শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ।। ১১ পৌষ ১৪৩২ ।। ৬ রজব ১৪৪৭


গভীর রাতে হাদির কবরের পাশে অঝোরে কাঁদলেন আবদুল হাই সাইফুল্লাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মৃত্যুর সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও জুলাই বিপ্লবী ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে ভুলতে পারছে না মানুষ। সারাক্ষণই তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনতা। দোয়া করছে এই শহীদের জন্য।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিনগত গভীর রাতে হাদির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে দেখা গেল ইসলামী বক্তা মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে।

এসময় কাঁদতে কাঁদতে ওসমান হাদির জন্য দোয়া করেন সাইফুল্লাহ।

সামািজক যোগাযোগ মাধ্যমে এর একটি  ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওসমান হাদির কবরের পাশে দোয়া করার সময় চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে সাইফুল্লাহর।

এর আগে বৃহস্পতিবার সারাদিনও ওসমান হাদির কবরের পাশে সাধারণ লোকজনকে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায়। অনেকে ঢাকার বাইরে দূর-দুরান্ত থেকে আসেন হাদির কবরের পাশে। এদের সবাই শহীদ হাদি ও তার পরিবারের জন্য দোয়া করেন। কয়েকজনকে বিচার না হওয়ার আক্ষেপ করতেও শোনা যায়।

গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী। রিকশায় থাকা হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ওসমান হাদি পরে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ গড়ে তুলে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আলোচনায় আসেন। বিভিন্ন টেলিভিশনের টক শোতেও নিয়মিত আমন্ত্রণ পেতে থাকেন তিনি।

তার যুক্তিতর্কের অনেক ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। 
গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাসখানেক আগে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ওসমান হাদি। তিনি গত নভেম্বরে নিজের ফেসবুক পেজে বলেছিলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি নম্বর থেকে তাকে ফোনকল করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ ক্যাডাররা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। তবে প্রাণনাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইনসাফের লড়াই থেকে পিছিয়ে যাবেন না তিনি।

১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় প্রচারে যাওয়া ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেলে আসা দুই সন্ত্রাসী। রিকশায় থাকা হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর দেখে সেখান থেকে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায় সরকার। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যান হাদি। ১৮ ডিসেম্বর রাতে তার মৃত্যুর খবর জানান চিকিৎসকরা।

মৃত্যুর পর ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ওসমান হাদির লাশ বাংলাদেশে আনা হয়। সেখান থেকে লাশ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়। এরপর ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় লাখ লাখ জনতার অংশগ্রহণে তার জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজার পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে চিরসমাহিত করা হয়।

ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল সন্দেহভাজন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সল করিম মাসুদ ও তার সহযোগী আলমগীর শেখ। তারা ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে সেদিনই খবর ছড়ানো হয়। যদিও গোয়েন্দা পুলিশ এ বিষয়ে সন্দেহের কথা জানিয়ে বলছে, ফয়সাল করিম মাসুদের অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন এমন নির্ভরযোগ্য তথ্যও পাওয়া যায়নি।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ