সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


চিকিৎসায় সংস্কার 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||আশ্রাফুল আলম মোঃ নূরুল হুদা|| 

নতুন বাংলাদেশে যখন সবকিছুরই সংস্কার আওয়াজ শুনতেছি সে জায়গায় ডাক্তারদের রোগী দেখার ক্ষেত্রে  কিছু সংস্কার হওয়া খুবই অত্যাবশ্যক বলে আমি মনে করি। কারণ প্রতিটা মানুষ জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার শারীরিক, মানষিক ভালো-মন্দ তথা স্বাস্থ্যের সঠিক পরিচর্যায় মা-বাবার তদারকি, মহান রবের দয়া সহ ডাক্তারদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অপরিসীম। যে কোন ভালো-মন্দে সবসময়ই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয়।

পেশার জগতে ডাক্তার যারা তারা সবচেয়ে গুরোত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল জায়গায় বসা। তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দায়িত্বশীল ও আন্তরিক পর্যবেক্ষণের উপরই নির্ভর করে মানুষের শরীরের সুস্থতা ও অসুস্থতার সঠিক অবস্থান। যে ডাক্তার যত বেশী আন্তরিক ও দায়িত্বশীল, রোগীরা তাঁর কাছে ততোই নিরাপদ। এ কারণে এ পেশাকে সকল মহলেই পৃথক মর্যাদার আসনে দেখে। কিন্তু এমন মহৎ ও সম্মানের পেশা আজ অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ? কারণ কিছু সংখ্যক ডিগ্রিধারী ডাক্তারগণ সেবা ও সম্মানের পেশাকে ফ্রীজবন্ধি করে তা চূড়ান্ত ব্যবসায়িক বাইকে নিয়ে আসছেন। যা অত্যন্ত মর্মান্তিক!

অন্যান্য পেশায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয় বিশ্লেষণে ভুল হলে অনেক সময় তার পরিণতি বিষাক্ত বা ভয়াবহ হতে একটু সময় নেয়। কিন্তু এ পেশায় রোগীর রোগ বিশ্লেষণে যদি খামখেয়ালী বা আন্তরিকতার অভাব থাকে তাহলে এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ, এমনকি মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আসে। ফলে চিকিৎসকগণ সর্বমহলে যেমন মর্যাদার আসন অলংকৃত করেছেন, তদ্রুপ তাদের জবাবদিহীতার ক্যামেরাও অনেক পাওয়ারফুল। শুধু দুনিয়ার পরিবেশেই না আখেরাতেও এর কঠিন জবাব দিতে হবে।

অনেক সময় আলোচনায় জানা যায়, আমার মায়ের/ বাবার বা যে কোন একজনের ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসার টাকার অভাবে তারা মৃত্যু বরণ করেছেন। তখন আমি ছোট। তা দেখে ও শুনে ভীষণ আঘাত পেয়েছি। ফলে তখনকার জেদই আজ আমাকে এ পর্যায় নিয়ে এসেছে।

যে কারণেই ডাক্তার ও রোগীর রোগ বিষয়ক আলোচনা যত বেশী আন্তরিক হবে উভয় পক্ষই এতে বেশী উপকৃত হবেন। রোগী রোগ থেকে এ উছিলা ও আল্লাহর দয়ায় মুক্তি পাবে। আর ডাক্তার পাবে তাঁর সফলতার তৃপ্তি ও মর্যাদার আসন। কিন্তু আজকাল বাস্তব চিত্র কেমন জানি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে চলে আসছে। চেম্বারের ফটকে সুন্দর করে একটা কাগজ লটকানো থাকে।

লেখা থাকে ব্যবস্থাপত্র ফি, নতুন রোগী, পুরাতন রোগী।

নতুন ও পুরাতন রোগীর টাকার ব্যবধান যেমনই, পুরাতন হওয়ার সময়টা একেবারেই নামমাত্র। যা অনেক সময় প্রেসক্রিপশনের টাইমের সাথে টাইট শিডিউলে বাধা। আর কোনভাবে রোগী যদি একটু ভুলে যায়, তাহলে তার শত কথারও কোন জবাব নেই।

রোগী প্রেসক্রিপশন নিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে বের হয়ে দাঁড়ানোর আগেই বেশকিছু অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান সেমি ডাক্তার ঔষধ প্রতিনিধিগণ রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে ক্যামেরার প্রতিযোগিতা শুরো করেন। এটা আবার কোন আবিষ্কার?  রোগী বুঝবে দূরের কথা অনেক সুস্থ মানুষই বিষয়টি বুঝতে সময় লাগে।

অনেক চেম্বারে এও শুনতে হয় রোগীর রোগ নিরাময়ে টেস্টগুলোকে এই, এই জায়গায় করাবেন তাহলে ভালো ও সুন্দর রিপোর্ট আসবে। তার মানে কী? এতে কী কোন সহজ বা কঠিন প্রশ্নের সম্ভাবনা থাকে?

যদি কথাটা সত্যিই সঠিক ও স্বার্থহীন আন্তরিকতায় মিশ্রণ ঘটে। তাহলে উনি শুধু রোগী বা সমাজ ব্যবস্থায় নয় মহান রবের দরবারেও সম্মানের আসনে পুরষ্কৃত হবেন।

রোগীতো শুধু অসুস্থ হয়ে রোগী নয়, রোগীকে ডাক্তারের মেকাবিলায় আসতে প্রস্তুতিটাও আরেকটার রোগীর কাছাকাছি। তাকে মোকাবেলা করতে হয় তারিখ, সময়, বাহন, লোকবল,  প্রেসক্রিপশন, টেষ্ট, ফার্মেসী, সার্বিক যোগাযোগ সহ অর্থের সঠিক সমন্বয়। যা বহুলাংশেই হতাশা ও ব্যাপকার্থে কঠিন চ্যালেঞ্জিং।

তাই রোগির আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি বর্তমান সময়ে অনেকের জন্য অনেকটাই না বলা কষ্টের কারণ।এ ক্ষেত্রে সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন ডাক্তারদের প্রতি কিছু বিনীত অনুরোধ নিম্নরূপ :

১. বেশির ভাগ ডাক্তার মহোদয়গণ চিকিৎসাকে বাণিজ্য মনে করেন। দয়া করে আপনার সম্মুখে উপস্থিত আপনার রোগীকে আপনার শরীরের রোগ মনে করে চিকিৎসা করুন।

২. আপনি সরকারী ডিউটি শেষে যখন প্রাইভেট চেম্বারে বসেন তখন রোগির সামর্থ্যের একটু মানবিক মূল্যায়ন করুন। কারণ এটা নিশ্চিত আপনি সম্মানের সাথে ডাবল ইনকামে আছেন। আর আপনার রোগী হয়তোবা ইনকাম বিহীন হাওলাত বা সুদে টাকা নিয়ে আপনার মোকাবিলা করছে।

৩. বেশী রোগি দেখার চিন্তায় রোগিকে সময় না দিয়ে নামমাত্র সময় দিয়ে রোগিকে ভুল প্রেসক্রিপশন দিয়ে হয়রানি বা মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবেন না।

৪. রোগী সবাই চিন্তা চেতনায় অগ্রসর বা বুদ্ধিমান নাও হতে পারে এ ক্ষেত্রে অন্য কোন ডাক্তার দেখানোর পর আপনার কাছে গেলে আপনি সামান্য অজুহাতে তার প্রতি চেচিয়ে বা টাইমপাস মূলক অনৈতিক কাজটি করবেন না।

৫. বেশী টাকা রোজির আশায় রোগির যদি সত্যিকারভাবে কোন সমস্যা না থাকে তাহলে খামাখা অযাচিত টেস্ট দিয়ে হয়রানী করবেন না।

৬. আপনার চেম্বারের ফটকে প্রেসক্রিপশন ফি উল্লেখ করার সময় নিজে ডাবল ইনকামে আছেন এ কথা মাথায় রেখে প্রেসক্রিপশন ফি যত কমিয়ে লেখা যায়, তার খেয়াল দিলে আপনি অবশ্যই রোগী সহ সকল সমাজে সমাদৃত হবেন।

মোটকথা আমরা সকলেই রক্ত মাংসে আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ। সকলেই সকলকে নৈতিকভাবে সম্মান ও সুস্থতার সুরক্ষা দেই। তাহলেই আমাদের জাগতিক চেহাররার পাশাপাশি আখেরাতের চেহারাটাও সুন্দর করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), বড়দল উচ্চ বিদ্যালয়,তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ