প্রখ্যাত ইসলামিক আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, ‘তালাক কোনো প্রশংসনীয় কাজ নয়; বরং এটি হলো নিরুপায় অবস্থায় একটি বিষাক্ত সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার সর্বশেষ উপায়।’ তিনি দাম্পত্য সম্পর্কে ধৈর্য, সহনশীলতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘ভাঙার আগে একবার নয়, শতবার ভাবা উচিত- সংশোধনেই সমাধান, বিচ্ছেদে নয়।’
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, পরিবার হলো মানবসভ্যতার সূতিকাগার। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে মানবসভ্যতা যে বন্ধনের ওপর টিকে আছে, তার নাম পরিবার। অথচ আজ খুব তুচ্ছ কারণে প্রতিদিন অসংখ্য সংসার ভেঙে যাচ্ছে।
একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ৩৭টি দাম্পত্য সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি ৪০ মিনিটে একটি তালাক হচ্ছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক বৈধ হলেও এটি অত্যন্ত ‘অপছন্দনীয় কাজ’। কোথাও পরিবার ভাঙার সংবাদে ‘শয়তান যতটা খুশি হয়, অন্য কোনো ঘটনায় সে ততটা খুশি হয় না।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘তালাকের ফলে স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে যায়, তারা হয়তো নতুনভাবে জীবন শুরু করতে পারে, কিন্তু এর নির্মম বলি হয় সন্তানরা। বাবা-মার বিচ্ছেদের মানসিক আঘাত তারা সারাজীবন বয়ে বেড়ায়।’
তিনি আরও বলেন, ইসলাম তালাককে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেয়নি; বরং এমনভাবে তালাকের নির্দেশ দিয়েছে যেন ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেলে আবারও মিলনের সুযোগ থাকে। কিন্তু আজ মানুষ সামান্য রাগ বা অভিমানে ভেবে না দেখে চূড়ান্ত তালাক দিয়ে বসে, যা পুনর্মিলনের সব পথ বন্ধ করে দেয়।
‘তালাকের আগে ভাবুন, জানুন, অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ নিন,’ বলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘নবীজির (স.) সংসারেও মনোমালিন্য ঘটেছিল, কিন্তু তা কখনো স্থায়ী হয়নি। বরং তিনি অভিমান ভেঙে স্ত্রীদের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করেছেন।’
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজ হয়তো মনে হচ্ছে একা থাকাই স্বস্তির, কিন্তু এই তারুণ্য স্থায়ী নয়। বার্ধক্যে যখন একলা বিছানায় অসুস্থ হয়ে কাতরাবেন, তখন পাশে মাথায় রাখার মতো একটি ভালোবাসার হাতও পাবেন না।’
শেষে তিনি বলেন, ‘সংসার ঠিক মাটির হাঁড়ির মতো; গড়তে সময় লাগে, ভাঙতে লাগে এক মুহূর্ত। কিন্তু ভাঙার পরই বোঝা যায়, এটিই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমরা কেউই নিখুঁত নই। মতের অমিল, ভুল বোঝাবুঝি সবই জীবনের অংশ। তবু একদিন জীবনসঙ্গীই হয়তো হবে আপনার শেষ আশ্রয়। তাই বিচ্ছেদের আগে ভেবে নিন- সংশোধনেই সমাধান, বিচ্ছেদে নয়।’
এলএইস/