শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ১১ পৌষ ১৪৩২ ।। ৬ রজব ১৪৪৭

শিরোনাম :
ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের, ‘উসমান হাদির হত্যা মামলায় সরকারের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়’ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুসলিম শিক্ষককে গুলি করে হত্যা ইসলামপন্থীদের ‘একবাক্স নীতি’ কি মুখ থুবড়ে পড়ছে? শহীদ হাদির আদর্শ সামনে রেখে মিশরে 'আজহার আফকার'র যাত্রা আবারও বাংলাদেশি সন্দেহে ভারতে মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা তারেক রহমানের দেশে ফেরা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন: হাসনাত ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের এভারকেয়ার থেকে গুলশানের বাসার উদ্দেশে তারেক রহমান সাহিত্য সভায় বিশেষ সম্মাননা পেলেন কবি ও লেখক মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন

পাক-ভারত যুদ্ধ : ঈমানের লড়াই না ভূখণ্ডের দ্বন্দ্ব?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ওলিউল্লাহ্ মুহাম্মাদ

কখনো কখনো ইতিহাসের পাতাগুলো ধুলো ঝেড়ে চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়। মনে হয়, এইতো সেদিন; অথচ পেরিয়ে গেছে কয়েক যুগ। উপমহাদেশের রাজনীতি, মুসলমানদের অবস্থা ও সীমান্ত রেখার গল্পগুলো এমনই। সেই ১৯৪৭-এর কাঁটাতার আমাদের তিন ভাইকে আলাদা করেছিল। আজও আমরা সেই কাঁটাতারের আঘাত বুকে বয়ে চলেছি। কেউ দিল্লির মুসলমান, কেউ ঢাকার, কেউ করাচির।

এখন আবার কথা উঠছে— পাকিস্তান ও ভারতের যুদ্ধ। মুসলমানরা দুই ভাগে বিভক্ত— কেউ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে কথার তলোয়ার হাঁকাচ্ছে; কেউ হিন্দুস্তানের মাটির প্রেমে আবেগে গলে যাচ্ছে। কেউ বলছে— এটা জিহাদ; কেউ বলছে— এটা ওয়ালা-বারা’র প্রশ্ন।

কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। দুটো দেশই সেক্যুলার রাষ্ট্র। এখানে রাষ্ট্রনায়করা স্বার্থের লড়াই করছেন; আল্লাহর কালেমার নয়। ভারত ও পাকিস্তান— দু’পক্ষই আজ ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের সেনারা মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার নামে যুদ্ধ করছে না। যুদ্ধ করছে সীমান্ত, নদী, কাশ্মীর ও ভূসম্পদের মালিকানার জন্য।

আমরা কি ভুলে গেছি— ১৯৭১-এ বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো? তখনো বহু আলেম-ওলামা অস্ত্র হাতে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। কেউ বলেনি— ‘এটা মুসলমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, হারাম হবে’। কারণ সেটা ছিল আত্মরক্ষার লড়াই। আজও বাস্তবতা একই রকম।

ভারতের অনেক আলেম পাকিস্তানের সমালোচনা করছেন, নিজের দেশের পক্ষ নিচ্ছেন। তারা ঈমান-কুফর নয়; বরং ভূখণ্ড, পরিবার ও নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নেই কথা বলছেন। তাদের দোষ দেওয়া চলে না। দোষ চলে না পাকিস্তানিদেরও— যারা নিজেদের স্বার্থেই সরব।

তবু একটা প্রশ্ন থেকে যায়— উপমহাদেশের এই তিন ভাইয়ের, পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রস্তুতি কতটুকু? আজ থেকে ৭৫ বছর আগে যারা ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ বলে আলাদা হলো, তারাও কি মুসলিম উম্মাহর রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে?

উত্তর— হতাশাজনক। কোথাও নেই ঐক্য; কোথাও নেই প্রকৃত প্রস্তুতি। সবাই বিভক্ত; সবাই দুর্বল। কারও শক্তি নেই দিল্লি-লাহোর-ঢাকার সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তব বদল আনার। কারও মনোবল নেই হারানো দারুল ইসলামের রূপ ফেরাতে। কেউ তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে মাজহাবি বিতর্কে; কেউ গলা ফাটায় ফেসবুক স্ট্যাটাসে। মাঠ শূন্য।

আমরা ভুলে গেছি নবীজির (সা.) হাদীস— ‘শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার কামনা করো না। নিরাপত্তা চাও। তবে শত্রু সামনে এলে ধৈর্য ধরো।’ (বুখারী, মুসলিম)। আমাদের হাতে নেই অস্ত্র; অন্তরে নেই তাকওয়া; মননে নেই ঐক্য। তাহলে যুদ্ধের স্বপ্ন দেখে কী হবে?

এখন দরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, শৃঙ্খলিত প্রস্তুতি, ইখলাসপূর্ণ দাওয়াত, আর এক কথায়— বাস্তবতা চিনে কাজ করা। পাকিস্তান-ভারতের যুদ্ধকে ঈমান-কুফর বা জিহাদ-কুফরী বলার আগে আমাদের জানতে হবে— উম্মাহ আসলে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?

আমি মনে করি— এখানে আপন-পর নেই। করাচির মুসলমান আমার ভাই, দিল্লিরও ভাই, ঢাকারও ভাই। এখন দরকার উগ্র আবেগ নয়; সংযম ও সহিষ্ণুতা। প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির বিশুদ্ধতা। যুদ্ধ আসবে, আসতেই পারে। কিন্তু সেটা যেন প্রস্তুতিহীন আত্মঘাতী উন্মাদনা না হয়। বরং যেন হয় হিকমতপূর্ণ, ধৈর্যশীল, সুসংগঠিত ও দ্বীনের প্রকৃত রাহবারদের নেতৃত্বাধীন এক দীপ্তিময় অধ্যায়। ইনশাআল্লাহ।

শেষ কথা, উপমহাদেশের তিন ভাই যদি আবার সত্যিকার ভাই হয়ে ওঠে— চিন্তা-চেতনায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে, হৃদয়ের স্পন্দনে— তাহলেই কোনো গাজওয়া, কোনো বিজয় সম্ভব। না হলে আমরা কাঁটাতারের ভিন্নপাড়ের পরাধীন, দুর্বল, বিভক্ত মুসলমান হয়েই থেকে যাব। আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দিন। আমীন।

লেখক, শিক্ষক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ