মহান আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি জগতের এক বিস্ময়কর অংশ হলো ফেরেশতাগণ। তারা এমন এক সৃষ্টি, যারা নুর [আলো] থেকে সৃষ্টি এবং এক আল্লাহর আদেশ পালনে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। মানুষের মতো তাদের মধ্যে লিঙ্গভেদ নেই—তারা পুরুষও না আবার নারীও না, বরং সম্পূর্ণ লিঙ্গনিরপেক্ষ এক জাতি।
বিশিষ্ট তাবেয়ী সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহিমাহুল্লাহ বলেন, ফেরেশতারা পুরুষও নয়, নারীও নয়; তারা পানাহার করে না, বিবাহ করে না এবং সন্তান জন্ম দেয় না। [ফাতহুল বারী ৬/৩০৬]
ইবনু হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, নিশ্চয় ফেরেশতারা পুরুষও নয়, নারীও নয়। [ফাতহুল বারী ৮/২৯৮]
মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ মন্তব্য করেন, ফেরেশতারা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা, নিষ্পাপ এবং নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত।
আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে ফেরেশতাদের নারী রূপে উপস্থাপনকারীদের বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করেছেন "আর তারা গণ্য করেছে রহমানের বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী। তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? তাদের সাক্ষ্য অবশ্যই লিখে রাখা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে" [সূরা যুখরুফ: ১৯]
ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মুশরিকরা ফেরেশতাদের কে আল্লাহর কন্যা মনে করত এবং তাদের পূজা করত—এটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস।
ফেরেশতাদের সৃষ্টি ও বৈশিষ্ট্য
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগণকে সৃষ্টি করা হয়েছে নুর থেকে, জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের শিখা থেকে, আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে তোমাদের যেভাবে বলা হয়েছে তা থেকে। [সহিহ মুসলিম]
এই নুর আল্লাহর নিজের নুর নয়, বরং আল্লাহর সৃষ্টি করা এক বিশেষ আলো। ফেরেশতারা মানুষ সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি হয়েছেন, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন "আর স্মরণ করো, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলিফা বানাতে যাচ্ছি।" [সূরা বাকারা: ৩০]
অতএব, ফেরেশতারা আল্লাহর পবিত্র ও সম্মানিত সৃষ্টি—যারা আল্লাহর আদেশ মান্য করে, কখনো অবাধ্য হয় না, পানাহার বা দাম্পত্য জীবনের প্রয়োজন তাদের নেই। তারা কেবল আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে নিয়োজিত এবং তাঁর আদেশের বাইরে কিছুই করে না।
আরএইচ/