বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ৯ রবিউস সানি ১৪৪৭


পানির বাইরে শ্বাস নেওয়া রহস্যময় মাছ – লাংফিশ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান 

জলজ প্রাণী মানেই সাধারণত পানির নিচে বসবাস আর পানির মধ্যেই শ্বাস গ্রহণ। তবে কিছু প্রাণী প্রকৃতির অদ্ভুত ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে। তেমনই এক বিস্ময়কর প্রাণী হলো লাংফিশ (Lungfish)—যে মাছ কিনা শুধু পানিতে নয়, শুকনো জমিতে, এমনকি কাদা মাটিতে থেকেও শ্বাস নিতে পারে মানুষের মতো ফুসফুস দিয়ে!

লাংফিশ কী? 

লাংফিশ মূলত একটি প্রাচীন মাছ, যার বিবর্তনের ইতিহাস প্রায় ৪০ কোটি বছর পুরনো। এটি “জীবন্ত জীবাশ্ম” (living fossil) হিসেবেও পরিচিত, কারণ বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন—লাংফিশই সেই প্রাণীদের পূর্বপুরুষ, যারা প্রথম পানির জীবন থেকে স্থলে পা রেখেছিল।

ফুসফুস দিয়ে শ্বাস নেয়! 

লাংফিশের দেহে ফুসফুসের মতো অঙ্গ থাকে, যেটি দিয়ে এটি সরাসরি বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। যখন জলের অক্সিজেন কমে যায় বা পুকুর-নদী শুকিয়ে যায়, তখন লাংফিশ কাদার নিচে থেকে নিজের তৈরি করা একপ্রকার সুরঙ্গ বা মাটির গর্তে নিঃশ্বাস নেয় ফুসফুস দিয়ে, ঠিক যেমন মানুষ করে।

শুকিয়ে গেলেও মরে না! 

শুষ্ক মৌসুমে যখন জলাশয় একেবারে শুকিয়ে যায়, লাংফিশ তখন নিজেকে কাদার মধ্যে গুটিয়ে রাখে, এবং গা থেকে একধরনের চটচটে মিউকাস নির্গত করে। এটি শুকিয়ে গিয়ে লাংফিশকে ঘিরে একধরনের প্রাকৃতিক প্যাকেট বা কোষ তৈরি করে, যা তাকে রক্ষা করে।

এই অবস্থায় লাংফিশ মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে—কোনো পানি ছাড়া! শুধু বাতাস থেকে সামান্য অক্সিজেন নিলেই চলে।

লাংফিশ কোথায় পাওয়া যায়? 

বর্তমানে লাংফিশ প্রধানত তিনটি মহাদেশে পাওয়া যায় আফ্রিকা (African Lungfish – সবচেয়ে পরিচিত ও গবেষিত প্রজাতি), দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায়।

লাংফিশ শুধু একটি মাছ নয়, এটি বিবর্তনের জীবন্ত সাক্ষী, বৈজ্ঞানিক গবেষণার আকর্ষণীয় বিষয়, এবং প্রকৃতির এক অতুলনীয় সৃষ্টি। এই মাছ আমাদের শেখায়—জীবনের টিকে থাকার জন্য প্রকৃতি কত অসাধারণভাবে নিজেকে গড়ে নিতে পারে।

লাংফিশ—জল, স্থল ও জীবনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক অনন্য বিস্ময়!

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ