বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট ২০২৫ ।। ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১৩ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
জুলাই সনদ ও পিআর নিয়ে সুরাহা না করেই নির্বাচন আয়োজনে উদ্বেগ: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান ওসমান বিন হাদীর ফ্যাসিবাদ নির্মূল ও পূর্ণ সংস্কারের জন্য ঐক্যের আহ্বান: বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বিএনপি কোনো দক্ষিণপন্থি বা উত্তরপন্থি দল নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ রমজানের আগে নির্বাচন দিয়ে সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে : রিজভী নির্বাচনের আগে সংস্কার, বিচার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে: খেলাফত মজলিস জিম্মিদের প্রাণহানির আশঙ্কায় গাজা দখলের বিরোধিতা করলেন ইসরায়েলের সেনাপ্রধান সবার আগে ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন কানাডায় ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণাজনিত অপরাধ বেড়েছে ১৮০০ শতাংশ শ্রীমঙ্গলে স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মাননা প্রদান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

প্রস্তাবিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে ইসলামি দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মোহাম্মাদ হুজাইফা ||

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধনে ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা—‘সাম‍্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’—নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষত ধর্মীয় ও বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বামপন্থী চারটি দল এই প্রস্তাবনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও কয়েকটি ইসলামি দল তাদের ভিন্নমত এবং পর্যালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। এ নিয়ে কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছে আওয়ার ইসলাম।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত মূলনীতিগুলো মোটামুটি ঠিক আছে। এর মধ্যে আমি কোনো সমস্যা দেখি না। তবে পূর্বের চারটি মূলনীতি ছিল অন্য মতবাদ থেকে ধার করা এবং তার মধ্যে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' ছিল। এটি ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তাই সেটি বাতিল করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ (৯২% মুসলমান), তাই সংবিধানে রাষ্ট্র  পরিচালনার মূলনীতিতে ইসলাম প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তিনি এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক সম্ভাবনার ইঙ্গিত বলেও উল্লেখ করেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের  মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রস্তাব হলো সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকতে পারবে না। এখানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে। এই প্রস্তাব দেওয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্ট ভাবে বলেছে, সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা বাতিল কিংবা ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল’ এগুলো নির্বাচিত সংসদ করবে। এগুলো নিয়ে আজ আলোচনা হবে না। তবে আজ কমিশন যে প্রস্তাবনা গুলো দিয়েছে এগুলোর সাথে জমিয়ত একমত পোষণ করেছে।

জমিয়ত মহাসচিব বলেছেন, তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে এই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসাবে নির্ধারণ করা উচিত, আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস। তবে ভিন্ন ধর্মালম্বীদের যেন অমর্যাদা না হয়, এবং তারা যেন স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারে এজন্য সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি যুক্ত করা যেতে পারে।

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নতুন প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর মধ্যে বড় কোনো সমস্যা নেই। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দলগুলো যদি এগুলোকে গ্রহণযোগ্য মনে করে, তাহলে তা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা ইসলামি দল হিসেবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা চাই। কিন্তু দিন প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই আপাতত আমাদের কার্যকর সিঁড়ি।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো ঘুরেফিরে আগের চারটি মূলনীতির মধ্যেই রয়েছে। তাই আমরা চাই পুরনো মূলনীতিতেই ফিরে যাওয়া হোক, তবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল  করে তার স্থানে 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' যুক্ত হোক।

ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া মোটামুটি ইতিবাচক হলেও তারা স্পষ্টভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বিষয়টিকে গ্রহণযোগ্য বলে মানছে না। তাদের দাবি, এই শব্দটি ইসলাম বিরোধী এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় তা বাতিল করতে হবে।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ এক বিতর্ক চলছে। ইসলামি দলগুলোর অবস্থান প্রমাণ করে, তারা ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ চায় এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ