শায়খ ড. মাহের বিন হামদ আল মুআইকিলি
(০৩-১২-১৪৪৬ হিজরি মোতাবেক ৩০-০৫-২০২৫ ঈসায়ি তারিখে বাইতুল্লাহ শরীফে প্রদত্ত জুমার খুতবা)
সম্মানিত হাজি সাহেবান! আপনারা যারা আল্লাহর ডাক শুনেছেন ও ফরজ হজ পালনের দৃঢ় সংকল্প করেছেন—তাদের জন্য সুসংবাদ! আপনারা অনেক বড় একটি মর্যাদার স্থানে পৌঁছেছেন। এ তো সেই স্থান, যেখানে রয়েছে মাকামে ইবরাহিম, জমজম কূপ, হজরে আসওয়াদ ও কাবা ঘরের দরজার পাশের স্থান 'মুলতাজাম'। এখানেই চোখের পানি ঝরে, এখানেই মানুষের মর্যাদা বাড়ে, আর এখানেই পাপ ক্ষমা করা হয়। আল্লাহ আপনাদের হজ পূর্ণাঙ্গভাবে কবুল করুন ও আপনাদের সব ইবাদত বরকতময় করুন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনের হেফাজতের দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। আর সেই হেফাজতের একটি বড় উপায় হলো—দ্বীনের চিহ্ন ও নিদর্শনসমূহের হেফাজত করা। মানুষের মাঝে যতদিন এই নিদর্শনগুলো থাকবে, ততদিন দ্বীন টিকে থাকবে। আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা, আল্লাহভীতির অন্যতম প্রমাণ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে,
ذٰلِکَ وَمَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰہِ فَاِنَّہَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ
অর্থাৎ, 'এটাই আল্লাহর বিধান। কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের তাক্ওয়া-সঞ্জাত।' (সূরা হজ, আয়াত: ৩২) আমরা প্রতিদিন সকাল-বিকাল আল্লাহর নিদর্শন ও নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। শাহাদাতাইন তথা মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালতের স্বীকৃতি হলো ইসলামের মৌলিক শর্ত ও নিদর্শন।
আযান: নামাজের অন্যতম প্রতীক।
যাকাত ও রোযা: ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
হজ ও উমরাহ: ইসলামের অন্যতম প্রকাশ্য নিদর্শন।
আল্লাহর পবিত্র স্থানগুলোতেও রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। যেমন—মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফা, সাফা-মারওয়া, মাকামে ইবরাহিম ও মুলতাজাম। আর সর্বশ্রেষ্ঠ হলো কাবা শরিফ—আল্লাহর ঘর। এখানে একটি নামাজ অন্য যেকোনো জায়গার এক লাখ নামাজের সমান। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে কাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন,
وَّطَہِّرۡ بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَالۡقَآئِمِیۡنَ وَالرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
অর্থাৎ, 'আমার গৃহকে পবিত্র রেখ তাদের জন্যে যারা তাওয়াফ করে, নামাজে দাঁড়ায়, রুক করে ও সিজদা করে।' (সূরা হজ, আয়াত: ৩২)
এটাই সেই পবিত্র কাবা ঘর—যার প্রতি মানুষের হৃদয় আকৃষ্ট হয়, আত্মা যাত্রা করে ভালোবাসায় ভরা মন নিয়ে। কাবার প্রতি সম্মান বাড়লে ইসলামের মর্যাদাও বাড়ে। তাই আমাদের পূর্বসূরি সালেহ ব্যক্তিরা এই ঘরের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতেন।কাবায় যেমন সওয়াব অনেক গুণ বেশি, তেমনি পাপও অনেক ভয়াবহ।গুনাহের শাস্তিও সেখানে অনেক বড়। লাভের সঙ্গে ক্ষতির ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।
মক্কা শহর পুরোপুরি পবিত্র এলাকা । তার মর্যাদা চিরকালীন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللهَ حَرَّمَ مَكَّةَ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ فَهِيَ حَرَامٌ بِحَرَامِ اللهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَمْ تَحِلَّ لِأَحَدٍ قَبْلِيْ وَلَا تَحِلُّ لِأَحَدٍ بَعْدِيْ وَلَمْ تَحْلِلْ لِيْ قَطُّ إِلَّا سَاعَةً مِنْ الدَّهْرِ لَا يُنَفَّرُ صَيْدُهَا وَلَا يُعْضَدُ شَوْكُهَا وَلَا يُخْتَلَى خَلَاهَا وَلَا تَحِلُّ لُقَطَتُهَا إِلَّا لِمُنْشِدٍ
অর্থাৎ, 'যেদিন আল্লাহ সমুদয় আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, সেই দিন থেকেই তিনি মক্কা নগরীকে সম্মান দান করেছেন। তাই আল্লাহ কর্তৃক এ সম্মান প্রদানের কারণে এটি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত সম্মানিত থাকবে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি, আমার পরে কারো জন্যও তা হালাল করা হবে না। আর আমার জন্যও মাত্র একদিনের সামান্য অংশের জন্যই তা হালাল করা হয়েছিল। তার শিকারযোগ্য প্রাণীকে বিতাড়িত করা যাবে না। ঘাস সংগৃহীত হবে না। বিজ্ঞপ্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত রাস্তায় পতিত বস্তু উত্তোলিত হবে না।' (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪৩১৩) এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে বলা হয়েছে,
اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّہُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ۚ فِیۡہِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰہِیۡمَ ۬ۚ وَمَنۡ دَخَلَہٗ کَانَ اٰمِنًا ؕ وَلِلّٰہِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡہِ سَبِیۡلًا ؕ
অর্থাৎ, 'নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্যে সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো মক্কায়, এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার অবশ্যকর্তব্য।' (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৬-৯৭)
আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হলো আরাফা দিবস। এটি সেই দিন, যেদিন মহান আল্লাহ হযরত আদম আ.-এর বংশধরদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। এই দিনকে বলা হয় 'প্রতিশ্রুতি স্মরণ ও পূরণের দিন'। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ.-এর পিঠ থেকে তার সমস্ত সন্তানদের বের করে আনলেন—আরাফার মাঠে। তিনি তাদের ধূলিকণার মতো ছড়িয়ে দিয়ে প্রত্যেককে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’ তারা সবাই বলল, ‘হাঁ, আপনি আমাদের প্রভু। আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ যেন কিয়ামতের দিন কেউ না বলতে পারে, ‘আমরা তো এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ)
আরাফা দিবসে এক বিশেষ ঘটনা ঘটে। এই দিনে আল্লাহ তাআলা নিজ মর্যাদা ও মহিমা অনুযায়ী ‘নিচের আকাশে’ অবতরণ করেন। তিনি আরাফায় উপস্থিত হাজিদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করে বলেন, 'আমার এই বান্দাদের দেখো।'
এই দিনটি হলো এমন এক দিন, যেদিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এই মুক্তি শুধু আরাফায় উপস্থিত লোকদের জন্য নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যারা এই দিন পালন করে, তারাও এতে অন্তর্ভুক্ত। যারা হজে যেতে পারেনি, তারা এই দিনে রোযা রেখে বিরাট ফজিলত লাভ করতে পারে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ
অর্থাৎ, 'আমি আশা করি, আরাফার দিনের রোযা আগের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে দেয়।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৩৬)
আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা মানেই আল্লাহকে সম্মান করা। সময়ের মধ্যে কিছু সময় রয়েছে, যেগুলো অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন। এমনই এক সময় আমরা এখন অতিবাহিত করছি—জিলহজের প্রথম দশ দিন।
এই দশদিনের কসম খেয়ে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَالۡفَجۡرِ ۙ وَلَیَالٍ عَشۡرٍ ۙ
অর্থাৎ, 'শপথ ঊষার, আর শপথ দশ রজনীর।' (সূরা ফজর, আয়াত: ১-২) এই দশদিনে এমন সব ইবাদত একসাথে পালন করা যায়, যা বছরের অন্য কোনো সময় একসাথে হয় না।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِي هَذِهِ ". قَالُوا وَلاَ الْجِهَادُ قَالَ "وَلاَ الْجِهَادُ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَىْءٍ
অর্থাৎ, 'যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি উত্তম নয়? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।' (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৯৬৯) এ কারণে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দশদিনে সব ধরনের ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। যেমন—নামাজ, রোযা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, দান-সদকা, কুরআন তিলাওয়াত, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার, বিপদগ্রস্তদের সাহায্য,
মানুষের প্রয়োজন পূরণ ও যাবতীয় নেক আমল।
এই বরকতময় দিনগুলোতে সবচেয়ে মহান কাজগুলোর একটি হলো বাইতুল্লাহর হজ করা। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ
অর্থাৎ, 'একটি উমরাহ পরবর্তী উমরাহ পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ। আর মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।' (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩১৮০) কিন্তু হজকে মাবরুর বা আল্লাহর নিকট কবুলযোগ্য ও বরকতময় তখনই বলা যাবে, যখন হজ পালনকারী আল্লাহর উদ্দেশে একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তা করবেন ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেখানো পথ অনুযায়ী তা সম্পন্ন করবেন। তাই আমরা যারা হজ করতে এসেছি তারা রাসুলের অনুসরণ করি, আল্লাহর আদেশ মেনে চলি ও তাঁর রহমতের দরজায় নিজেকে হাজির করি, তাহলেই পাব আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন,
وَاِذۡ بَوَّاۡنَا لِاِبۡرٰہِیۡمَ مَکَانَ الۡبَیۡتِ اَنۡ لَّا تُشۡرِکۡ بِیۡ شَیۡئًا وَّطَہِّرۡ بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَالۡقَآئِمِیۡنَ وَالرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ وَاَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّعَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ ۙ لِّیَشۡہَدُوۡا مَنَافِعَ لَہُمۡ وَیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡلُوۡمٰتٍ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ۚ فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَاَطۡعِمُوا الۡبَآئِسَ الۡفَقِیۡرَ ثُمَّ لۡیَقۡضُوۡا تَفَثَہُمۡ وَلۡیُوۡفُوۡا نُذُوۡرَہُمۡ وَلۡیَطَّوَّفُوۡا بِالۡبَیۡتِ الۡعَتِیۡقِ
অর্থাৎ, 'স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহিমের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেই গৃহের স্থান, তখন বলেছিলাম, ‘আমার সঙ্গে কোন শরিক স্থির কর না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখ তাদের জন্যে যারা তাওয়াফ করে, নামাজে দাঁড়ায়, রুক করে ও সিজদা করে। আর মানুষের নিকট হজ-এর ঘোষণা করে দাও, এরা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রের পিঠে, এরা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে, যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলিতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন এর ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে। এরপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুস্থ ও অভাবগ্রস্তদের আহার করাও। এরপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে ও তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।' (সূরা হজ, আয়াত: ২৬-২৯)
মহান আল্লাহ এই বিশ্বজগতকে পরিপাটি, সুন্দর ও নির্ভুল এক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন। তিনি বিশ্বে যেমন নিখুঁত নিয়ম-কানুন তৈরি করেছেন, তেমনি মুসলমানদের জন্যও একটি সুনির্দিষ্ট, সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন—ইবাদত, লেনদেন, আচরণ ও চলাফেরার সব ক্ষেত্রেই। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনব্যবস্থা, যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সমাজে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা হয় এবং অনিয়ম ও ক্ষতির পথ রুদ্ধ হয়।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর এমন কিছু কাজ নির্দিষ্ট করেছেন যা রাতেই করতে হবে, আবার কিছু কাজ দিনেই করতে হবে। শরিয়ত ইবাদতের নিয়ম দিয়েছে, লেনদেনের পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে, ক্ষতিপূরণ ও খরচের নিয়ম বানিয়েছে। হজও ঠিক তেমন। এর নির্দিষ্ট মাস আছে, নির্দিষ্ট দিন আছে, নির্দিষ্ট স্থান ও সময় আছে, আলাদা আলাদা ধাপ ও রীতি আছে।
হজ আমাদের শিখিয়ে দেয় শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা ও দায়িত্বশীলতা—যা তার প্রতিটি রোকন, ওয়াজিব, শর্ত ও কর্মপদ্ধতিতে প্রতিফলিত হয়।
শরিয়ত যেমন মুসলমানের ইবাদত ও জীবনব্যবস্থা শৃঙ্খলিত করেছে, তেমনি আরও বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তার জান-মালের নিরাপত্তা ও কষ্ট দূর করায়। এই উদ্দেশ্যেই সৌদি আরব সরকার ব্যাপক পরিশ্রম করে যাচ্ছে—হজযাত্রীদের জন্য সব রকম সুবিধা নিশ্চিত করতে। তারা তাদের সব শক্তি ও সামর্থ্য নিয়োজিত করেছে, নিরাপত্তা ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছ যেন হজযাত্রীরা নিরাপদে, সুষ্ঠুভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারেন। এ কারণেই হজের অনুমতি (পারমিট) ছাড়া হজ করার চেষ্টা নিয়মের ব্যত্যয়, অন্যদের জন্য কষ্টের কারণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার প্রতি অবিচার।
তাই যারা পবিত্র স্থানসমূহে গমন করতে চায়, তাদের উচিত এই মহান ইবাদতের গুরুত্ব বোঝা, আল্লাহর একত্ববাদ ও তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেদের শ্রদ্ধা ও নম্রতা প্রকাশ করা, সহানুভূতিশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া, সরকারি বিধি-বিধান মেনে চলা, ঝগড়া ও ফাসাদ থেকে দূরে থাকা, সবার নিরাপত্তা, সুবিধা ও কল্যাণের কথা স্মরণ রাখা।
অনুবাদ: আবদুল কাইয়ুম শেখ
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, পোস্তা, চকবাজার, ঢাকা-১২১১
এমএইচ/