মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

পাখি পালন এখন শহুরে অনেক মানুষের অন্যতম শখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রায়ই চোখে পড়ে বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বারান্দায় ছোট ছোট খাঁচায় নানা রঙের, নানা আকারের পাখি। পাখিপ্রেমিদের জন্য তাই ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বসে জমজমাট পাখির হাটও।

প্রতি শুক্রবার দেশি–বিদেশি নানা জাতের পাখির হাট বসে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট এলাকায়।  রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খাঁচা ভর্তি পাখি নিয়ে পেশাদার ও শৌখিন  পাখি প্রেমিকরা এখানে পাখি কেনা বেচা করতে আসেন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই শুরু হওয়া এই হাট চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

এ হাটে ঢুকলেই কানে ভেসে আসবে কিচিরমিচির কলতান। আমাদের দেশের আইনে বিদেশি পোষা পাখি পালন বৈধ। তাই চাইলেই বাজরিগার, ফিঞ্চ, লাভ বার্ড, ককাটেইল, ডোভ, সান কনুর, ম্যাকাও, রেড লরি ইত্যাদি পাখি বাসায় কিনে নিয়ে যেতে পারেন।

পাখির হাটে বাজরিগার পাখির আধিক্যই বেশি থাকে। বাজরিগার পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পোষা পাখি। ছোট্ট এ পাখিটি বেশ বাহারি। বাজরিগার প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে বনাঞ্চলের পাখি। বাজরিগার প্রাকৃতিকভাবে সবুজ ও হলুদের সঙ্গে কালো রংয়ের হয়। এছাড়াও থাকে নীল, সাদা, হলুদ রংয়ের ছোপ। সারা গায়ে পেটের নিচে আকাশি, হলুদ বা অন্য রংয়েরও হয়ে থাকে।

বাজরিগারের পরেই পাখির হাটে ককাটেল বেশি দেখা যায়। ককাটেল হলো তোতাপাখির এক প্রজাতি। এরা তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, সুন্দর রঙের পালক এবং কথা বলার ক্ষমতার জন্য পোষা প্রাণী হিসেবে জনপ্রিয়। ককাটেল পাখির লম্বা লেজ এবং শক্তিশালী পা থাকে। এদের মাথার উপরে একটি ঝুঁটি থাকে যা এদের মেজাজের নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। পাখি প্রেমিকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের পাখি ককাটেল। আদুরে ককাটেল এর সৌন্দর্যের জন্য খুবই বিখ্যাত।

যারা শখ করে পাখি পোষেন লাভ বার্ড তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। লাভ বার্ড একটি বিদেশি জাতের পাখি। অনেক দামি হলেও বর্তমানে গ্রামে বা শহরে অনেকেই বাড়িতে পোষেন এই পাখি। লাভ বার্ড টিয়া প্রজাতির পাখি। এই পাখি শান্তি প্রিয়, চঞ্চল প্রকৃতির হয়। এরা খুব রোমান্টিক হয় ও আনন্দপূর্ণ থাকে।

রেড মুলাক্কান লরী, রেড কলার লরী, ক্যাটারিং লরী, রোজেলার মতো নান্দনিক পাখিগুলো  পাখির হাটের সৌন্দর্য্ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এসব পাখির দামও আকাশছোঁয়া্। মুলাক্কান লরীর মূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি হয়। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি পাখির হাটে ৫ লাখ টাকা দামের পাখিরও দেখা পাওয়া গেল। সেটা একটি সাদা কাকাতুয়া। কাকাতুয়া পাখি, যা সকল পাখালদের কাছে প্রিয় একটি নাম। ২১ টি প্রজাতির মধ্যে প্রায় সকল কাকাতুয়ারই কম বেশী আকর্ষণীয় পালক, ঝুটি এবং শক্তিশালী বাঁকানো ঠোঁট রয়েছে। এদের কথা বলা এবং অনুকরণের দক্ষতা অসাধারণ। কাকাতুয়ার অধিকাংশ প্রজাতিই সাদা রংয়ের। কিন্তু কিছু প্রজাতির গায়ের রঙ ধূসর, খয়েরী, উজ্জল কালো বর্ণেরও হয়ে থাকে

ঢাকার ব্যস্ত শহর যেন যান্ত্রিকতায় ঘেরা। এই ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতার মাঝেও মানুষ বেঁচে থাকে তার শখে। মানুষ তার নানা রকম শখেই খুঁজে পান মানসিক শান্তি। তেমনই একটি শখের নাম  ‘পাখি পোষা’। এ যেন শুধু শখ নয়, বরং আবেগ-ভালোবাসার অন্য এক নাম।

এনএইচ/