|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||
শিশু জন্মের পর ধাপে ধাপে তার বৃদ্ধি ও বিকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভাষা ও কথা বলার ক্ষমতা। সাধারণভাবে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে শিশুরা ছোট ছোট শব্দ বলতে শেখে, দুই বছর নাগাদ বাক্য গঠন করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়—শিশু সময়মতো কথা বলা শুরু করে না, যা অনেক অভিভাবকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
দেরিতে কথা বলার সাধারণ কারণসমূহ:
শ্রবণ সমস্যা: শিশুর কানে সমস্যা থাকলে সে আশপাশের শব্দ সঠিকভাবে ধরতে পারে না, ফলে কথা বলায় বিলম্ব ঘটে।
পারিবারিক ইতিহাস: পরিবারের কারো যদি ছোটবেলায় দেরিতে কথা বলার ইতিহাস থাকে, তাহলে শিশুর ক্ষেত্রেও এ সম্ভাবনা থাকে।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD): এই ক্ষেত্রে শিশুর সামাজিক মেলামেশা ও ভাষা বিকাশে সমস্যা দেখা দেয়।
ডেভেলপমেন্টাল ডিলে: কিছু শিশু সবদিক দিয়েই একটু ধীরগতিতে বেড়ে ওঠে।
কম সামাজিক যোগাযোগ: শিশুর আশপাশে যদি কথা বলার পরিবেশ কম থাকে বা কেউ নিয়মিত কথা না বলে, তাহলে ভাষা বিকাশে সমস্যা হতে পারে।
লক্ষণ যেগুলোতে সতর্ক হতে হবে:
- ১.৫ বছর বয়সেও কোনো শব্দ না বলা
- ২ বছর বয়সেও দুই-শব্দের বাক্য গঠন করতে না পারা
- নিজের প্রয়োজন বোঝাতে কেবল ইশারার উপর নির্ভর করা
- চারপাশে শব্দ বা কথা শুনেও প্রতিক্রিয়া না দেওয়া
- কথা বলা বা শব্দ উচ্চারণে স্থির উন্নতি না হওয়া
করণীয়
শিশুর সাথে বেশি বেশি কথা বলা: গল্প বলা, গান গাওয়া বা নাম ধরে ডাকলে শিশুর কথা বলার আগ্রহ বাড়ে।
শ্রবণ পরীক্ষা: দেরিতে কথা বলা মানেই শুধু মানসিক সমস্যা নয়—শ্রবণ সমস্যাও একটি বড় কারণ হতে পারে।
স্পিচ থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া: প্রয়োজন হলে শিশুকে স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট দেখানো উচিত।
স্ক্রিন টাইম কমানো: মোবাইল বা টিভি শিশুর ভাষা বিকাশে প্রতিবন্ধক হতে পারে।
অবহেলা না করে পর্যবেক্ষণ করুন: প্রত্যেক শিশু আলাদা, কেউ কেউ একটু দেরিতে কথা বলতে শিখলেও তা স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ বিলম্ব হলে চিকিৎসা জরুরি।
শিশুর দেরিতে কথা বলা সবসময় কোনো জটিল সমস্যার ইঙ্গিত নয়, তবে বিষয়টি অবহেলা না করে সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। প্রয়োজন হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে পারে।
এসএকে/