বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শান্তিগঞ্জ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করতে শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ বাসেরই ফিটনেস সার্টিফিকেট ও চালকের লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল না বা কাগজপত্র ছিলই না।
একজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী তাকবিল হোসেন বলেন, “আমরা পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছি যেন ফিটনেসবিহীন বাস আটক করা হয়। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরাই কাগজপত্র যাচাই করি—কোনো বাসেরই কাগজ ঠিক পাইনি। এসব বাস এখন চলন্ত ঘাতকযন্ত্রে পরিণত হয়েছে।”
শিক্ষার্থীরা জানান, দুর্ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ঘাতক বাসচালক এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তারা ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, “যদি দায়ী চালক ও মালিককে গ্রেপ্তার না করা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।”
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে শহরে ফেরার পথে বাহাদুরপুর এলাকায় একটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা জাহান খুশী (১৭) এবং যাত্রী শফিকুল ইসলাম (৫০)। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী (১৮)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত আরও দু’জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুকান্ত সাহা বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করছি। আমরা নিজেরাও নিরাপদ সড়ক চাই। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
শিক্ষার্থীরা বলেন, “এই দুর্ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের সড়ক অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবের ফল। আমরা অবিলম্বে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।”
এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ জেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও বড় আন্দোলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এসএকে/