শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫ ।। ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ১০ জিলহজ ১৪৪৬


গাজার অবস্থা ‘নরকের চেয়েও খারাপ’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসরায়েলি অবরোধ, লাগাতার বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন মানবিক সংকট। এমন পরিস্থিতিকে ‘নরকের চেয়েও ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)।

সংস্থার প্রধান মিরজানা স্পলজারিক বলেন, মানবতা ব্যর্থ হচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে দেশগুলো যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

গতকাল বুধবার জেনেভায় আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির সদরদপ্তরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান মিরজানা স্পোলিয়ারিক গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনিদের মানবিক মূল্যবোধকে যেন ইচ্ছাকৃতভাবে পিষে ফেলা হচ্ছে।” আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে উপেক্ষা করে যেভাবে একের পর এক নিপীড়ন চলছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মিরজানা আরও বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা শুধু আইনগত সীমা নয়, নৈতিকতা ও মানবিকতার প্রাথমিক মানদণ্ডকেও অতিক্রম করে গেছে।”

উপত্যকায়  আন্তর্জাতিক  সংগঠন এর  অন্যতম আইসিআরসি । সংস্থাটির অন্তত ৩০০ কর্মী উপত্যকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। রাফায় তাদের একটি চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিতর্কিত যে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রটিতে গুলি করে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়েছে, সেটি তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রের অদূরেই।

 ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) জানিয়েছে, গত সোমবার সকালে রাফায় তাদের ফিল্ড হাসপাতালে ১৮৪ জন রক্তাক্ত ও আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়।

তাদের মধ্যে ১৯ জন পথেই প্রাণ হারান, আর আরও ৮ জন মারা যান হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই।

রেড ক্রস জানায়, এক বছর আগে এই ফিল্ড হাসপাতাল চালু হওয়ার পর এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ একক হতাহতের দিন।

সম্প্রতি গাজায় কিছুসংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছায়। প্রয়োজনের তুলনায় যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। গাজার সব মানুষের কাছে ত্রাণ যায়নি। বিশেষ করে উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ পৌঁছতে দেয়নি ইসরায়েল। এরই মধ্যে বিতরণের নামে গুলি করে ত্রাণপ্রত্যাশীদের হত্যা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গতকাল বুধবার বেশ কয়েকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজা থেকে ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেন, যে পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে, তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।

এ পরিস্থিতিতে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বুধবার এক দিনে গাজায় আরও ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৪৪০ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬০৭ জন নিহত ও ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৪১ জন আহত হয়েছেন। হতাহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বিক্ষোভ চলছে। তিন দিনব্যাপী একটি কর্মসূচির ডাক দেয় ইসরায়েলের একটি সংগঠন, যেখানে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে তেল আবিব থেকে গাজার সীমান্ত অভিমুখে রওনা করবেন। ইসরায়েলের একটি কট্টরপন্থি গ্রুপ সম্প্রতি গাজার ত্রাণের ট্রাক আটকে দিয়েছিল। এ বিক্ষোভকারীরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোরও বার্তা দিচ্ছেন। তারা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছেন।

গাজায় নিঃশর্ত এবং স্থায়ী একটি যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকর করতে আনা প্রস্তাবে বুধবার ভোট গ্রহণ করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এতে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের কূটনীতিবিদরা। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্যের তত্ত্বাবধানে ওই প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলিদের অবিলম্বে মুক্তির বিষয়েও খসড়ায় বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জাতিসংঘের কূটনীতিক মঙ্গলবার বলেছেন, প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভেটো আসার আশঙ্কা রয়েছে।

গ্রেটা গাজায় পৌঁছতে পারেন কাল

ভূমধ্যসাগরে জাহাজে ত্রাণ নিয়ে গাজার দিকে এগোচ্ছেন জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও তাঁর ১১ সদস্যের দল। তবে ‘মাদলিন’ নামে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওই জাহাজে হামলার ঝুঁকিও রয়েছে। ফ্লাইট রাডারের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের তৈরি হেলিনিক কোস্টগার্ড ড্রোন এরই মধ্যে ‘মাদলিন’-এর ওপর ঘুরে গেছে। গ্রিসের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ড্রোন মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ