নাইজেরিয়ায় গত মাসে একটি ক্যাথলিক স্কুল থেকে অপহৃত ১০০ জন শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা হয়েছে। জাতিসংঘের সূত্র এবং স্থানীয় মিডিয়া সূত্রে রোববার (৭ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে এখনও অবশিষ্ট ১৬৫ জন শিক্ষার্থী এবং কর্মীদের অবস্থা স্পষ্ট নয়। এই ঘটনা দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির জটিলতা এবং অপহরণের সমস্যা নতুনভাবে তুলে ধরেছে।
গত নভেম্বর, উত্তর-মধ্য নাইজার প্রদেশের সেন্ট মেরি’স কো-এডুকেশনাল বোর্ডিং স্কুল থেকে বন্দুকধারীরা ৩১৫ জন শিক্ষার্থী ও কর্মীকে অপহরণ করে। পরে প্রায় ৫০ জন পালিয়ে যায়, যার ফলে ২৬৫ জন এখনও বন্দিদশায় থাকার সম্ভাবনা ছিল। একই সময়ে দেশব্যাপী আরও কয়েকটি বড় অপহরণ ঘটেছিল; যেখানে দুই ডজন মুসলিম স্কুলছাত্রী, ৩৮ জন চার্চের ভক্ত, এক কনেকে এবং তার ব্রাইডমেইডসহ, কৃষক, নারী ও শিশুরা বন্দি হয়। সেন্ট মেরি’স স্কুলের অপহরণের পেছনের প্রকৃত অপরাধীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে এই অপহরণগুলো এমন সময় ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাইজেরিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক হত্যাকা-কে “গণহত্যা” হিসেবে উল্লেখ করে সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিলেন। নাইজেরিয়ার সরকার এবং স্বাধীন বিশ্লেষকরা সেই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নাইজেরিয়ার ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার কারণে জর্জরিত। কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কৃষক-গবাদি পশু পালকের সংঘাত চলছে, দক্ষিণ-পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা বিদ্যমান। এই সহিংসতায় খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয়ই নিহত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, অপহরণ এখন একটি “লাভজনক শিল্প” হিসেবে গড়ে উঠেছে। জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত এ ধরনের অপহরণ থেকে প্রায় ১.৬৬ মিলিয়ন ডলার উপার্জন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা উত্তর নাইজেরিয়ার জিহাদিদের বনভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ ফ্লাইটের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছেন। স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠী বন্দিদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিমান হামলা চালানো হয়।
মুক্ত করা ১০০ শিশুকে রাজধানী আবুজায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সূত্র জানিয়েছে, সোমবার তাদের নাইজার প্রদেশের স্থানীয় সরকারকে হস্তান্তর করা হবে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সানডে ডারে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় চার্চ সূত্র জানিয়েছে, তারা প্রার্থনা ও অপেক্ষা করছিলেন শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ফেরতের জন্য। নাইজেরিয়ায় অপহরণ ও মুক্তিপণ চক্র দীর্ঘদিন ধরে চলমান। অপরাধীরা অপহরণের মাধ্যমে দ্রুত অর্থ উপার্জন করে। নভেম্বর মাসের একাধিক বড় অপহরণের ঘটনা দেশটির নিরাপত্তা সমস্যাকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরেছে। পূর্বাঞ্চলে জিহাদবাদী বিদ্রোহ চললেও, পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র “ডাকাত দল” গ্রাম থেকে মানুষ অপহরণ ও লুটপাট চালাচ্ছে। সূত্র : এএফপি, সিএনএন।
এনএইচ/