলায়ন করে। তাহলে উমরের প্রতি এই জঘন্য মিথ্যাচার কে করতে পারে?

লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, এনসিপি

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ