রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
সিলেটে ১ মাস ধরে নিখোঁজ আবিদুল মিয়া সিলেট মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড যুব জমিয়তের আহবায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন পেশীশক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধে পিআর পদ্ধতির প্রয়োজন- আহমদ আবদুল কাইয়ূম জেদ্দায় হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী নভেম্বরে আজ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিস বানিয়াচং উপজেলা শাখার ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন ‘নীলনদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি জামায়াতেও ইসলাম নেই’ কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল, সম্পাদক মাজহারুল ‘ইসলামি শক্তির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন’ গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনা, নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা

দুর্নীতি প্রতিরোধে সাফিয়ার ‘মাফ করেন’ আন্দোলন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাফিয়া সারমিন
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছি। যখন প্রথম বর্ষে পড়ি, তখন থেকেই দেখছি ক্যাম্পাসে কিছু মানুষ আছে যারা ভিক্ষা করে । কিছু ছোট ছোট বাচ্চাও আছে যারা চকলেট, ফুল এসব শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে, না হয় টাকা চায়।তারা আমাদের কাছে যখন টাকা চায়, তখন বলে ‘দুডা টাহা দিবেন? বাত খামু ।’

তখন আমাদের কেউ কেউ উত্তর দেই এরকম – ‘দুই টাকা দিয়ে কি ভাত পাওয়া যাবে?’, ‘মাফ করেন’, ‘অন্যদিকে দেখেন’ অথবা আমরা মাঝে মাঝে ফিরেও তাকাই না ।

আমি নিজেও এভাবেই তাদের ফিরিয়ে দেই । কিন্তু যখন আমাদের কাছেই সরকারি চাকরি দেয়ার লোভ দেখিয়ে ঘুষ চাওয়া হয়, তখন আমরা বলতে পারি না ‘মাফ করেন’। কারণ একবার সরকারি চাকরি পেয়ে গেলে, সারা জীবন আরাম আয়েশ করে কাটিয়ে দেয়া যাবে ।

আর চাকরি হয়ে গেলে সচেতন বা অবচেতন মনে একটু আধটু ঘুষ খেলে বা দুর্নীতি করলেও কোন ক্ষতি নেই, টাকটাও উসুল করা যাবে। আমরা দেশের এসব প্রশাসনিক ভিক্ষুকদের বলতে পারি না ‘মাফ করেন’ ।

উল্টো দিকে যাদের সাহায্য করার দরকার, তাদেরকে বলি  ‘মাফ করেন’, আর মুখ ফিরিয়ে নেই তাদের থেকে। সমাজটাকে তো আমরাই ধ্বংস করছি একটু একটু করে, তবে প্রশাসনকে দুর্নীতির কালিমা দিয়ে নিজেদের নিষ্পাপ দাবি করি কিভাবে?

আমাদের দেশে দুর্নীতি- ঘুষ বন্ধের জন্য আমাদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হবে না, অনশন করতে হবে না, অথবা বড় বড় পত্রিকায় বড় বড় অনুচ্ছেদ লিখেও লাভ হবে না । আমাদের যা করতে হবে তা হল, যখনই কেউ আপনাকে বলবে ‘এত টাকা দাও, চাকরি হয়ে যাবে, বা তোমার কাজ হয়ে যাবে।’ তখন আপনি বলবেন ‘মাফ করেন’ ।

একবার ভেবে দেখুন তো, যদি কেউ ঘুষ দেয়ার বদলে বলে ‘মাফ করেন’, তখন সেই লোকটার মুখ দেখেই বুঝতে পারবেন, আপনার প্রতিবাদ কম শক্তিশালী নয়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যদি পণ করি যে আমরা সবাই এই দুটি শব্দ দিয়ে প্রতিবাদ করব। অন্তত আমি বিশ্বাস করি, এই ছোট্ট দুটি শব্দেই (মাফ করেন) হবে।

এটা হতে পারে আমাদের প্রতিবাদের মার্জিত ভাষা, এটার মাধ্যমেই আমরা নিজ নিজ জায়গায় থেকেই প্রতিবাদ করতে পারব। হয়ত আমার এই কথাগুলো আজব মনে হতে পারে, কিন্তু তারপরও ভেবে দেখুন, যখন কেউ আপনার কাছে ঘুষ চাইবে আর তখন আপনি বলবেন ‘মাফ করেন’, তখন তার মুখ অবয়ব কেমন হবে একটু ভাবুন।

জানি এটা করলে হয়তো আমার সরকারি চাকরি বা ভালো চাকরি মিলবে না, কিন্তু সমাজকে রোগমুক্ত করা যাবে। আর এসব রোগ থেকে মুক্ত করা এ তো আমাদেরই দায়িত্ব। একবার ভেবে দেখুন তো যদি সবাই বলে ‘মাফ করুন’, তবে কার সাধ্য তার কাছ থেকে ঘুষ নিবে?

এ কথাটা শুধু ঘুষ আদান প্রদানের বেলায় প্রযোজ্য নয়, যে কোন ধরনের দুর্নীতির বেলায় প্রযোজ্য, যে কোন অন্যায় কাজের বেলায় প্রযোজ্য। কেউ যদি আপনাকে কোন অন্যায় প্রস্তাব করে, আপনি এভাবেই প্রতিবাদ করুন, বলুন ‘মাফ করেন’।

আর দুর্নীতি শুধু যে প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ করেন, সেটা ঠিক না।দুর্নীতি আমরা জনগণও করে থাকি, সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তারা আমাদের বলবেন ‘মাফ করেন ’।

আসুন আমরা যাদের একটা হাত বা পা নেই, যে শিশুগুলো কোনদিন স্কুলে যেতে পারবে না, যে মানুষগুলো ফুটপাতে, ওভারব্রিজে মানুষের পায়ের কাছে পড়ে থাকে, তাদের ‘মাফ করেন’ না বলে ঐ সব ভিক্ষুকদের বলি ‘মাফ করেন’।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ