শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৫ সফর ১৪৪৭


সাবেক সচিবের কঠোর সমালোচনা: অন্তর্বর্তী সরকারের আট উপদেষ্টার দুর্নীতির অভিযোগ


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ তার কাছে রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ বা বদলি করা হয় না। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম প্রকাশ করেননি।

শনিবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন আব্দুস সাত্তার। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

আব্দুস সাত্তার বলেন, "আমি অত্যন্ত হতাশ। আমলাদের চরিত্র সম্ভবত খারাপ হয়ে গেছে। জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর বসে থাকা অন্তত আটজন উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ আমি দিতে পারি। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তাদের বিরুদ্ধে তথ্য রয়েছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।" তার বক্তব্যের সমর্থনে উপস্থিতরা হাততালি দেন।

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া সেমিনার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ হয়। এতে প্রশাসন ক্যাডারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, "একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না?" তিনি প্রশ্ন তোলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একজন নূরজাহান বেগমের নেতৃত্বে কতটুকু সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং স্থানীয় সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কেন অনভিজ্ঞ উপদেষ্টাদের হাতে দেওয়া হয়েছে।

আব্দুস সাত্তার উল্লেখ করেন, গত এক বছরে দুর্নীতি কমার বদলে বেড়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্কুলের জমি নামজারিতে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছেন, আর ঢাকার আশপাশের একজন ইউএনও কারখানার লে-আউট পাশ করতে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, "আমি একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে দায়িত্ব পালন করছি। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে এখানে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আসছেন। আমার বস তারেক রহমান আমাকে বললেন, ‘এরা কার? কেন এরা এখানে আসে?’ আমি জানালাম, এরা গত ১৫ বছর বঞ্চনার শিকার। পতনের পর ন্যায়বিচারের আশায় এখানে এসেছেন। এরপর তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন, ‘দলীয় অফিসে ইন-সার্ভিস কর্মকর্তাদের আসা উচিত নয়।’ আমি অফিসের গেটে নোটিশ টাঙিয়েছি যে, ইন-সার্ভিস কর্মকর্তারা অফিসে আসতে পারবেন না, তবে সমস্যা হলে অফিসার্স ক্লাবে আসতে পারেন।"

সেমিনারে তিন ঘণ্টার আলোচনা চলাকালে বিগত সরকারের ১৫ বছরের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। কর্মকর্তারা প্রশ্ন তুলেছেন, তারা কীভাবে রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে কাজ করেছেন। এছাড়া ভবিষ্যতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করার আহ্বান জানানো হয়।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মীয়রা: মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, রমজান আলী, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী ও সানজিদা খান দ্বীপ্তি।

সরকারি কর্মকমিশনের সচিব সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া প্রধান প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম।

সূচনা বক্তব্যে মহাসচিব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। গত ১৫ বছরে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। এখন মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস অর্জন এবং অবিশ্বাসের দেয়াল ভাঙা।”ৎ

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ