সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


নবীজি সা. কীভাবে কথা বলতেন ? জেনে নিন ৮ মন্ত্র

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

 

মাওলানা নুর আলম বিন শাহ জাহান

বিশ্ব মানবতার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুপম আদর্শ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি সর্বোত্তম পথনির্দেশক। তার দেখানো পথেই রয়েছে কল্যাণ ও মুক্তি। কথা বলা বা কথা বলার ধরনও এর বাইরে নয়। একজন মুমিনের কথাবার্তা কেমন হবে, কেমন হবে তার বাচনভঙ্গি—তার উত্তম দৃষ্টান্ত রয়েছে রাসুল (সা.)-এর জীবনে।

 

আল্লাহ তায়ালা বলেন,নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।

—(সূরা আহযাব, আয়াত নং-২১)

 

 নিচে মহানবী (সা.)-এর কথাবার্তা ও বাকভঙ্গির নানা দিক তুলে ধরা হলো-

 

স্পষ্টতা : স্পষ্টতা কথার অন্যতম গুণ। শ্রোতার মনে স্পষ্ট কথার প্রভাব বেশি পড়ে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝত। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৯)

 

ধীরস্থিরতা : ধীরস্থিরতা কথার অন্যতম গুণ। দ্রুত গতিতে কথা বলা, যা মানুষের বুঝতে কষ্ট হয় তা দোষণীয়। রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ধীরস্থির ছিলেন। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল সা. এমনভাবে কথা বলতেন যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছা করে তবে সে গুনতে পারবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯৯)

 

সত্যবাদিতা : কথার সত্যতা হলো কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকা। সত্যের একটা প্রভাব আছে, যা মানুষকে আকর্ষণ করে। কোরআনে সত্য কথার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

 

মিষ্টভাষী : রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে কোমলতা অবলম্বন করতেন। কর্কশ ও রূঢ় ভাষায় কারো সঙ্গে কথা বলতেন না এবং কাউকে সম্বোধনও করতেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের হতেন, তবে মানুষ আপনার থেকে দূরে চলে যেত। ’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

 

বাহুল্য বর্জন : রাসুল সা. কখনো প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। সওয়াবহীন কাজে কখনো সময় ব্যয় করতেন না। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, কোনো ব্যক্তির ইসলাম পালনের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৮)

 

শালীনতা : রাসুল সা. এর কথাবার্তা শালীনতার চাদরে আবৃত ছিল। তিনি কখনো অশালীন কথা বলেননি। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল সা. অশালীন, অভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেন—কী হলো তার? তার কপাল ধূলিমলিন হোক।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪)

 

বিশুদ্ধভাষী : রাসুল সা. ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তাঁর উচ্চারণ, শব্দ প্রয়োগ ও বাচনভঙ্গি সবই ছিল বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। হিন্দ ইবনে আবু হালা রা. কে রাসুল সা. এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুল সা. তিনি বেশির ভাগ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অতি বিস্তারিত কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোনো প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব।’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৭)

 

কথা বোঝার সুবিধার্থে একটি কথাকে তিনবার বলা: বার বার কথা বলায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন বিনয়ী, উদার ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী। তার কথা বুঝার সুবিধার্থ তিনি একটি কথা তিনি বার বলতেন। হাদিসে এসেছে-হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, (কোনো) কথাকে ভালভাবে বুঝার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথাকে তিন বার করে পুনরাবৃত্তি করতেন।’ (বুখারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বনবির কথা বলার ধরন অনুযায়ী কথা-বার্তা বিনিময় করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: তরুণ আলেম ও সাংবাদিক

হুআ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ