বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জীবন দিলেও যদি চরিত্র না বদলায় তাহলে ভাগ্যও বদলাবে না: শায়খে চরমোনাই শ্রীমঙ্গলে বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্ক: এক ঘণ্টায় তিন শিশু আহত ‘দুঃখজনক হলো ইসলামি অঙ্গন থেকে শক্তিশালী মিডিয়া গড়ার উদ্যোক্তা আমরা পাইনি’ ২৪ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি: সারজিস ইন্ডিয়ার এজেন্ট ইসকন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন ইবতেদায়ী শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের জোরালো সমর্থন ভারতীয় আগ্রাসন নারী ও শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে সর্বস্তরের ছাত্র জনতার মানববন্ধন প্রলোভনের ফাঁদ: 'কেন আমাদের সন্তানরা এত সহজে ধরা দেয়? দেশ গড়ায় কেবল নেতা নয়, নীতিরও পরিবর্তন করতে হবে : মাসুদ সাঈদী ইমাম দম্পতিকে নির্যাতনের প্রতিবাদে দুর্গাপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে কী হয়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আমরা অনেকেই ধরে নিই ওষুধের গায়ে লেখা ‘মেয়াদ শেষ’ মানেই সেটা যেন একরকম বিষ! কিন্তু সত্যিই কি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে মৃত্যু হয়? নাকি শুধু কার্যকারিতা কমে যায়? এই প্রশ্ন ঘিরে রয়েছে প্রচুর ভ্রান্ত ধারণা। আসুন, বিজ্ঞানের আলোয় ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে খুঁজে দেখি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আসলে কতটা ক্ষতিকর।

সম্প্রতি ঢাকায় এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জানা যায়, তাকে খাওয়ানো ভিটামিন সিরাপটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। অনেকে ধরে নিচ্ছেন, ওষুধটির মেয়াদ ফুরনোই শিশুটির মৃত্যুর কারণ। কিন্তু তা নির্ভুল বলা যায় না। ইতিহাস বলছে, ১৯৯০ সালে বহু শিশু ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে মারা যায়, যা মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল না, বরং বিষাক্ত রাসায়নিক ডাইথাইলিন গ্লাইকল মেশানো ছিল।

তাই শিশুটির মৃত্যুর জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধকে দায়ী করা ঠিক হবে না।

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কতটা ক্ষতিকর?
বেশির ভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ক্ষতিকর নয়, বরং কার্যকারিতা কমে যায়। অর্থাৎ, ওষুধটি হয়তো কাজ করবে না, কিন্তু বিষক্রিয়া ঘটাবে না।

কোন ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে
তরল ওষুধ, ইনসুলিন, নাইট্রোগ্লিসারিন, ইনহেলার, অ্যান্টিবায়োটিক সাসপেনশন, থাইরয়েড ওষুধ ইত্যাদি মেয়াদোত্তীর্ণ হলে কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে বিপদজনক হতে পারে।

কিছু ওষুধে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিষাক্ত যৌগ তৈরি হতে পারে, তবে এমন ঘটনা বিরল।


মেয়াদোত্তীর্ণ কোন ওষুধ ব্যবহার করা কি বৈধ বা নিরাপদ?
প্রেসক্রিপশনবিহীন সর্দি-জ্বর, ব্যথার ওষুধ বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট সাধারণত মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সীমিত সময়ের জন্য নিরাপদ হতে পারে।

কিন্তু প্রেসক্রাইব করা ওষুধ (যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, ব্লাড থিনার) নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যবহার করা একদম উচিত নয়।

বাংলাদেশের আইনে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বেআইনি। যদিও কার্যকরভাবে এটি সবসময় বাস্তবায়ন হয় না।

গবেষণায় কী দেখা গেছে?
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ওষুধ সংস্থা ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও আর্মি মেডিকেল বিভাগ ১৫ বছর মেয়াদোত্তীর্ণ ১০০টি ওষুধ পরীক্ষা করে দেখেছে, ৯০ শতাংশ ওষুধ তখনও কার্যকর ছিল।

মার্কিন চিকিৎসা সংস্থা আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের মতে, অধিকাংশ ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণের পরও কয়েক বছর কার্যকর থাকে। তারা ২০০১ সালে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ২২টি ভিন্ন ওষুধের ৩০০০ ব্যাচ নেওয়া হয়। সেগুলো পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ওষুধের কাজ করার ক্ষমতা তাদের ওপর মুদ্রিত মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের চেয়ে অনেক বেশি। ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এএমএ প্রায় ৮৮ শতাংশ ওষুধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায় ৬৬ মাস বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশে প্রশাসনিক দ্বিধা
ঝিনাইদহের ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা নাজমুল হাসান দাবি করেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত খাওয়া নিরাপদ এবং এটি পরীক্ষিত।

বিপরীতে, সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ গুণগতমান হারিয়ে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে, এমনকি মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে।

করণীয় কী?

অপ্রয়োজনীয় ভয় নয়, সচেতনতা জরুরি।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিন।
অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, হার্টের ওষুধ, তরল ওষুধ, ইনজেকশন, ইনহেলার মেয়াদ শেষ হলেই বাদ দিন।
ওষুধ ঠান্ডা, শুষ্ক ও অন্ধকার স্থানে সংরক্ষণ করুন।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেলার সময় টয়লেটে নয়, ট্র্যাশে ফেলুন।
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানেই বিষ নয়, আবার শতভাগ নিরাপদও নয়। কিছু ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়ে প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই অন্ধভাবে আতঙ্কিত হওয়া যেমন ঠিক নয়, তেমনি অবহেলাও নয়। সচেতনতা, বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ