বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস আয়োজিত ‘বাবরি মসজিদ স্মৃতি প্রতিযোগিতা–২০২৬’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বাদ মাগরিব দারুল খিলাফাহ মিলনায়তন, পুরানা পল্টনে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংস বিশ্ব মুসলিমের ওপর রাজনৈতিক আগ্রাসন। এটি কেবল একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিস্তার লাভ করছে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো বাবরি মসজিদ ধ্বংস। ভারতের অভ্যন্তরে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংবিধানকে উপেক্ষা করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বাবরি মসজিদের ঘটনার সঙ্গে আবেগগতভাবে যুক্ত। কারণ এটি আমাদের ইতিহাস, আস্থা, সভ্যতা ও আত্মপরিচয়ের অংশ। তাই এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা, লিখা এবং জনমত গঠন করা আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্বও বটে।
আল্লামা আজিজুল হকের ঐতিহাসিক লংমার্চের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাবরি মসজিদ ইস্যুতে বাংলাদেশের ভেতর যে সবচেয়ে শক্তিশালী গণজাগরণ হয়েছিল— তা ছিল শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর নেতৃত্বাধীন ঐতিহাসিক লং মার্চ। এটি শুধু একটি প্রতিবাদ ছিল না। দখলদারিত্ব ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিশ্বকে বার্তা দিয়েছিল। সেই লংমার্চ দেখিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশের মানুষ মুসলিম বিশ্বের ন্যায়বিচারের প্রশ্নে কখনো নিরব থাকতে পারে না।
প্রধান আলোচক বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ বলেন, ইতিহাস ভুলে গেলে জাতি পরিচয় হারায়। তাই সত্য ইতিহাস জানা, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, এবং দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রজন্মের কণ্ঠস্বর হওয়া জরুরি। বিশ্ব রাজনীতির টেবিলে মুসলমানদের শক্তি বাড়াতে হলে জ্ঞান ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই বাবরি মসজিদের স্মৃতি সংরক্ষণে তরুণদের বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
বাবরি মসজিদ স্মৃতি প্রতিযোগিতার ৫টি বিভাগের পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ। বিভাগভিত্তিক বিজয়ীরা হলেন—
ছড়া বিভাগ
১ম – মুহা. মেসবাউর রহমান (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)
২য় – মহিউদ্দীন হাসান তাহসীন (কুমিল্লা জিলা স্কুল)
৩য় – মুহা. মোফাজ্জল হোসেন (জামিয়া আরাবিয়া আহাদীয়া বারুইগ্রাম, মোমেনশাহী)
কবিতা বিভাগ
১ম – মুহা. ইয়াজ রহমান (ঢাকা কলেজ)
২য় – মুহা. মিল্লাত হুসাইন (জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া কওমি মাদরাসা, লক্ষীপুর)
৩য় – মোসা. জুমারা আক্তার জুমা (জোবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিলেট)
রচনা বিভাগ
১ম – মুহা. নুর মোহাম্মদ আজমী (জামিয়াতুল আরকাম, নেত্রকোনা)
২য় – মুহা. আব্দুল্লাহ আফফান (তাদরিসুল কুরআন মাদরাসা, নরসিংদী)
৩য় – মুহা. মিনহাজ আবেদীন জিদান (যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ)
প্রবন্ধ বিভাগ
১ম – মোসা. জান্নাত জাহান তানজিম (বুয়েট)
২য় – মুহা. করিম আল জাহিন (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
৩য় – ইমদাদুল্লাহ বিন আব্দুল মতিন (জামিয়া উসমানিয়া আরাবিয়া, নরসিংদী)
কুইজ বিভাগ
১. মুহা. নুরনবী ইসলাম সুমন – ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বাংলা কলেজ)
২. মুহা. আবিদ তালুকদার – বনানী বিদ্যা নিকেতন
৩. মুহা. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মতিন – তামীরুল মিল্লাত মাদরাসা
৪. মুহা. আবরারুল হক সাদ – কুরতুবী আলিম মাদরাসা
৫. মোসা. নুসাইবা তাজরিয়ান – আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া-সংস্কৃতি সম্পাদক এহসান সাজিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খেলাফতর ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ নোমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা সানাউল্লাহ আমীন, সেক্রেটারি জেনারেল খেলাফত ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রাকীবুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও খেলাফত ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা জাহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি পরিষদ সদস্য মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর।
এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এনএইচ/