ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিদওয়ান মাযহারী ছাত্র সমাজ ও দেশবাসীকে ৫৫ তম বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, বিজয়ের ৫৪ তম বছর পেরিয়ে আজ ৫৫ তম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ভিনদেশীদের ষড়যন্ত্র কাটিয়ে দেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতার স্বাদ ফিরে পায় গত ২৪ -এর জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী এ সময়ে এসে যদিও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে, তথাপি দেশের সর্বশ্রেণীর-সর্বসাধারণের সর্ব সেক্টরে স্বাধীনতার সুফল ভোগে এখনও ব্যত্যয় ঘটছে,
অত্যাচারীদের কবল থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে আমাদেরকে একটি স্বাধীন ভূখন্ড উপহার দিয়েছিলেন বাংলার শ্রেষ্ঠ মা-দের সাহসী সূর্য সন্তানেরা, কিন্ত অত্যন্ত আফসোস এবং পরিতাপের বিষয় হলো: ফ্যাসিস্টের পতনের পরেও বাংলার প্রতিটি মানুষ নিজেদের কে স্বাধীন দেশের পূর্ণ স্বাধীন নাগরিক হিসেবে দাবি করতে পারছেনা, এখনো পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছে। কারণ দেশে অন্যায়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকারী একটি শ্রেণীর স্বার্থপরী অপতৎপরতায় আমাদের প্রাণের জন্মভূমি এতদিন ভিনদেশী স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেট চক্রের ভয়াল থাবায় জর্জরিত ছিল, এহেন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছুটা ভূমিকা দেখা গেলেও অনেকাংশে এর ব্যত্যয় ঘটছে। জুলাই আন্দোলনের বীর যোদ্ধাদের নিরাপত্তাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, যা রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে নাগরিকের জান-মালের যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজও সেই অস্থিরতা কাটেনি।
আমরা আশা করছি- সর্বস্তরের জনতার ভূমিকায় আধিপত্যবাদের ভয়ংকর কবল থেকে দেশ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে।
ছাত্র জমিয়ত সভাপতি আরো বলেন, এতদিন দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার সমূহ কেঁড়ে নেয়া হয়েছিল,
বাক স্বাধীনতা, গণ মাধ্যমের স্বাধীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক কর্মসূচি পালনের স্বাধীনতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের স্বাধীনতা, ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বকীয়তা চিরস্থায়ী ভাবে হরণ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল, নিরপরাধ আলেমদের কে জালিমের অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মসজিদের মিম্বারগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ ও উলামায়ে কেরামের কন্ঠরোধ করার চরম অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছিলো, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ নানাবিধ হয়রানির স্বীকার ছিল, তেল, গ্যাস, বিদ্যুত ও দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন।
সন্ত্রাসী কায়দায় জনগণের ভোটের অধিকার খর্ব করা হচ্ছিল।
সুকৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এবং ইসলাম বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করে আগামীর দেশ গড়ার কারিগর ভবিষ্যত প্রজন্ম কে মেরুদণ্ডহীন করে দেয়ার অনৈতিক প্রয়াস চালানো হচ্ছিল, সর্বত্রই অপশাসনের ছোঁয়ায় দেশ দূষিত হচ্ছিলো।
তাই আজকের এই মহান বিজয় দিবসে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই—আমরা আমাদের স্বাধীন দেশের কার্যকরী সার্বভৌমত্ব চাই, লুন্ঠিত মৌলিক অধিকার ফেরত চাই, কৃষক, শ্রমিকের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের মূল্যায়ন চাই, কারাবন্দী নিরপরাধ আলেমদের মুক্তি চাই, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহ যাবতীয় সকল অধিকার নিশ্চিত চাই।
এদেশের ছাত্র সমাজের গৌরবময়- উজ্জল ভবিষ্যত চাই।
শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের প্রতি নিজেকে সঠিকভাবে গঠন করে আগামীর সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে এবং দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার এবং দেশের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানান।
পরিশেষে তিনি দেশ বিজয়ের সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
আরএইচ/