সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য ও মাদরাসা গুলোতে লবণ সরবরাহের সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদে আজ মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। আজ (১ জুন) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কুরবানির পশুর চামড়ার ঘোষিতমূল্য পুনর্বিবেচনা করে এর ন্যায্য মূল্য পুনঃনির্ধারণের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হক্কানী। তিনি বলেছেন, আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কুরবানীর পশুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ঘোষণা করেছে। অথচ ১৫-২০ বছর আগেও প্রতিটি গরুর কাঁচা চামড়া ৩/৪ গুন বেশি মূল্যে বিক্রি হওয়ার নজির রয়েছে।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কারণে কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোথাও চামড়াজাত দ্রব্যের দাম কমেনি বরং বেড়েছে। তাহলে কুরবানীর পশুর চামড়া মূল্য কোন কারণে দরপতন হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, সাভারে স্থানান্তরকৃত চামড়া শিল্পনগরী আধুনিকায়ন করা না হলে বিদেশে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। বিগত সরকারের সীমাহীন দায়িত্বহীনতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া এতিম, গরিব-মিসকিনদের হক্ব এবং ধনীদের নিকট গরিবের আমানত। অবহেলায় কম মূল্যে চামড়া বিক্রি করা আমানতের খেয়ানত ও গরিবের হক নষ্ট করার শামিল। কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য না থাকায় যেমনি ভাবে রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনিভাবে এতিম গরিব সহ কওমী মাদরাসা গুলো অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
তিনি আরো বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ভিনদেশীদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশের পাটশিল্পকে ধ্বংস করার পর চামড়া শিল্পকেও ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যারপর নাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে চামড়ার মূল্য কমিয়ে দিয়ে মাদরাসাগুলোর অন্যতম আয়ের উৎস বন্ধ করে মাদরাসা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছিল পতিত সরকার। বর্তমান সরকারকে এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত কুরবানির পশুর চামড়ার মূল্য পুনর্বিবেচনা করে নতুন করে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা। অন্যথায় সারা দেশব্যাপী ওলামায়ে কেরাম দেশ ও জনস্বার্থে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায়ে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
দলের ঢাকা মহানগর আমীর মাওলানা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিনামূল্যে লবণ বিতরণের ঘোষণা দিয়ে লবণ দেয়া চামড়ার মূল্য ১৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা এ যেন শুভংকরের ফাঁকি। যেখানে বর্তমান বাজারে প্রতিটি চামড়ার সর্বনিম্ন মূল্য ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা হওয়া বাঞ্ছনীয় সেখানে চামড়ার মূল্য মাত্র ১৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা নিছক তামাশা বৈ কিছুই নয়। চামড়ার তৈরী সকল পণ্যের মূল্য অত্যন্ত চড়া এবং দিন দিন বেড়েই চলছে, তাহলে চামড়ার মূল্য এতো কম হবে কেন?
বক্তাগণ বলেন, কওমি মাদরাসায় সরকার কর্তৃক লবণ সরবরাহ করার ঘোষণা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের দ্বারা কাঁচা চামড়ায় লবণ লাগানো কখনো সম্ভব নয়। তাছাড়া মাদরাসা গুলোতে কাঁচা চামড়া মজুদ করে রাখার গোডাউন নেই, অনুকূল পরিবেশ নেই। দীর্ঘদিন এই চামড়া মজুদ করে রাখলে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষণ হবে। এতে চামড়া পঁচে গিয়ে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই লবণ সরবরাহ করতে হলে আরৎদারদেরকে করুন। এবং চামড়া শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনে ট্যানারি মালিকদের পরামর্শ নিয়ে তাদেরকে যথাযথ সহযোগিতা করুন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন - মুফতি আবুল হাসান কাসেমী, মুফতি আখতারুজ্জামান আশরাফী, মুফতি কামরুজ্জামান তাসফিন, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি আবুল হাসানাত, মুফতি সাইফুল ইসলাম, মাওলানা জাফর আহমেদ প্রমুখ।
এমএইচ/