ইরানের আয়োজনে দেশটিতে চলতি সপ্তাহে এক সামরিক মহড়ায় একই সঙ্গে অংশ নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। চীনের নেতৃত্বের সহযোগিতা জোট সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর সদস্যদের নিয়ে শাহানদ-২০২৫ শীর্ষক এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
মহড়ায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের অংশগ্রহণ এক বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে গত মে মাসে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ শেষ হলেও দুই দেশের মধ্যে এখনও শীতল সম্পর্ক চলছে।
যদিও উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা একসঙ্গে মহড়ায় অংশ নিয়েছেন, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা থেকে তারা এখানে অংশ নিয়েছেন। দুই দেশের সম্পর্ক এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
গত বুধবার থেকে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে এ সামরিক মহড়া শুরু হয়। শুক্রবার শেষ হওয়া এ মহড়ায় এসসিওর সদস্য ১০ দেশই অংশ নেয়। দেশগুলো হচ্ছে ইরান, চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ।
২০০৩ সালে প্রথম এসসিওর সামরিক মহড়া শুরু হয়। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরির উদ্দেশে এ মহড়া শুরু হয়।
পাকিস্তানি বিশ্লেষকরা বলছেন, মহড়ায় একসঙ্গে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি প্রমাণিত হয়নি।
পাকিস্তানি জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক আসিফ দুররানি বলেন, এসসিওর কিছু কার্যক্রম রয়েছে যাতে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই বাধ্যতামূলকভাবে অংশ নিতে হবে। এ অংশ নেওয়ার মাধ্যমেই দ্বিপাক্ষিক শীতল সম্পর্কের বরফ গলে যায়নি।
পাকিস্তানি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজের (সিআইএসএস) অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর আনুম খান বলেন, এ মহড়াকে প্রতীকী সহযোগিতা হিসেবে নেওয়াও উচিত হবে না। কোনো ধরনের অর্থপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তার সম্পর্কের বদলে প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা থেকেই দুই দেশ ইরানে এ মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
অপরদিকে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই দিল্লি এ মহড়ায় গিয়েছে।
নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সরন সিং বলেন, ‘এসসিওর সন্ত্রাসবিরোধী মহড়া ভারতীয় ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে অনন্য সুযোগ দিয়েছে একসঙ্গে কাজ করার।’
ভারতীয় প্রবীণ কূটনীতিক তালমিজ আহমদ বলেন, ‘এসসিওতে যোগদানে ভারতের মূল স্বার্থ হচ্ছে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন বিশেষ
করে জ্বালানি ও বাণিজ্যিক বৈচিত্রের জন্য যেহেতু পাকিস্তান এক্ষেত্রে বাধা হয়ে আছে।’
তিনি বলেন, একই সংস্থার সদস্য হিসেবে বাধ্যবাধকতা থেকেই পাকিস্তানের উপস্থিতি সত্ত্বেও মহড়ায় ভারত অংশ নিয়েছে।
এলএইস/