কে এম তাহমীদ হাসান
বর্তমান সময়ে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের ডাক দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক একটি ইঙ্গিত। তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই ঐক্যটা আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে, না কি শুধু নির্বানি স্বার্থে?
আমরা দেখি—আদর্শিক জায়গায় যখন স্পষ্ট মতভেদ থেকে যায়, তখন ঐক্যের ডাক যতই জোরালো হোক, তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বরং বিভ্রান্তি, দ্বিধা এবং বিভাজনই সৃষ্টি করে। কারও চিন্তা ইখওয়ানমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থার, কারও নজর ইরানকেন্দ্রিক ইসলামি শাসনের দিকে, আবার কেউ বিশ্বাস করে দেওবন্দী চিন্তাধারার পরিশুদ্ধ ব্যাখ্যায়। এসব মডেলের ভেতর আদর্শিক বোঝাপড়া বা সীমানা নির্ধারণ ছাড়া কেবল মুখে ঐক্য বললেই সেটি কার্যকর হয় না।
এখানেই দেওবন্দি ধারার ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি একটু ভিন্ন ও গভীর। তারা প্রচলিত ব্যবস্থায় রাজনীতি করেন ঠিকই, কিন্তু তারা জানেন—এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে হুকুমত, খেলাফত বা পূর্ণ ইসলামি ইমারত প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাহলে কেন করেন?
ইতিহাস বলে—দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংকটকালে, যখন মুসলমানরা কেবল শাসনব্যবস্থা হারাননি, হারাচ্ছিলেন তাহজিব, তামাদ্দুন, শিক্ষা ও ধর্মীয় চেতনা। এই সংকট মোকাবিলায় দেওবন্দি আন্দোলন ছিল এক ধরনের আত্মরক্ষামূলক সংস্কার উদ্যোগ, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা আন্দোলনেরও কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
তবে স্বাধীনতার পরও উলামায়ে দেওবন্দ রাষ্ট্রক্ষমতা বা খেলাফতের দাবি নিয়ে সামনে আসেননি। বরং তাঁরা এমন এক কৌশল বেছে নেন, যাতে মুসলমানদের ঈমান, সংস্কৃতি ও পরিচয় অক্ষুণ্ণ রেখে সহাবস্থান করা যায়।
এইজন্যই দেওবন্দি ধারার রাজনীতির উদ্দেশ্য কখনোই কেবল রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জন নয়। তাদের দৃষ্টিতে, কার সাথে বসা হলো, কার সাথে জোট হলো—তা মুখ্য নয়; বরং কার সাথে মিলে নিজেদের ঈমানি ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ রক্ষা সম্ভব, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই যারা এই ধারার রাজনীতিকে মূল্যায়ন করবেন, তাদের বোঝা উচিত—এটি ক্ষমতা নয়, অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা রক্ষার রাজনীতি।
সুতরাং, আদর্শগত স্বচ্ছতা ছাড়া শুধু ঐক্যের নামে এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। বরং ইসলামি দলগুলো যদি ঐক্যের চিন্তা করেন, তাহলে আগে চিন্তার জায়গাটাই এক করতে হবে। চিন্তা ও উদ্দেশ্য আলাদা রেখে ঐক্য করলে তা ক্ষতিই ডেকে আনবে।
এমএইচ/