শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ১১ পৌষ ১৪৩২ ।। ৬ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম :
ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের, ‘উসমান হাদির হত্যা মামলায় সরকারের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়’ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুসলিম শিক্ষককে গুলি করে হত্যা ইসলামপন্থীদের ‘একবাক্স নীতি’ কি মুখ থুবড়ে পড়ছে? শহীদ হাদির আদর্শ সামনে রেখে মিশরে 'আজহার আফকার'র যাত্রা আবারও বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা তারেক রহমানের দেশে ফেরা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন: হাসনাত ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের এভারকেয়ার থেকে গুলশানের বাসার উদ্দেশে তারেক রহমান সাহিত্য সভায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন কবি ও লেখক মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন

সোশ্যাল মিডিয়া হোক দাওয়াত ও সত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| জাহিদুল ইসলাম ||

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষত ফেসবুক, আমাদের জীবনের অন্যতম অংশে পরিণত হয়েছে। এর অবস্থা যেন দুধারী তলোয়ারের মতো। যথাযথভাবে ব্যবহার না করলে এটি উপকারের পরিবর্তে অপকারই বয়ে আনে। বর্তমানে যুবসমাজের মধ্যে ফেসবুক আসক্তি যেন এক প্রকার মাদকে রূপ নিয়েছে। অনেকেরই দিনের শুরু এবং শেষ হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। কে কী পোস্ট দিয়েছে, কে কী কমেন্ট করেছে, কে কী রিঅ্যাক্ট দিয়েছে—এসব দেখেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। অকার্যকর ছবি, ভিডিও ও পোস্ট দেখে নষ্ট হচ্ছে অমূল্য সময়।

২.
যখন একজন ছেলে বা মেয়ে ফেসবুকে স্টোরি, রিলস, টিকটক ভিডিও দেখে, তখন তার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে। সেই ভিডিও দেখে অনেকে পড়াশোনা বা কাজকর্ম বাদ দিয়ে নিজেরাও ভিডিও তৈরি করতে শুরু করে। কিছুদিন পর বুঝতে পারে—আসলে এসবের তেমন কোনো মূল্য নেই।

৩.
অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ব্যক্তির কর্মক্ষমতা ও প্রোডাক্টিভিটি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। যুক্তরাজ্যে ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিনবারের বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ক্রমাগত কমে যায়।

এমআইটি’র এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন উপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুরুতর বিষণ্নতা ৭% এবং উদ্বেগজনিত ব্যাধি ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে—সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার একাকিত্বের অনুভূতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যক্তি যখন বাস্তব জীবনের সম্পর্কের তুলনায় ভার্চুয়াল জগৎকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তখন উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কেউ কেউ এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ছে যে, সোশ্যাল মিডিয়াকেই নিজের জীবন মনে করে।

৪. 
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে দশম অবস্থানে রয়েছে। গ্লোবাল ডেটা ফার্ম ‘স্ট্যাটিস্টা’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০০ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ জনে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৯.১ শতাংশ এবং নারী ২০ শতাংশ। আর ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে পুরুষ ২১.৯ শতাংশ এবং নারী ৯.৫ শতাংশ।

৫.
২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ‘অনলাইন পলিটিক্স’ বা ‘ফেসবুক পলিটিক্স’ নামে একটি নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এখানে ভিন্নমতের ওপর একে অপরের বিরুদ্ধে নোংরা আক্রমণ করছে। পতিত ফ্যাসিবাদীরা এবং তাদের কিছু নতুন অনুসারী কৌশলে ফেসবুকে রাজনৈতিক উন্মাদনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে সচেতন মানুষও অসচেতন ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। তর্ক-বিতর্কের মধ্যে অনেকেই নিজের আদর্শিক অবস্থান ভুলে যাচ্ছেন। দাওয়াত ও আদর্শ প্রচারের চেয়ে সেল্ফ-প্রোমোশন এবং জনপ্রিয়তার রাজনীতিতে বেশি জড়িয়ে পড়ছেন।

থামুন। জি, এবার থামুন। এখানেই থামা উচিত।

৬.
সোশ্যাল মিডিয়া হোক আমাদের দাওয়াতের মাধ্যম। ‘দাওয়াত মুমিন জীবনের মিশন’—এই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠুক আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে যেভাবে দাওয়াতি কাজ করা হয়, তেমনি নির্দিষ্ট একটি সময় নির্ধারণ করে ফেসবুকে দাওয়াত ও সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অংশগ্রহণ করা উচিত। তবে কোনোভাবেই যেন মূল্যবান সময় অপচয় না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে।

৭.
দেখুন, আপনি যতই ভদ্রভাবে ফেসবুক ব্যবহার করুন না কেন, কিছু অবুঝ মানুষ আপনার টাইমলাইনে এসে বিরূপ মন্তব্য করতেই পারে। তাদের সঙ্গে বিতর্ক এড়িয়ে চলুন। যদি তারা বুঝতে না চায়, তবে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় না করে সবিনয়ে সালাম দিন।

৮.
ফেসবুক এখন প্রোপাগান্ডার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। তাই কোনো খবর চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিকে বিশ্বাস না করে, নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করা জরুরি।

রাসূল (স) বলেছেন—“কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়।” (মুসলিম)

৯.
মনে রাখতে হবে, তলোয়ারের আঘাত শুকিয়ে গেলেও মানুষের কটু কথার আঘাত মন থেকে শুকায় না। তাই, অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিজেকে সংযত করুন। ভদ্রোচিতভাবে সঠিক বিষয় তুলে ধরুন। কাউকে সত্য গ্রহণ করানোর জন্য আমরা দারোগা নই। একজন দা’ঈ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিতে সত্য তুলে ধরা। যার কাছে সত্য তুলে ধরা হচ্ছে, আজ না হোক, কাল হয়তো সে তা গ্রহণ করবে। তাই, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিকে সত্যের পথে সহায়ক হওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

১০.
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে মানসিক অস্থিরতার এক বড় উৎস। আল্লাহর কাছে আমরা এর থেকে পানাহ চাই। যেকোনো ধরণের অনলাইন আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আমাদের টাইমলাইন হোক দাওয়াত ও সত্য প্রতিষ্ঠার বাহন।

আমরা যেন শান্তি ও স্বস্তি খুঁজি কুরআনের পাতায়, রাসূল (স) ও সাহাবাদের জীবনীতে। আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হোক আরও গভীর ও সুদৃঢ়। দুনিয়ার চাওয়া-পাওয়া আমাদের নিকট খুবই তুচ্ছ। জান্নাতই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। 

যাদের দৃষ্টি দুনিয়ার প্রান্ত ছাড়িয়ে জান্নাতমুখী, তাদের প্রতিটি কথা ও কাজ হোক সত্যের সাক্ষ্য হয়ে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ