সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ।। ১১ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭


আত্মমর্যাদার মাধবপুর ও উলামা পরিষদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||মাসউদুল কাদির||

আমি মাধবপুর উপজেলা উলামা পরিষদের মিডিয়া সম্পাদক। দায়িত্বটা বড় কিন্তু কাজের কাজ তো আসলে কিছুই আমরা করতে পারি না। একটি সংগঠন চাইলে কি করতে পারে, মানুষকে সাংগঠনিকভাবে একত্র থাকতে হয় কী কারণে? এ প্রশ্নগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

যে সংগঠন তরুন প্রজন্মকে নিয়ে ভাবে না, শিশু-কিশোরদের নিয়ে চিন্তা করে না -সে সংগঠনের আদতে কোন দরকার নেই। তবে হ্যাঁ, পকেট সংগঠনের সভাপতি সেক্রেটারি কিংবা অন্যান্য পদের অনেকে মালিক বনে যেতে পারেন।  সেটা ভিন্ন বিষয়।

আজকে মাধবপুর উপজেলা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।  মাধবপুর উপজেলা উলামা পরিষদ গুণী আলেমদের মেহনতের ফসল। দ্বীনকে উচ্চকিত করতে যে আলেমগণ হরহামেশা পরিশ্রম করে চলেছেন-তারাই উলামা পরিষদের কান্ডারী। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কবুল করুন।

তারুণ্যকে বাঁচানোর দায়িত্ব : নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর গল্প এটি। একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য অবশ্যই তারুণ্যকে নিয়ে কাজ করা দরকার। স্মার্ট ও তথ্যপ্রযুক্তির কবলে পড়ে এখন তারুণ্য বেঁকে বসেছে, জোয়া এবং মাদকের নেশায় উন্মাদ হতে চলেছে। এদেরকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে।  আলিমগণ চাইলে মাদকের চালানসহ সেসব দুষ্কৃতিকারীদের ধরিয়ে দিতে পারেন। মাদক ব্যবসায়ীদের পেছনে টেনে ধরতে পারেন একমাত্র আলেমগণই। নৈতিকতার কাছে অর্থ ভৈবব কোন কাজেই আসে না।

মাদকের ছোবল থেকে সমাজকে বাঁচানোর জন্য আলেমগণ এখনই পদক্ষেপ নিতে পারেন।  সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ওয়াজ, মাহফিল, মসজিদের মিম্বারে, সেমিনার, সেম্পোজিয়ামে কথা বলতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রশাসনকেও ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

মাদক ও জুয়া থেকে সাধারণ তরুণদের বাঁচানোর জন্য দরকার পড়তে পারে নতুন কর্মসংস্থানের। সে ক্ষেত্রেও আমাদের ভাবনীয় কিছু সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। 

দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী মানবসম্পদ তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।  চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (যেমন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অফ থিংস, ব্লকচেইন) চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তাদের প্রস্তুত করার কোন বিকল্প নেই।

যৌতুকবিহীব বিবাহ কর্মসূচি : সাধারণ অনেক পরিবার নিজেদের সন্তানকে বিবাহ দিতে না পেরে নানা ধরনের যৌতুক যাতনার সম্মুখীন হন।  সমাজের কাছেও ছোট হন। এ জাতীয় উলামা পরিষদ যৌতুকবিহীন বিয়ের প্রকল্প চালু করতে পারেন।  বিশেষত আলেমদের মধ্যে এমন কেউ থাকলে তাকে সম্মিলিতভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত।

শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি : কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই সুন্দর বিষয় বা আয়োজনগুলো গ্রামের মাদ্রাসাগুলো আমলে নেয় না। উলামা পরিষদ চাইলে মাধবপুর উপজেলার প্রত্যেকটি মাদ্রাসার খোঁজখবর নিতে পারে।  মাদ্রাসাগুলোর মুহতামিমদেরকে নিয়ে পৃথক বৈঠকের ব্যবস্থা করতে পারেন।  শিক্ষা সংস্কৃতি ভাবনায় মাদ্রাসার ছেলেরা কতটুকু যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছে সে খবরও তারা নিতে পারেন । মাদ্রাসাগুলোতে কেবল রাজনৈতিক প্রোগ্রাম নয় সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামের এরেঞ্জ করা যেতে পারে। শুদ্ধ উচ্চারণে যোগ্য, বলতে পারায় যোগ্য, লেখালেখিতে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে এই তরুণকে কেউ থামাতে পারবে না। মাদ্রাসার গুরুজন একজন শিক্ষার্থীর ভেতরে যে নৈতিকতার বীজ বপন করে দেন তা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হবে।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবনা : আলেম হলেন সমাজের আলো। আর সমাজ কেবল শুধু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে হয় না।  মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, স্কুল -কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মানুষের মেলবন্ধন একটি সমাজ। এতে সনাতনীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকেরাও আছে।  সুতরাং নববী আদর্শের কাজ হল সবাইকে টার্গেট করে কাজ করা, দাওয়াতি প্রোগ্রাম পরিচালনা করা। স্কুল-কলেজে কোরআনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, নবীজির সিরাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এমন কিছু প্রোগ্রাম পরিচালনা করা উচিত। প্রয়োজনে স্কুলগুলোতে কিছু কিছু সূরা মশকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে ফ্রিতে।

আদালতে হেনস্থার শিকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত : সমাজে আলেম এবং পুলিশ দুজনকেই পুতপবিত্র থাকবার কথা। অথচ পুলিশের সঙ্গে আলেমের কোন সম্পর্ক নেই।  আমি আজ এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।  শুধু এটুকু বলবো, যেকোনো আলেম যদি হেনস্থার শিকার হন তবে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত। আলিমগণ এক জোট আছেন এভাবে পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তা বোঝা যাবে। হেনস্থার শিকার মানুষটিও মরুভূমিতে জলের সন্ধান পাবেন।

সংগঠনকে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী করা যায় : অর্থকেই সব অনর্থের মূল বলা হয়েছে।  অর্থ ছাড়া কোনকালে কেউ চলতে পারেনি। সংঘবদ্ধ এই আলেম শ্রেণি যদি একটি অর্থনৈতিক দিক মজবুত করে যেতে পারেন।  মাধবপুর উপজেলায় কেবল আলেমদের একটি বড় মার্কেট তৈরি করতে পারেন, আবাসন কেন্দ্র তৈরি করতে পারেন, সেটি হবে বড় একটি মাইলফলক। ১০০০ বছর পরের সাধারণ মানুষও জানবে- কোন কালে এখানকার আলেমগণ ঐক্যবদ্ধ ছিল।

লিখতে থাকলে অনেক বড় হবে।  যেকোনো সংগঠন কাজের মাধ্যমে এগিয়ে গেলে,  তাকে চেনা যায়। পরিচয় পাওয়া যায়।  কাজকে ইসমে আজম বলা হয়। কাজই ব্যক্তির পরিচয়কে স্টাবলিস্ট করে। মাধবপুর উলামা পরিষদও কাজের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে- এমন প্রত্যাশা আমার।  আল্লাহ তাআলা সবার মেহেনত কবুল করুন।

এলএইস/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ