মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপির সাথে মার্কিন আইআরআই প্রতিনিধিদলের বৈঠক আদর্শ সমাজ বিনির্মানে আলেম-ওলামা ও সমাজের বিশিষ্টজনদের এগিয়ে আসতে হবে : আব্দুল আউয়াল ‘নির্বাচনে খুব একটা উৎসাহিত না, করলে তিনটি আসনের কোনোটিতে করব’ রুপসার ইলাইপুরে হাতপাখা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কেন্দ্রীয় সেল গঠনের ঘোষণা সিইসির ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মসজিদের অজুখানা নিয়ে সংঘর্ষ : আহত ২০, গ্রেফতার ৪ ইসলামি দলগুলো আদর্শিক দেউলিয়াপনার পরিচয় দেয় কেন? দলের অসুস্থ নেতাকে দেখতে গেলেন জমিয়ত সভাপতি দাবি না মানলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করবেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা কুয়েতে মসজিদে সিসি ক্যামেরা বসাতে বিশেষ নির্দেশনা

রমজানে গুনাহ মাফের বিশেষ তিন আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

ইনসান বা মানুষ মাত্রই ভুল করে এটা স্বাভাবিক। মানুষের ভুল–ত্রুটি,পাপ–তাপ, অন্যায়–অবিচার, জুলুম ও যাবতীয় অপরাধ যিনি ক্ষমা ও মার্জনা করেন,তিনি হলেন গাফুরুর রহিম মহান আল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার প্রতি বিভিন্ন সময় তাঁর ক্ষমার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন। বিশেষ করে পবিত্র মাহে রামাজানে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষমা করে দেন।

কারণ এটি হচ্ছে রহমত,মাগফিরাত ও নাজাতের মাস, কুরআন নাজিলের মাস,শবে কদরের রজনীর ফজিলতপূর্ণ মাস। তাছাড়া রোযার সাথে বিশেষ করে গোনাহমাফির সম্পর্ক খুব গভীর ।

মহান আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাহর গোনাহ মাফির জন্য মাহে রামাজানে তিনটি বিশেষ আমল দিয়েছেন যার ফলে রোযাদার বান্দাদের গোনাহ মাফ করা হয় ।

বিশেষ তিনটি আমল যেমন: (১) ফরজ সিয়াম (রোযা), যা আল্লাহ পাক কেবল রামাজান মাসেই মুসলিম উম্মাহকে দান করেছেন।

হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,যে ব্যক্তি রামাজান মাসে সিয়াম বা রোযা পালন করবে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে,আল্লাহ পাক তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”।

(২) ক্বিয়ামুল লাইল তথা তারাবিহর নামাজ। বছরের অন্যান্য মাসে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নফল এবাদত কিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদের নামাজ থাকলেও নেই কিন্তু তারাবিহর নামাজ । এজন্যই রামাজান মাসের কিয়ামুল-লাইলের গুরুত্ব আলাদা ।

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সা:ইরশাদ করেছেন,মহান আল্লাহ পাক তোমাদের উপর রমজানের রোযা ফরজ করেছেন,

আর আমি তোমাদের উপর কিয়ামুল’লাইল তথা তারাবীহ’র নামাযকে সুন্নত করেছি (মুসনাদে আহমদ,হাদীস-১৬৬০,সুনানে নাসায়ী, হাদীস,২৫১৮)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,যে ব্যক্তি রামাজান মাসে ক্বিয়ামুল লাইল (তারাবিহর নামাজ) আদায় করবে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে,আল্লাহ পাক তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন”।

(৩) লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যা রামাজান মাস ব্যতীত বছরের আর কোন মাসে পাওয়া যায় না। এ রাত্রি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। ঐ রাত্রিতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করা হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,যে ব্যক্তি শবে কদরে ক্বিয়ামুল লাইল করবে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে,আল্লাহ পাক তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। (বুখারী হাদীস: ২০১৪,মুসলিম ৭৫৯)

উল্লেখ্য, বর্ণনাসমূহে গোনাহ মাফ হওয়ার যে কথা রয়েছে,তার দ্বারা উদ্দেশ্য হল,রোযাদার বান্দাদের সগীরা গোনাহ;কারণ,কবীরা গোনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। তবে খালিস তাওবা করলে আল্লাহ পাক তার বান্দার কবিরা গোনাহও মাফ করে দেন।

এখন বিষয় হলো রামাজান মাসে শুধু সিয়াম তথা রোযা পালন কলেই,ক্বিয়ামুল লাইল(তারাবীহর নামায) ও লাইলাতুল কদরে নামায পড়লেই হবে না,বরং মাগফিরাত পাবার জন্যে দুইটি জিনিস ঠিক থাকতে হবে। যে দুটি হাদীসে বলা হয়েছে।একটি হল ঈমান ও অপরটি হল ইহতেসাব। যদি এ দুটি জিনিস ঠিক না থাকে তাহলে রোযা পালন করবেন,তারাবীহর নামায আদায় করবেন,লাইলাতুল ক্বাদরে ক্বিয়াম করবেন এতে কোন ফায়দা পাবেন না,গুনাহ থেকে মাফ ও পাবেন না। কারণ রামাজানে এ তিনটি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। তিনটির ক্ষেত্রেই রাসুলুল্লাহ(সাঃ)কিন্তু ঈমান ওএহতেছাবের শর্ত দিয়েছেন।

যেমন: – ঈমান ও এহতেছাবের সাথে সিয়াম (রোযা) পালন করা। ঈমান ও এহতেছাবের সাথে ক্বিয়াম (তারাবীহর) নামায আদায় করা।

ঈমান ও এহতেছাবের সাথে লাইলাতুল ক্বাদরে তথা এ রাত্রিতে এবাদত বন্দেগি করা। তাহলে আমাদেরকে বুঝতে হবে হাদীসের মধ্যে বর্ণিত ঈমান ও এহতেছাব কী?

ঈমান ও ইহতেসাব এর অর্থ:

আল্লাহর পক্ষ হতে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর নিকট শরয়ী বিধিবিধান যা কিছু নাযিল করা হয়েছে,তার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং রোযা যে বান্দার উপর ফরজ তার উপর দৃঢ় আস্থা পোষণ করাকে ঈমান বলে।

কেউ কেউ বলেন,إيمانا এর অর্থ হল সাওয়াব প্রাপ্তির প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখা।(هوالاعتقاد لحصول الثواب)

আর احتسابا এর আভিধানিক অর্থ হলো,হিসেব করা, প্রত্যাশা করা, আস্থা রাখা।

ব্যবহারিক সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মিশকাতের টীকায় বলা হয়েছে,(طلبا للثواب) তথা সওয়াবের প্রত্যাশা করা। এর মমার্থ হচ্ছে আল্লাহর আদেশের ভিত্তিতে সাওয়াব লাভের আশায় রোজা পালন করা। এবং লৌকিকতা নয়,বরং রোযা ফরজ বিধান এবং তারাবীহর নামায ও লাইলাতুল কদর খোদাপ্রদত্ত রাসূলের সুন্নাহ হওয়ার কারণে নিঃশঙ্কচিত্তে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে তা পালন করা।

যদি মুমিন বান্দাগণ এই তিনটি এবাদত বর্ণিত শর্ত দুটি তথা ঈমান ও ইহতেসাবের সাথে পালন করে। আল্লাহ পাক তাদের ব্যাপারে মাগফিরাত এবং মহা পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ পাক বলেন,নিশ্চয়ই মুমিন নারী ও পুরুষ যারা রোজাদার তাদের জন্য রাখা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কার। (সুরা আহযাব-৩৫)

পরিশেষে একটি হাদিস বর্ণনা করে আলোোচনা শেষ করছি। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেছেন,যখন তোমাদের কারো রোযার দিন হবে,সে যেন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করে এবং হৈ- হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ গালাগালি করে অথবা তার সাথে লড়াই ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে যে,আমি রোযাদার। ( বুখারী ১৮৯৪ , মুসলিম : ১১৫১)

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সিয়াম ও সাধানার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভে যেন তার পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কার প্রাপ্তির তাওফিক দান করেন। আমীন

এনএ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ