বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ।। ২১ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যৌন হয়রানি: নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন ৯ জেলায় জনবল নিয়োগ দিচ্ছে আকিজ গ্রুপ  ‘আমেরিকা কিছুটা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে’, জোহরান মামদানির জয়ে ট্রাম্পের প্রথম প্রতিক্রিয়া চব্বিশের যুবশক্তিকে নিয়েই ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে চাই মাসনা মাদরাসার  বার্ষিক মাহফিল—আত্মশুদ্ধি ও রূহানিয়্যাতের মহামিলন সৌদিতে সভা-সমাবেশ নিয়ে কঠোর সতর্কতা বাংলাদেশ দূতাবাসের ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয় জোহরান মামদানির প্রধান উপদেষ্টার কাছে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল স্মারকলিপি দেবে আজ প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে তামাক নিষিদ্ধের ঘোষণা দিল মালদ্বীপ 'বাঙ্গরাবাজার থানা’ উপজেলা হলে খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

এবার কোনো হজযাত্রীকে কাঁদতে হয়নি: ধর্ম উপদেষ্টা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিক সহযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনার কারণে এবার কোনো হজ যাত্রীকে এয়ারপোর্টের কাঁদতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, কোন হজযাত্রী যেন হজে যাওয়া থেকে বঞ্চিত না হয়, এবার সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পেয়ে, কোন হজ এজেন্সির ওপরে একক নির্ভরতা না রেখে, মন্ত্রণালয় থেকেই সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে প্রায় ৮৭ হাজার হজ যাত্রীর সবাইকে সুষ্ঠুভাবে হজ করিয়ে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে সবাই পবিত্র হজ্ব পালন শেষে দেশে ফিরেছেন। 

রোববার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবসায়িক কোনো উদ্দেশ্য নেই, হাজীদের সেবা করাই সরকারের একমাত্র ব্রত। 

তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পরও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। তিনি হজের কার্যক্রমের  বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।

তিনি বলেন, বরাবরই প্রধান উপদেষ্টার একটাই নির্দেশনা ছিল যাতে কোন হজ যাত্রী ভোগান্তি শিকার না হয়, কষ্ট না পায়। নির্দেশনা মতো, আমরা সেভাবেই কাজ করে গেছি এবং সফলতা পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে, ৮ জুলাই হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় এবং ১০ জুন থেকে হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়। ১০ জুলাই হজের ফিরতি ফ্লাইট শেষ হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত ৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই ৯ জন বাদে সকল হাজী (৮৭,১৪৫ জন ব্যবস্থাপনাসহ) দেশে ফিরেছেন। 

তিনি আরো বলেন, যে সকল হাজী সৌদি আরবে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদেরকেও দেশে পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ জনকে বিশেষ ব্যবস্থায় মেডিকেল বেডের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে আরো ৫ জনকে মেডিকেল বেডের মাধ্যমে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। 

তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে, রোগীদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা সাপেক্ষে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রেরিত হজ যাত্রীদেরকে হজ প্যাকেজ অনুযায়ী প্রতিশ্রুত সকল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারি হজযাত্রীদের জন্য ভাড়াকৃত হোটেলে সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একাধিক কর্মকর্তাসহ একটি টিম নিয়োজিত রেখে হাজীদের সেবা দেওয়া হয়েছে। মক্কা ও মদিনায় স্থাপিত মেডিকেল সেন্টার ও জেদ্দা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ প্লাজায় হাজীদেরকে মেডিকেল সেবা প্রদান করা হয়েছে। হজযাত্রীদের হজ পালন সহজ ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রতি ৪৬ জন হাজীর জন্য ১ জন হজ গাইড নিযুক্তির পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে মিনা ও আরাফার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে এ বছর হজযাত্রী হারানো সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। 

তিনি বলেন, এ বছর ৮৯২ জন হজযাত্রী হারানো গিয়েছিলো, যার মধ্যে ৮৯১ জনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। ৮২ বছর বয়স্ক একজন হজযাত্রীকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমাদের হজ মিশন এখনও তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। 

তিনি আরো বলেন, এ বছর হজযাত্রী মৃত্যুর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। মোট ৪৫ জন হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের সকলেরই নানা ধরণের জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্তের পূর্ব ইতিহাস রয়েছে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জও কিছুটা কমেছে। ইতোমধ্যে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব চূড়ান্ত করেছি। সরকারি মাধ্যমে প্রত্যেক হাজীকে আমরা প্যাকেজের উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত প্রদান করব। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর হাজীদেরকে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর বাড়িতে রাখা হয়। ৪ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ৫ হাজার ৩১৫ টাকা, শর্ট প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ২৩ হাজার ২৭ টাকা ফেরত পাবেন। ০৫ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ১৩ হাজার ৫৭০ টাকা ফেরত পাবেন, এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোন হাজী রাখা হয়নি। ৬ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ৫ হাজার ৩১৫ টাকা ফেরত পাবেন, এ বাড়িতেও শর্ট প্যাকেজের কোন হাজী রাখা হয়নি।

সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর হাজীদেরকে ১, ২ ও ৩ নম্বর বাড়িতে রাখা হয়। ১ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ১৯ হাজার ১৯২ টাকা, শর্ট প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ৫১ হাজার ৬৯২ টাকা ফেরত পাবেন। ২ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ২১ হাজার ১৪২ টাকা ফেরত পাবেন এবং শর্ট প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ৫৩ হাজার ৬৪২ টাকা ফেরৎ পাবেন। ৩ নম্বর বাড়িতে পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ২৪ হাজার ২৬২ টাকা ফেরত পাবেন, এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোন হাজী রাখা হয়নি। সরকারি মাধ্যমের ৪ হাজার ৯৭৮ জন হাজীকে আমরা সর্বমোট ৮ কোটি ২৮ লক্ষ ৯০ হাজার ১৮৩ টাকা ফেরত প্রদান করব। 

তিনি বলেন, যথাদ্রুত সম্ভব এই টাকা হাজীদের ব্যাংক একাউন্টে ফেরত পাঠানো হবে। আমি আপনাদের মাধ্যমে সম্মানিত হাজীসহ সকল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে স্পষ্ট একটি বার্তা দিতে চাই। সেটা হলো, হাজীদের রিফান্ড/ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান/দুস্থদের আর্থিক সহায়তাসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেয় সকল ধরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়। এরূপ টাকা পাঠাতে মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে ফোন করা কিংবা তার কাছ থেকে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের নম্বর কিংবা বিকাশ/নগদ/রকেট-এর কোন পিন নম্বর চাওয়া হয় না। এমনটি যদি কেউ করে, তাহলে আপনারা নিশ্চিত জেনে রাখুন সে প্রতারক। এরূপ প্রতারক থেকে সাবধান থাকুন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের হজ ব্যবস্থাপনার যাত্রাটি আমাদের জন্য সহজ ছিলো না। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ছিলো, সংকট ছিলো। এছাড়া, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারও নতুন নতুন বেশ কিছু নিয়ম-কানুন বা বিধি-নিষেধ আরোপ করে। এছাড়া হাবের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে কিছুটা সংকট ছিলো। উপরন্তু, এ সরকারের সময়ে হজের খরচ কমানোসহ সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে- এরূপ জন-আকাঙ্ক্ষা ছিলো। এরূপ নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সম্পন্ন করতে হয়েছে।

আ ফ ম খালিদ হোসেন আরো বলেন, এ বছর এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নিয়ে একটি সংকট তৈরি হয়েছিল। সৌদি সরকার প্রথমে হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা ২ হাজার জন নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আমি বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে এই কোটা ১ হাজার নির্ধারণ করাতে সক্ষম হই। তবে লিড এজেন্সি গঠন নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। শেষ অবধি সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ এবং হজ এজেন্সিসমূহের সহযোগিতায় আমরা এ সংকট উত্তরণে সমর্থ হই। আমি এ বছরও হজ শেষে সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টারের সঙ্গে দেখা করে তাকে এজেন্সি প্রতি হজযাত্রীর ন্যূনতম কোটা ১ হাজার রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। এছাড়া, মিনা ও আরাফায় বেডের সাইজ বৃদ্ধি, টয়লেটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নিরবিচ্ছিন্ন পানির সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এ সময় আমার সচিব মহোদয়ও আমার সঙ্গে ছিলেন।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হজযাত্রীদের জন্য মিনা ও আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ এবং ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি, নুসুক মাসার প্লাটফর্মে বাড়িভাড়া, পরিবহন চুক্তি ও হজযাত্রীদের ভিসার বিষয়টিও আমরা যথাসময়ে সম্পন্ন করতে সক্ষম হই। এক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, হাবের নেতৃবৃন্দ ও হজ এজেন্সির ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, এ বছর হজের সফরকে সহজ, নিরাপদ ও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিরসনে তৈরি করা হয় ‘লাব্বাইক’ মোবাইল অ্যাপস, প্রি পেইড কার্ড ও সাশ্রয়ী রেটে বিশেষ ফোন রোমিং প্যাকেজ বিশেষ সহায়ক হয়েছে। 

ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, এই তিনটি সার্ভিস চালু বা সহজীকরণের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ