বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫ ।। ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ৮ জিলহজ ১৪৪৬


হজ ও ওমরাকালে মৃত্যু: এক মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

প্রতি বছরই হজ ও ওমরা পালনকালে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এবারের হজের মৌসুমেও এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি হাজির এসব মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর পথে মৃত্যু কত মহান পুরস্কারের বাহক হতে পারে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে মক্কা ও মদিনার পবিত্র ভূমিতে হজ বা ওমরার সময় মৃত্যুবরণ একটি বিশেষ মর্যাদার বিষয়, যা কোরআন ও হাদিস দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেছেন:
وَمَن يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً ۚ وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا". 

‘আর যে কেউ আল্লাহর পথে হিজরত করে, সে পৃথিবীতে অনেক আশ্রয় ও প্রশস্ততা পাবে। আর যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশ্যে বের হয়, এরপর তার মৃত্যু ঘটে যায়—তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে নিশ্চিত। আর আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১০٠)

এই আয়াতের আলোকে হজ বা ওমরার জন্য ঘর ছেড়ে বের হওয়া এক ধরনের ইবাদত ও আল্লাহর পথে সফর। যদি কেউ এই সফরে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
"من خرج حاجًا فمات كتب له أجر الحاج إلى يوم القيامة، ومن خرج معتمرًا فمات كتب له أجر المعتمر إلى يوم القيامة، ومن خرج غازيًا فمات كتب له أجر الغازي إلى يوم القيامة".

‘যে ব্যক্তি হজের জন্য বের হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হাজির সওয়াব লেখা হয়। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হয় এবং মারা যায়, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত উমরার সওয়াব লেখা হয়। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয় ও মারা যায়, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত মুজাহিদের সওয়াব লেখা হয়।’ (সূত্র: সহিহ হাদিস)

ইহরামের অবস্থায় মৃত্যু: বিশেষ মর্যাদা

হজ বা ওমরার সময় ইহরামের অবস্থায় কেউ মারা গেলে তার জানাজা ও দাফন পদ্ধতিতেও ইসলামি শরিয়তের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ এক সাহাবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যিনি ইহরামের অবস্থায় দুর্ঘটনায় নিহত হন:
غسلوه بماء وسدر وكفنوه بثوبيه، أي في ثياب الإحرام، وهذه أول ميزة له، وقال: ولا تخمروا وجهه، ولا تحنطوه، فإنه يبعث يوم القيامة ملبيًا، أي يبعث على ما مات عليه.

‘তাকে পানি ও সিদর গাছে   দিয়ে ধুয়ে দাও, এবং ইহরামের কাপড়েই কাফন দাও। তার মাথা ও মুখ ঢেকো না, কারণ কিয়ামতের দিন সে ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ পাঠ করতে করতে উঠবে।’ (সহিহ বুখারি)

মক্কা ও মদিনায় মৃত্যু: অনন্য ফজিলত

যে ব্যক্তি মদিনায় মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুপারিশ ও সাক্ষ্য। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
من استطاع منكم أن يموت في المدينة فليمت، فمن مات بالمدينة كنت له يوم القيامة شفيعًا وشهيدًا

“তোমাদের কেউ যদি মদিনায় মৃত্যু লাভ করতে সক্ষম হয়, সে যেন সেখানে মৃত্যুর জন্য চেষ্টা করে। কারণ, যে ব্যক্তি মদিনায় মারা যায়, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষ্য ও সুপারিশ করব।” (সূত্র: তিরমিযি)

অন্য হাদিসে আসে:
من مات في أحد الحرمين بعث من الآمنين يوم القيامة، ومن زارني محتسبًا في المدينة كان في جواري يوم القيامة

‘যে ব্যক্তি হারামাইন—মক্কা বা মদিনা—এর কোনো একটিতে মৃত্যুবরণ করে, সে কিয়ামতের দিন নিরাপদদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে উঠবে।’

মক্কা ও মদিনা, বিশেষত হজ ও উমরার সময় এই পবিত্র ভূমিতে মৃত্যুবরণ এক অনন্য সৌভাগ্য ও ঈমানদার জীবনের পরম পুরস্কার। এটি এমন এক মর্যাদা, যা শুধু পরিপূর্ণ বিশ্বাস, নিয়ত ও আল্লাহর কৃপা দ্বারা অর্জিত হয়। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি—তিনি যেন আমাদের সবাইকে হজ ও উমরার তাওফিক দেন, এবং জীবনের শেষ মুহূর্তে নিজ ঘরের বদলে তাঁর ঘরের কাছেই মৃত্যু দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক: মিডিয়া রিসার্চার, ইসিএসএসআর, সংযুক্ত আরব আমিরাত

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ