মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১১ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামি দলগুলোর ঐক্য-সমঝোতা কতদূর? গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী উত্তর-এর সমাবেশ  আদর্শিক বিরোধে গণ-অভ্যুত্থানে কারো অবদান অস্বীকার করা উচিত নয় : মাহফুজ আলম ইসলামি চার রাজনৈতিক দলের লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত ‘স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরতান্ত্রিক বন্দোবস্তের স্থায়ী বিলোপের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা বলা; ইসলাম কি বলে: শায়খ আহমদুল্লাহ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে ড. শোয়াইব আহমদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা সব ধরনের দূষণ রোধে আলেম-ওলামার সহযোগিতা চায় সরকার

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কে এই মাসুদ পেজেশকিয়ান?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছিলেন সংস্কারবাদী আইনপ্রণেতা। হৃদ্‌রোগবিষয়ক সার্জন থেকে এখন তিনি দেশটির ১৪তম প্রেসিডেন্ট। তার এ জয় সামাজিক স্বাধীনতা ও বাস্তবধর্মী পররাষ্ট্রনীতি প্রত্যাশী ইরানের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

কট্টরপন্থীদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে নারীর অধিকার, অধিক সামাজিক স্বাধীনতা, পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতায় সতর্কতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের ঘোষণা দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন ৬৯ বছর বয়সী মধ্যপন্থী পেজেশকিয়ান। খবর আল-জাজিরা ও রয়টার্সের

ইরানে আগামী বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হলে আগাম নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। 

পেজেশকিয়ানের উত্থান

মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের দেশটির পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের বাসিন্দা। তিনি ১৯৫৪ সালে সালে মাহাবাদ শহরে জন্ম নেন। তার বাবা ইরানি-আজেরি ও মা ইরানি-কুর্দি। 

পেজেশকিয়ান জেনারেল মেডিসিনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যখন মেডিকেলের তরুণ ছাত্র, তখন পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের দলে ভিড়েছিলেন।

মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৯৮০-এর দশকে ইরান–ইরাক যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। তার ওপর দায়িত্ব ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসাকর্মীদের মোতায়েন করার। 

১৯৯৪ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও এক সন্তান হারান তিনি। পরে আর বিয়ে করেননি। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই এখন বেঁচে থাকা তার।

প্রেসিডেন্ট খাতামির শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন পেজেশকিয়ান। 

ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থী জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে। সাবেক দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।

পেজেশকিয়ান ২০১৩ এবং ২০২১ সালেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।

২০২২ সালে পেজেশকিয়ান মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দাবি করেন। হিজাবসংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মাশা আমিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা যান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে কয়েক মাস ব্যাপক বিক্ষোভ চলে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি

পেজেশকিয়ান স্থবির হয়ে পড়া দেশের অর্থনীতি চাঙা করা, অব্যবস্থাপনার অবসান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নির্বাচনের আগে এক ভিডিও বার্তায় পেজেশকিয়ান ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘চেষ্টা করেও আমি যদি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হই, তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বিদায় জানাব। তা আর চালিয়ে যাব না। আমাদের জীবনে ও প্রিয় জনগণের সেবা করার ক্ষেত্রে সময় নষ্টের সুযোগ নেই।’

গত ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ হয়। প্রথম দফায় চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী ছিলেন পেজেশকিয়ান। তবে নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম দফায় কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় গত শুক্রবার দ্বিতীয় দফার ভোট হয়। প্রথম দফায় প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং অতি রক্ষণশীল সাইদ জালিলির মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, দ্বিতীয় দফার ভোটে মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৬৩ লাখ ভোট। বিপরীতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ জালিলি পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোট। অর্থাৎ মাসুদ পেজেশকিয়ান প্রায় ৩৩ লাখ ভোটের ব্যবধানে খামেনি সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ জালিলিকে হারিয়েছেন।

পেজেশকিয়ান জয়ী হওয়ায় তাকে বিশ্বশক্তিগুলোর স্বাগত জানানোর কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। তেহরানের দ্রুত বিকাশমান পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের তীব্র টানাপোড়েনে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারেন তিনি। এমনটাই ধারণা বিশ্লেষকদের।

তারা বলছেন, পেজেশকিয়ান এমন লোকদের সমর্থন পেয়েছেন, যাঁরা মূলত শহুরে মধ্যবিত্ত ও তরুণ জনগোষ্ঠীর বলে মনে করা হচ্ছে। ইসলামি ভাবধারার বিপরীত কোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো অভিযানে ব্যাপকভাবে আশাহত হয়েছেন এ শ্রেণির ভোটাররা।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ