শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ভারতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবিতে সাভারে হেফাজতের বিক্ষোভ আমরা একজোট হয়ে ভারতকে জবাব দেব: মাওলানা ফজলুর রহমান পটিয়ার সাবেক সিনিয়র উস্তাদ মাওলানা আব্দুল মান্নান দানিশের ইন্তেকাল নারী সংস্কার কমিশনের কিছু ধারা কোরআন-সুন্নাহর খেলাপ: জামায়াত আমির  ‘নারী সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য ধর্মীয় ও পারিবারিক কাঠামো ধ্বংস করা’ ঐতিহাসিক দারোগা বাগানের ৩ একর জায়গা উদ্ধার করলেন বন বিভাগ  পেহেলগাম হত্যার তীব্র নিন্দা দারুল উলুম দেওবন্দের অবশেষে ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করল পাকিস্তান হজযাত্রায় গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য সুখবর! পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে ভয়াবহ বোমা হামলা

কওমি শিক্ষা নিয়ে ভুল ধারণার সত্যটা কী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
কওমি মাদরাসার ক্লাসের দৃশ্য

|| আব্দুল্লাহ আনাস ||

⛔ ‌‘পুরনো’, ‌‘কট্টর’, ‘বিচ্ছিন্ন’ — এই সব ধারণা কতটা সত্যি?

বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থায় কওমি মাদরাসাগুলোর অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং মানবিক গুণাবলি বিকাশে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এখনো সমাজে কওমি মাদরাসা নিয়ে কিছু নেতিবাচক ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত অবদান ও শিক্ষার গভীরতাকে আড়াল করে রাখে।

আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সেই ভুল ধারণাগুলো খণ্ডন করে তুলে ধরছি বাস্তব চিত্র। কারণ, সত্য জানা আমাদের সবার দায়িত্ব।

❌ ভুল ধারণা ১: কওমি মাদরাসা মানেই শুধু ধর্ম শেখানো হয়

✅ বাস্তবতা:

কওমি মাদরাসাগুলোতে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আরবি সাহিত্য, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস, ও দর্শনসহ বিভিন্ন বিষয়ের গভীর পড়াশোনা হয়। এমনকি এখন অনেক প্রতিষ্ঠান মৌলিক ইংরেজি, কম্পিউটার এবং সমসাময়িক বিষয়গুলোও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছে।

❌ ভুল ধারণা ২: কওমি ছাত্ররা আধুনিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন

✅ বাস্তবতা:

আজকের অনেক কওমি শিক্ষার্থী অনলাইনে ইসলাম প্রচার, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ নানা সেক্টরে দক্ষতার ছাপ রাখছে। তারা ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় এবং সমাজের সঙ্গে সুসংগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।

❌ ভুল ধারণা ৩: কওমি ছাত্ররা কট্টর মনোভাবের হয়

✅ বাস্তবতা:

কওমি ছাত্রদের নৈতিকতা, বিনয় এবং মানবিক আচরণ সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তারা মসজিদে ইমামতি, দরস দেওয়া, সমাজসেবা ও দাওয়াতি কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে, যা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবামূলক। নরম স্বভাব ও সহনশীলতা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

❌ ভুল ধারণা ৪: কওমি ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই

✅ বাস্তবতা:

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদীসকে সাধারণ ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্সের সমতুল্য ঘোষণা করে। ফলে কওমি শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায়ও প্রবেশাধিকার পেয়েছে।

❌ ভুল ধারণা ৫: কওমি ছাত্ররা সমাজের বোঝা

✅ বাস্তবতা:

অসংখ্য কওমি ছাত্র সমাজে নিঃস্বভাবে ইমাম, খতিব, শিক্ষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ কারো কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবি করছেন না, বরং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।

শেষ কথা: দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, সত্যকে চিনুন

আজকের দুনিয়ায় যখন নৈতিকতার অবক্ষয় বেড়ে চলেছে, তখন কওমি মাদরাসা একটি শক্তিশালী মূল্যবোধের দুর্গ হিসেবে কাজ করছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, বরং সমাজের জন্য এক শ্রেষ্ঠ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে।

তাই কওমি মাদরাসাকে ভুল বোঝার আগে তাদের বাস্তব অবদানকে জানা এবং স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। সচেতন সমাজ গঠনে কওমি শিক্ষার্থীরা আমাদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

লেখক: আওয়ার ইসলাম-এর নিয়মিত প্রতিবেদক। ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ বিষয়ক লেখক। 

 


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ